গায়েবি দিঘির নামকরণ ও ইতিহাস

Spread the love

গায়েবি দিঘির নামকরণ ও ইতিহাস

গায়েবি দিঘি ইতিহাস
গায়েবি দিঘি ইতিহাস
গায়েবি দিঘি। নামটিতেই কেমন একটা অলৌকিক ব্যাপার কাজ করে তাই না? হ্যাঁ, ঠিক তাই। কীভাবে নামকরণ হলো এই গায়েবী দিঘি? কেন নামকরণ হলো, কী-ইবা আছে এই দিঘিতে? কেনইবা যাবেন সেখানে? কখন যাবেন, কীভাবে যাবেন, কী কী দেখার আছে, কোথায় খাবেন, কোথায় থাকবেন, খরচ কত-থাকছে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত! আসুন তবে আর সময় নষ্ট করি না। চলে যাই এই রহস্যে ভরপুর গায়েবী দিঘির মূলপর্বে।
গায়েবি দিঘি বারোঠাকুরী ইউনিয়নের অন্তর্গত। বারোঠাকুরী-ই বা কোথায় পড়েছে? বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্ব উত্তর পূর্ব স্থান হলো জকিগঞ্জের বারোঠাকুরী তথা গায়েবী দিঘি। জকিগঞ্জের ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে বারোঠাকুরী অন্যতম প্রধান একটি ইউনিয়ন। বারোঠাকুরী শব্দটির মধ্যেই যেমন ঐতিহাসিক আর আধ্যাত্মিকতার সুঘ্রাণ মাখানো রয়েছে তেমনই কিংবদন্তির ছাপসহ আধ্যাত্মিকতার সুঘ্রাণ রয়েছে গায়েবি দিঘির নামকরণে। গায়েবি দিঘি সম্পর্কে কয়েকটি জনশ্রুতি রয়েছে। তবে স্থানীয় অধিকাংশ লোকজনই মনে করেন এই দিঘির উৎপত্তি মোঘল আমলের অব্যবহিত কিছু আগে বা পরে। তৎকালীন স্থানীয় অধিবাসীরা কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সেচের ব্যবস্থা তৎসময়ে না থাকায় তারা পুরোপুরি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। এলাকায় তখন প্রচণ্ড পানির অভাব দেখা দেয়। খরা দেখা দেয় ফসলের মাঠে। বিঘার পর বিঘা জুড়ে ফসলের খেত পানির অভাবে মুষড়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তারা স্থানীয় ওলি-আউলিয়াদের দ্বারস্থ হতে থাকেন। একসময় জনৈক কমিলি পির-এর দোওয়ার মারফতে এ দিঘির সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা বিয়ে–শাদিতে বাসনকোসন আনত দিঘি থেকে। যে যা চাইত তা পেত দিঘি থেকে। কাজ শেষে হলে পুনরায় দিঘিতে ফেরত দিত। কোনো একসময় কোনো এক লোক বাসনকোসন নিয়েছে কিন্তু তা আর ফেরত দেননি। এরপর থেকেই নাকি দিঘিটি ভরাট হয়ে যায়। অপরজনশ্রুতি মোতাবেক-
গায়েবি দিঘির পাশেই রয়েছে ত্রিমোহনা। স্থানীয় ভাষায় যেটাকে বলা হয়ে থাকে ত্রিগাঙ্গা। বরাক-সুরমা-আর কুশিয়ারা নদীর মিলনস্থল। কুশিয়ারা নদীর একপাশে বাংলাদেশ অপর পাশে ভারতের অংশ। বিরাপ ভূকম্পনের ফলে এই দিঘিটির উৎপত্তি হয়। ক্রমপর্যায়ে বন্যার প্রবল স্রোতে এর ব্যাপ্তি আরও বাড়তে থাকে। একসময় এ দিঘির গভীর গভীরতা এতই বেশি ছিল যে সবচেয়ে লম্বা লগি দিয়েও এর তল খুজে পাওয়া যেত না। তখন দিঘিতে মাছও ছিল প্রচুর। জন শ্রুতিমোতাবেক দিঘিটি বারো হাল, বারো কিয়ার , বারো রইত, বারো নেখতি জায়গা নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
চার বা পাঁচ পুরুষ আগে প্রবল বন্যায় বারোঠাকুরীসহ জকিগঞ্জের অকে অঞ্চলই ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়। সে প্লাবনের সাথে প্রচুর পলিমাটি পড়ে দিঘিটি ভরাট হয়ে যায়। পরবর্তীতে নদীতে ভাঙ্গন দেখা দেয়। সে ভাঙ্গনে দিঘির অনেক জায়গাই নদীতে গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কিছু অংশ পড়ে যায় ভারতে আর কিছু অংশ নদীতে আর কিছু অংশ বাংলাদেশের বারোঠাকুরীতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *