পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে

Spread the love

ভাব-সম্প্রসারণ

🛤️ পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে

🌟 মূলভাব

পথিকই তার চলার প্রয়োজনে নতুন পথ সৃষ্টি করে। আগে থেকে কোনো পথ তৈরি থাকে না; বরং মানুষের প্রয়াস ও পদচারণাই নব নব পথের জন্ম দেয়।

📝 সম্প্রসারিত ভাব

পৃথিবীর ইতিহাসে মানবজাতির অগ্রগতির মূল ভিত্তি হচ্ছে মানুষ নিজেই। প্রকৃতি যেমন তার উপাদান নিয়ে এক জায়গায় স্থির, তেমনি মানুষ তা প্রয়োজনে, চেষ্টায়, সৃজনশীলতায় কাজে লাগিয়ে রচনা করেছে পথ, গড়ে তুলেছে সভ্যতা। কোনো পথ আগে থেকে তৈরি ছিল না। বরং মানুষই প্রয়োজনের তাগিদে পথ আবিষ্কার করেছে—খোঁড়াখুঁড়ি করে, বাধা অতিক্রম করে, পদচিহ্ন রেখে রেখে।

কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন—
“হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে”
এই পঙক্তির গভীরতাতেই নিহিত আছে পথিকের অগ্রগতির দৃষ্টান্ত। কিন্তু সেই পথ কেউ বানিয়ে দেয়নি। মানুষ নিজের প্রয়োজনে বারবার হেঁটে সেই পথে রেখে গেছে চিহ্ন, যা একসময় রূপ নিয়েছে জনপথে।

বিশ্বের প্রতিটি আবিষ্কারই মানুষের চিন্তা, পরিশ্রম ও সংকল্পের ফল। আগুনের আবিষ্কার, চাকার উদ্ভব, বিদ্যুৎ, চিকিৎসাবিজ্ঞান, উপগ্রহ—সবই মানুষের তৈরি পথ। হাজারো ঝুঁকি, সীমাহীন পরিশ্রম ও সাহসিকতা ছিল এর পেছনে।

পথ সৃষ্টি হয় ধাপে ধাপে—প্রথমে ধারণা, তারপর প্রয়াস, তারপর চেষ্টার নিরন্তর প্রবাহ। মানুষের শ্রম, মেধা ও অভিজ্ঞতা মিলেই জন্ম নেয় সফল পথ। এইভাবে মানুষই প্রকৃতপক্ষে “পথিক” এবং তিনিই পথের জনক।

একটি গভীর সত্য হচ্ছে, সংকট মানুষকে তৈরি করে নতুন পথের সন্ধানী। মানবসভ্যতার প্রতিটি অর্জন সেই সংকটজয়ী পথিকদেরই অবদান। তাই বলা চলে—পথ অনুকরণ করে, কিন্তু পথিক অনুপ্রেরণা জোগায়।

🔚 উপসংহার

মানুষই পথের স্রষ্টা—এ কথা শুধু জীবন বাস্তবতার নয়, বরং দার্শনিক সত্যও। পথ নিজে সৃষ্টি হয় না, মানুষের পদক্ষেপ, মনন ও কর্মের ধারায় তৈরি হয় পথ। যারা এগিয়ে চলে, তারাই পথ দেখায় বাকিদের। তাই পথিক শুধু পথের ব্যবহারকারী নয়, সে-ই পথের প্রকৃত নির্মাতা। সত্যিই—
“পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে।”

পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *