মণিপুরি জাদুঘর, মৌলভীবাজার — চাউবা মেমোরিয়াল মণিপুরি সংগ্রহশালা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অরণ্য ও চা-বাগানের মাঝে অবস্থিত মণিপুরি জাদুঘর, স্থানীয় একটি অনন্য উদ্দেশ্যপূরণ করে—মণিপুরি জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তপ্রায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ। বিনা সরকারি সহায়তায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘরটি একসময় ধ্বংসাবশেষ হয়ে যাওয়ার পথে থাকা শতাধিক শিল্পকলা, কৃষি-উপকরণ ও ধর্মীয় সামগ্রী প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
চোঁয়াবা মেমোরিয়াল নামে পরিচিত এই মিউজিয়াম শুধু একটি সংগ্রহশালা নয়; এটি গবেষক, শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের জন্য এক জীবন্ত ইতিহাস, যা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহ্য সংরক্ষণের এক অনন্য প্রয়াসের নিদর্শন।
ছনগাঁও গ্রামের প্রায় নিরিবিলি পরিবেশে এটি একটা নিরিবিলি জাদুঘর—যেখানে প্রবেশ করলে বুঝবেন কেমন লুকানো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এখনও টিকে আছে।
🏛️ ইতিহাস ও স্থাপনার গল্প
২০০৬ সালের ১ অক্টোবর, হামোম তনুবাবু ঘরোয়া উদ্যোগে তার বাবার নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চাউবা মেমোরিয়াল মণিপুরি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি মিউজিয়াম’ (Wikipedia)।
যেমনটি পরিপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়, নৃতত্ত্ববিদরা এটিকে ‘দেশের একমাত্র নৃ-গোষ্ঠীভিত্তিক জাদুঘর’ দাবি করেছেন (Wikipedia)। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৫তম বর্ষপূর্তিতে অনুষ্ঠিত উৎসব এটি একটি প্রতিষ্ঠানগত গুরুত্বও পায় (Wikipedia)।
📛 নামকরণের তাৎপর্য
“চাউবা” নামটি প্রতিষ্ঠাতার পিতার নামানুসারে অনুপ্রাণিত—“চৌবা” বা “চাউবা” নামে স্মরণীয় ব্যক্তিত্বে উৎসর্গ করে নাম দেওয়া হয়। “মণিপুরি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি” সংযোজনটি নির্দেশ করে—এটির লক্ষ্য একটি জনগোষ্ঠীর বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ।
📍 কোথায় অবস্থিত?
- ঠিকানা: ছনগাঁও গ্রাম, আদমপুর ইউনিয়ন, কমলগঞ্জ উপজেলা, মৌলভীবাজার (Wikipedia)
- শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ৫০ কিমি (Facebook)
❓ কেন যাবেন?
- একমাত্র মণিপুরি জাতিগত জাদুঘর দেখে অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য
- নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস, কৃষি, তাঁতশিল্প ও ধর্মীয় সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত দেখতে
- গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্যভাণ্ডার হিসাবে
- যৌথ জাতিগত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যচর্চার প্রশংসায় উৎসাহ পেতে
⏰ যেতে পারেন কখন?
- নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি (শীতকাল): ভ্রমণ ও আবহাওয়ার জন্য আদর্শ
- বর্ষাকাল (জুলাই–সেপ্টেম্বর): চা-বাগান, সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করার মরসুম
- যেকোনো সময়: জাদুঘরে প্রবেশে কোনো সময় সীমা নেই (প্রতিষ্ঠাতার অনুমতি সাপেক্ষে)
🛣️ কীভাবে যাবেন?
- ঢাকা → শ্রীমঙ্গল বা মৌলভীবাজার (বাস/ট্রেন/বিমান)
- শ্রীমঙ্গল → ভানুগাছ → আদমপুর বাজার (বাস/মাইক্রোবাস)
- আদমপুর বাজার → ছনগাঁও (সিএনজি/অটো, লোকাল)
- হামোম তনুবাবুর বাড়ি/জাদুঘর = কক্ষসংখ্যা ৪, যেখানে সবকিছু সাজানো আছে (Dhaka Mail, Facebook)
👀 কী দেখবেন?
- প্রাচীন মুদ্রা, যুদ্ধসহ ধর্মীয় সামগ্রী, তাঁতের সরঞ্জাম, কৃষি উপকরণ ও বাদ্যযন্ত্র—সংখ্যা প্রায় ৩০০+ উপাদান (Wikipedia)
- ধাতব, বাঁশ-বেত, কাঠ, তাঁত, তোড়া, গয়না—বিলুপ্ত অভিঞ্জের নিদর্শন (Wikipedia)
- চারটি থিম্যাটিক কক্ষ: ঐতিহ্য, ধর্ম, সাজসজ্জা ও দৈনন্দিন জীবন, কৃষি ও সঙ্গীত সামগ্রী (Wikipedia, boishakhionline.com, mynewspapercut.blogspot.com)
🌟 জনপ্রিয় হওয়ার কারণ
- বাংলাদেশে অদ্বিতীয় একটি জাতিগোষ্ঠী-নির্দিষ্ট জাদুঘর (Wikipedia)
- ব্যক্তিগত চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত, যা প্রেরণা জোগায়
- গবেষকদের তথ্যভাণ্ডার এবং পর্যটকদের জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা– উভয়েই উপযোগী
💰 খরচ (আনুমানিক)
খাত | খরচ (প্রতি ব্যক্তি) |
---|---|
ঢাকা → শ্রীমঙ্গল ভাড়া | ৳৫০০–৮০০ (বাস/ট্রেন) |
শ্রীমঙ্গল → আদমপুর | ৳১৫০–৩০০ (লোকাল রুট) |
বাজার → জাদুঘর যাতায়াত | ৳৫০–১০০ (সিএনজি/অটো) |
খাবার ও টিকিট | ৳২০০–৪০০ |
মোট | ৳৯০০–১৬০০ |
🚗 পরিবহন ও যোগাযোগ
- সদর রুট সহজে উপভোগযোগ্য: শ্রীমঙ্গল বা মৌলভীবাজার হয়ে
- জাদুঘর প্রতিষ্ঠাতার সাথে আগে থেকে যোগাযোগ করে ভিজিট ফিক্স করে নেয়া ভালো
🍽️ খাওয়ার ব্যবস্থা
- আদমপুর বাজারে ছোট হোটেল/খাবারের দোকান
- ডে-ট্রিপ হলে রেস্তোরাঁ + পিকনিক ব্যবস্থা সুবিধাজনক
🏠 আবাসন
- শ্রীমঙ্গল শহরে হোটেল আছে (Grand Sultan Tea Resort, Tea Garden View ইত্যাদি)
- মৌলভীবাজারে স্থানীয় আবাসন ও রিসোর্ট পাওয়া যায়
- আদমপুরে রাতযাপন উপযোগী সুবিধা সীমিত
🌟 দৃষ্টি আকর্ষণ
- সংগৃহীত সামগ্রীর সৎ বাস্তবতা, ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক মূল্য
- স্থানীয় মিথ, পোশাক, তাঁতশিল্প, গান–সব মিলিয়ে এক সাংস্কৃতিক ভ্রমণ
- ব্যক্তিগত সংগ্রহ এবং প্রতিষ্ঠাতার যজ্ঞ– যা অনুপ্রেরণার উৎসমুখ
⚠️ সত্বর্কতার কথা
- সামগ্রী স্পর্শ না করা শ্রেয়
- আগেই ফোন করে গাইড বা সময় ঠিক করে যাওয়া ভালো
- স্থানীয় ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান রেখে চলুন
🗺️ আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত (~১৫–২০ মিনিট)
- হামহাম জলপ্রপাত
- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
- চা-বাগান এলাকা: ভানুগাছ, ধলই, ছনগাঁও পর্যটন এলাকার অংশ
💡 টিপস
- গবেষণা বা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে গেলে ইন্টেলেকচুয়াল ‘ভিজিটারস লিস্ট’ চেয়ে নেয়া যায়
- ক্যামেরা, নোটবুক, ব্যাটারি–সহ যাওয়া উচিত
- আগে থেকেই সময় নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে যোগাযোগ করুন
https://www.munshiacademy.com/মণিপুরি-জাদুঘর-মৌলভীবাজ/