সিলেটের জকিগঞ্জে একমাত্র ‘ত্রিমোহনা’

Spread the love

ত্রিমোহনা, জকিগঞ্জ – তিন নদীর মোহনায় প্রকৃতির অনন্য অপার গন্তব্য

 

📍 অবস্থান ও পরিচিতি

সিলেট বিভাগের প্রান্তসীমায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের আমলশীদ এলাকা। এখানেই তিনটি নদী—সুরমা, কুশিয়ারা ও ভারতের বরাক—মিলিত হয়ে সৃষ্টি করেছে এক অপূর্ব ত্রিমোহনা। স্থানীয়দের ভাষায় একে “তি-গাঙ্গা” বলা হয়। পূর্বে ভারতের আসাম, দক্ষিণে করিমগঞ্জ, আর পাশে বাংলাদেশের সীমান্ত — এক অপূর্ব ভৌগোলিক অবস্থান।

এখানে একটি বিশেষ আকর্ষণীয় স্থান হলো ‘ত্রিমোহনা’, যা সুরমা, কুশিয়ারা এবং ভারতের বরাক নদের মিলনস্থল হিসেবে পরিচিত। এটি জকিগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর বারঠাকুরী ইউনিয়নের আমলশীদ এলাকায় অবস্থিত এবং স্থানীয়রা একে ‘তি-গাঙ্গা’ নামেও অভিহিত করেন।

ত্রিমোহনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। এখানে সুরমা, কুশিয়ারা এবং বরাক নদের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে এক অনন্য দৃশ্য। সামনের দিকে ভারতের বরাক নদ, ডান দিকে কুশিয়ারা নদী এবং বাঁ দিকে সুরমা নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদীর মাঝখানে সবুজ গাছপালা দ্বারা আচ্ছাদিত একটি দ্বীপসদৃশ উঁচু বালুচর দেখা যায়। ত্রিমোহনা শান্তি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। নদীর তীরে ছোট ছোট নৌকা বাঁধা থাকে। নদীর চরের মধ্যে স্থানীয়রা নানা রকম সবজি চাষ করেন।

🧭 কেন যাবেন?

  • বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নদীর মোহনা ঘুরে দেখার বিরল সুযোগ।
  • তিনটি নদীর মিলনস্থল, মাঝখানে সবুজে ঘেরা বালুচর।
  • শান্ত, নির্মল প্রকৃতি এবং সীমান্তের দৃশ্য।
  • মাঝির নৌকা, নদীর বাতাস ও নদীতীরবর্তী চাষাবাদ – এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

🕰️ ভ্রমণের সময়

সময় কারণ
বর্ষা (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নদীভরা প্রবাহ ও সবুজ প্রকৃতি
শরৎ (অক্টোবর-নভেম্বর) স্বচ্ছ পানি, আরামদায়ক আবহাওয়া

🚗 যাতায়াত ব্যবস্থা

  • সিলেট শহর → জকিগঞ্জ সড়ক → আমলশীদ বাঁক
    • সিলেট থেকে বাসে (৩০–৫০ টাকা), সিএনজি বা প্রাইভেট কারে (১.৫–২ ঘণ্টা)
    • হেল্পারকে “ত্রিমোহনার রাস্তায়” নামিয়ে দিতে বললেই হবে।
    • সেখান থেকে হেঁটে বা স্থানীয় বাহনে পৌঁছানো যায়।

💸 খরচ (প্রায়)

খরচের খাত টাকা (BDT)
যাতায়াত (সিলেট-জকিগঞ্জ-ত্রিমোহনা) ৩০০–৫০০
খাওয়া ২০০–৩০০
নৌকা ভাড়া (ঐচ্ছিক) ২০০–২৫০
মোট ৭০০–১১০০ (ব্যক্তি প্রতি)

🍽️ খাওয়ার ব্যবস্থা

ত্রিমোহনা এলাকায় কোনো স্থায়ী রেস্তোরাঁ নেই।

  • সিলেট থেকে শুকনো খাবার সঙ্গে নেওয়া উত্তম।
  • স্থানীয় হাট বা দোকানে চা-নাস্তা মিলবে।
  • জকিগঞ্জ বাজারে সাধারণ খাবারের হোটেল পাওয়া যায়।

🛏️ আবাসন

ত্রিমোহনায় থাকার ব্যবস্থা না থাকায়—

  • সিলেট শহর বা জকিগঞ্জ বাজারে থাকা উত্তম।
  • Noorjahan Grand, Britannia Hotel, Rose View ইত্যাদি হোটেল থেকে আসা-যাওয়া সহজ।

👀 কি দেখবেন

  • তিন নদীর প্রবাহের দৃষ্টিনন্দন মিলন (সামনে বরাক, ডানে কুশিয়ারা, বামে সুরমা)
  • সবুজ বালুচর — দ্বীপসদৃশ
  • সীমান্তঘেঁষা ভারতীয় গ্রাম ও পাহাড় দেখা যায়
  • স্থানীয় নৌকা ও মাঝিদের জলে চলাচল
  • নদীর তীরে সবজি ক্ষেত ও চাষাবাদ

🌿 আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • জকিগঞ্জ শহর – সীমান্ত শহর, বাজার ও লোকসংস্কৃতি
  • কানাইঘাট নদীবন্দর
  • বিয়ানীবাজার চা-বাগান এলাকা
  • বারঠাকুরী জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ

❗ কিছু অসুবিধা ও টিপস

চ্যালেঞ্জ:

  • পর্যাপ্ত বসার স্থান নেই
  • পর্যটকদের জন্য রেস্টরুম ও নিরাপদ বিশ্রামের অভাব

টিপস:

  • জলের উপযোগী স্যান্ডেল/জুতা পরুন
  • লাইফ জ্যাকেট নিন যদি নদী ভ্রমণে যান
  • খাবার-পানি সঙ্গে নিন
  • পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন
  • বিকেলের আগে ফিরে আসুন, সন্ধ্যায় যাতায়াত কঠিন

📝 উপসংহার

ত্রিমোহনা, জকিগঞ্জ—বাংলাদেশের এক অনন্য নদীর মোহনা, যেখানে আপনি একসঙ্গে দেখতে পাবেন প্রকৃতি, সীমান্ত, শান্তি ও জলধারার মিলন। এটি শুধু ভ্রমণ নয়, নিজেকে প্রকৃতির মাঝে খুঁজে পাওয়ার একটি নিঃশব্দ উপলব্ধি।

https://www.munshiacademy.com/সিলেটের-জকিগঞ্জে-একমাত্র/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *