মাকসুদুল আলম : আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

Spread the love

মাকসুদুল আলম : আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

 

maksudul alam
maksudul alam

📘 ভূমিকা

বিজ্ঞান মানব সভ্যতার অগ্রগতির চালিকাশক্তি। আর এই অগ্রযাত্রায় যাঁরা নিরবচ্ছিন্ন সাধনা করে গেছেন, তাঁদের একজন হলেন ড. মাকসুদুল আলম। তিনি শুধু বাংলাদেশের গর্ব নন, বরং আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান ও জিনতত্ত্ব গবেষণার একজন অগ্রদূত। জীববিজ্ঞানের অজানা রহস্য উন্মোচনে তিনি যে অবদান রেখেছেন, তা কেবল গবেষণালব্ধ নয়—তা দেশের কৃষি ও অর্থনীতিতেও প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছে।

🧒 জন্ম ও শিক্ষাজীবন

ড. মাকসুদুল আলমের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। অতঃপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি-তে যান এবং জীবপ্রযুক্তি ও অণুজীববিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি গবেষক ও অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।

🧬 গবেষণা ও আবিষ্কারের ধারা

ড. মাকসুদুল আলম ছিলেন একজন বিশিষ্ট জিনতত্ত্ববিদ (Geneticist)। তাঁর গবেষণা মূলত উদ্ভিদ জীবপ্রযুক্তি ও জিনোম সিকোয়েন্সিংকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।

✅ ১. পাপাইয়া ফলের জিনোম সিকোয়েন্সিং (২০০৮)

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক গবেষণা দলে তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য, যাঁরা পাপাইয়া ফলের পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স করেন। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ফলমূলের জিনোম ডিকোডিং।

✅ ২. আখ (Sugarcane) জিনোম সিকোয়েন্সিং (২০১৩)

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিপ্লব ঘটান তিনি যখন বিশ্বের প্রথম আখের জিনোম সম্পূর্ণরূপে উন্মোচন করেন। এটি বাংলাদেশ শর্করা গবেষণা ইনস্টিটিউট (BSRI)-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এর ফলে আখ উৎপাদন উন্নত, রোগ প্রতিরোধী ও উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন সম্ভব হয়।

✅ ৩. পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং (২০১০)

বাংলাদেশের আরেক গর্বের প্রকল্প—পাটের জিনোম প্রথম উন্মোচন করেন মাকসুদুল আলম। এটি ছিল বিশ্বে পাটের প্রথম জিনোম রূপায়ণ। এর মাধ্যমে পাটের গুণগত মান, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।

✅ ৪. তালগাছ ও অন্যান্য ফসলের জিনোম

তিনি তালগাছ, তুলা ও অন্যান্য অর্থকরী ফসলের জিনগত মান উন্নয়ন এবং জিন শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

🏆 আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও নেতৃত্ব

ড. মাকসুদুল আলম ছিলেন:

  • Director, Center for Advanced Studies in Genomics, Cell and Developmental Biology (CASGCDB), Dhaka
  • Professor, University of Hawaii
  • Founder, Bangladesh Genome Research Institute (BGRI)

তাঁর গবেষণা বিশ্বখ্যাত জার্নাল যেমন Nature, Science-এ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ছিলেন National Institute of Health (NIH, USA)-এর গবেষণা টিমের অন্যতম অংশ।

👨‍🏫 দর্শন ও চিন্তাভাবনা

“আমরা যদি আমাদের কৃষিকে বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় রূপান্তরিত করতে পারি, তাহলে দেশ উন্নত হতেই বাধ্য।” – ড. মাকসুদুল আলম

তিনি সবসময় বলতেন, প্রযুক্তিকে দেশীয় সমস্যার সমাধানে কাজে লাগাতে হবে। তিনি উদ্ভিদ জিনতত্ত্ব গবেষণাকে কেবল গবেষণার বিষয় না রেখে সরাসরি কৃষকের মাঠে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন।

🕯️ মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

এই গুণী বিজ্ঞানী ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অকালপ্রয়াণে বাংলাদেশ হারায় এক বিস্ময়কর বিজ্ঞানমনস্ক নেতৃত্বকে। তবে তাঁর রেখে যাওয়া জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর মাধ্যমে কৃষি বিপ্লবের বীজ আজও বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে।

📚 উপসংহার

ড. মাকসুদুল আলম ছিলেন বিজ্ঞানের এক নিঃশব্দ বিপ্লবী। তাঁর আবিষ্কার শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র পৃথিবীর জন্য একটি সম্পদ। তিনি বিজ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে প্রয়োগ করে দেখিয়ে দিয়েছেন—অন্তর থেকে চেষ্টা করলে কিছুই অসম্ভব নয়। আমাদের উচিত এই মহান ব্যক্তির আদর্শ ও কর্মকে ধরে রাখা এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন প্রজন্মকে উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

https://www.munshiacademy.com/মাকসুদুল-আলম-আবিষ্কার-ও-ক/


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *