🖋️ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: জীবন ও সাহিত্যকর্ম
বাংলা সাহিত্যের একজন প্রজ্ঞাবান চিন্তক ও সমাজবিজ্ঞানভিত্তিক লেখালেখির পথিকৃৎ

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম: ২৩ জুন, ১৯৩৬) বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখক, শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক। প্রগতিশীল চিন্তা ও মার্কসবাদী দর্শনে অনুপ্রাণিত এই মনীষী শুধু সাহিত্যেই নন, সমাজ ও রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখে চলেছেন দীর্ঘ সময়। ‘নতুন দিগন্ত’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে তিনি স্বাধীন ভাবনার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন।
🎓 প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
📍 জন্মস্থান: বাড়ৈখালী, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ (তৎকালীন বিক্রমপুর)
👨👩👦👦 পিতা: হাফিজ উদ্দিন চৌধুরী
👩👧 মাতা: আসিয়া খাতুন
বাবার সরকারি চাকরির কারণে তার শৈশব কেটেছে রাজশাহী ও কলকাতায়।
🔸 বিদ্যালয়: সেন্ট গ্রেগরি স্কুল, ঢাকা
🔸 কলেজ: নটরডেম কলেজ
🔸 বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ইংরেজি সাহিত্য)
🔸 উচ্চশিক্ষা: যুক্তরাজ্যের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণা
🏛️ কর্মজীবন
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।
🔹 ইমেরিটাস অধ্যাপক: ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
🔹 ইউজিসি অধ্যাপক: ২০০৩–২০০৭ পর্যন্ত দুই মেয়াদে
🔹 উপাচার্য পদে প্রস্তাব: দুবার মনোনয়ন পেলেও প্রত্যাখ্যান
🔹 সম্পাদনা কাজ:
- পরিক্রমা
- সাহিত্যপত্র
- সচিত্র সময়
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা
- নতুন দিগন্ত (২০০৩ থেকে নিয়মিত প্রকাশিত)
তিনি ‘গাছপাথর’ ছদ্মনামে দৈনিক সংবাদ-এ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে কলাম লিখে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।
📚 সাহিত্যকর্ম ও রচনাসম্ভার
✍️ প্রবন্ধ ও গবেষণা
তিনি প্রায় শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার লেখায় সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি ও সাহিত্যের সংমিশ্রণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ:
🔸 অন্বেষা (১৯৬৪)
🔸 Introducing Nazrul Islam (১৯৬৫)
🔸 The Moral Imagination of Joseph Conrad (১৯৭৪)
🔸 স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি (১৯৭৯)
🔸 বাঙালী কাকে বলি (১৯৮২)
🔸 গণতন্ত্রের পক্ষ-বিপক্ষ (১৯৮৭)
🔸 দ্বিজাতিতত্ত্বের সত্য-মিথ্যা (১৯৯২)
🔸 বাঙালীর জাতীয়তাবাদ (২০০০)
🔸 পুঁজিবাদের দুঃশাসন (২০০১)
🔸 An Unfinished Agenda (২০০২)
🔸 ভরসার জায়গাজমি (২০০৫)
🔸 গণতন্ত্রের অমসৃণ পথ (২০০৬)
📖 ছোটগল্প
🔹 ভালো মানুষের জগৎ (১৯৯০)
🔹 দরজাটা খোলো (১৯৮৯)
📗 উপন্যাস
🔹 শেষ নেই (২০০৪)
🔹 কণার অনিশ্চিত যাত্রা (২০০৫)
🔹 বাবুলের বেড়ে-ওঠা (১৯৯১)
🌍 অনুবাদ
🔸 এ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব (১৯৭২)
🔸 ইবসেনের বুনো হাঁস (১৯৬৫)
🔸 হোমারের ওডেসি (১৯৯০)
📚 সম্পাদনা
ক্র. | সম্পাদিত গ্রন্থ | সাল |
---|---|---|
১ | আনোয়ার পাশা রচনাবলী (তিন খণ্ড) | — |
২ | Dhaka University Convocation Speeches (দুই খণ্ড) | — |
৩ | ত্রৈমাসিক ‘নতুন দিগন্ত’ | ২০০৩ |
🏅 সম্মাননা ও পুরস্কার
ক্র. | পুরস্কার | সাল | সংস্থা |
---|---|---|---|
১ | লেখক সংঘ পুরস্কার | ১৯৭৫ | — |
২ | বাংলা একাডেমি পুরস্কার | ১৯৭৬ | বাংলা একাডেমি |
৩ | আবদুর রহমান চৌধুরী পদক | ১৯৭৮ | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
৪ | লেখিকা সংঘ পদক | ১৯৮০ | — |
৫ | মাহবুবউল্লাহ ফাউন্ডেশন পদক | ১৯৮৩ | — |
৬ | অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার | ১৯৮৮ | — |
৭ | একুশে পদক | ১৯৯৬ | বাংলাদেশ সরকার |
৮ | আবদুর রউফ চৌধুরী পুরস্কার | ২০০১ | — |
৯ | ঋষিজ পদক | ২০০২ | — |
১০ | শেলটেক পদক | ২০১৭ | শেলটেক |
১১ | প্রথম আলো বর্ষসেরা বই | ১৪২১ | প্রথম আলো |
🧠 দর্শন ও মতবাদ
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একজন প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, যিনি মার্কসবাদী দর্শনে অনুপ্রাণিত। তাঁর লেখায় শ্রেণি-সংগ্রাম, মুক্তচিন্তা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের প্রসঙ্গ ঘন ঘন উঠে আসে। তিনি ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতাও করেন, যা তার জাতীয় রাজনৈতিক সচেতনতার প্রমাণ।
🔍 বিশেষ দৃষ্টিকোণ
✅ সাহিত্যে সমাজচিন্তার অনুপম সংমিশ্রণ
✅ লেখালেখির পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণায় অবিস্মরণীয় অবদান
✅ সম্পাদক হিসেবে স্বাধীন ও প্রগতিশীল চেতনার চর্চা
✅ বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রচলক
🧾 উপসংহার
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কেবল একজন সাহিত্যিক নন, তিনি জাতির বিবেক। চিন্তার জগতে তিনি যে আলোর দিশারি হয়ে উঠেছেন, তা নতুন প্রজন্মের পথ দেখায়। তার লেখালেখি ও মতাদর্শ বাংলা সাহিত্য ও সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে।
https://www.munshiacademy.com/সিরাজুল-ইসলাম-চৌধুরী-জীব/