বিজ্ঞান কি? বিজ্ঞান কাকে বলে?
Scientia থেকে ইংরেজি Science শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ হলো জ্ঞান। সাধারণ মানুষের কাছে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, বিজ্ঞান কী? তাদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ বলে মনে হতে পারে। সে হয়ত বলবে, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, এবং জীববিদ্যা, ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে গঠিত হয় বিজ্ঞান। কিন্তু একজন দার্শনিকের কাছে যখন প্রশ্ন রাখা হবে যে, বিজ্ঞান কি? সে কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষের মতো উত্তর দিবে না। তিনি হয়ত বলতে পারেন, ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য এবং তার গবেষণা ও তার ফলাফল দেওয়ার মানবীয় চেষ্টাই হলো বিজ্ঞান । অথবা বলতে পারে বিজ্ঞান হলো, যে জগতে আমরা বসবাস করি তা বুঝার, ব্যাখ্যা করার এবং বোঝানোর প্রচেষ্টা। অন্যদিকে, বিভিন্ন ধর্মও এই জগতকে বোঝার এবং ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ধর্মকে বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে গণ্য করা হয় না। একইভাবে ইতিহাসবিদরাও জগতে অতীতে কি ঘটেছে তা বুঝার চেষ্টা করে। কিন্তু ইতিহাসকে বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
বিজ্ঞানকে আমরা দুভাগে ভাগ করতে পারি।
১. প্রাকৃতিক বিজ্ঞান
২.সামাজিক বিজ্ঞান। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূতত্ত্ব এবং জীববিদ্যা, এগুলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব এবং অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত । যদিও, সমাজবিজ্ঞানের মতো একটি বিষয় বৈজ্ঞানিক হতে পারে বা হওয়া উচিত কিনা তা সামাজিক বিজ্ঞানের দর্শনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
Cambridge dictionary তে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ভৌত জগতের গঠন এবং আচরণের যত্ন সহকারে অধ্যয়ন, বিশেষ করে পর্যবেক্ষণ, পরিমাপ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, এবং এই ক্রিয়াকলাপের ফলাফলগুলি বর্ণনা করার জন্য তত্ত্বগুলির বিকাশ। 1
বিজ্ঞান কি? এ সম্পর্কে ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস এর বিজ্ঞানীরা আলোকপাত করেছেন।
বিজ্ঞান প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের একটি উপায়। প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জাগতিক ব্যাখ্যা প্রদানে এটি সীমাবদ্ধ। বিজ্ঞান অতিপ্রাকৃত সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না। স্রষ্টা আছেন নাকি নেই- এ প্রশ্নের ব্যাপারে বিজ্ঞান নিরপেক্ষ। 2
গণিতবিদ ও বিজ্ঞান দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেল বলেছেন,
পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আবিষ্কারের চেষ্টা এবং এর ওপর ভিত্তি করে যুক্তি দেখানো…..পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা সম্বন্ধে এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিয়ম সম্বন্ধে। 3
নিউ মেক্সিকো ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ম্যানুয়েল মোলস বলেন,
ব্যাপকভাবে বলতে গেলে, বিজ্ঞান হল কিছু আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের একটি উপায়। 4
তবে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে বিতর্কও রয়েছে। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেমস লেডিম্যান বলেন,
আমাদের সামনে বিজ্ঞানের অজস্র উদাহরণ থাকলেও বিজ্ঞানকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় কিংবা কোন ধরনের বিতর্কমূলক কার্যক্রম বা বিশ্বাস কে বৈজ্ঞানিক বলা হবে তা আমরা জানি না। 5
উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে আমরা বলতে পারি যে, বিজ্ঞান একটি পদ্ধতিগত অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আমরা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মহাবিশ্বের গঠন এবং এর অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি।