আর্কিমিডিস : আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

Spread the love

 আর্কিমিডিস : আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

প্রকৌশল ও যুদ্ধপ্রযুক্তি

আর্কিমিডিস শুধু একজন তাত্ত্বিক বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রকৌশলীও। তিনি সিরাকিউজ নগরীর আত্মরক্ষার্থে বহু যুদ্ধপ্রযুক্তি আবিষ্কার ও বাস্তবায়ন করেন।

● সামরিক যন্ত্র আবিষ্কার:

১. ক্ল’স (Claws) of Archimedes – শত্রু জাহাজকে জালে তুলে উল্টে দেওয়ার জন্য
২. আর্কিমিডিস রে – আয়না দিয়ে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে শত্রু জাহাজে আগুন ধরানো
৩. বেলনাকৃতি পাথর উৎক্ষেপণ যন্ত্র – যাকে আজকের ক্যাটাপল্টের পূর্বসূরি বলা যায়

📌 এই যন্ত্রগুলো রোমান সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

গণিতে আর্কিমিডিসের অবদান

আর্কিমিডিস গণিতকে শৈল্পিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি এমন অনেক সূত্র আবিষ্কার করেন যা আধুনিক ক্যালকুলাসের ভিত্তি।

● প্রধান অবদানসমূহ:

  • বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র
  • গোলকের আয়তন ও পৃষ্ঠতলের নির্ণয়
  • পাই (π) এর মান নির্ধারণে প্রায় সঠিক অনুমান
  • অসীম ধারা ও ইন্টিগ্রেশনের মৌলিক ধারণা

📌 তিনি বলেন—

“Give me a place to stand, and I will move the Earth.”
এই উক্তির মাধ্যমে তিনি লিভার বা টেকনিক্যাল ভারসাম্যের শক্তিকে বোঝাতে চেয়েছিলেন।

দর্শন ও চিন্তাধারা

আর্কিমিডিস ছিলেন একজন যুক্তিবাদী, অনুসন্ধিৎসু এবং ধ্যানস্থ প্রকৃতি-পর্যবেক্ষক। তিনি প্রকৃতির প্রতিটি নিয়মকে বোঝার চেষ্টা করতেন গণিতের সাহায্যে।

● দর্শনধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি:

  • প্রাকৃতিক ঘটনা কাকতালীয় নয়, বরং নিয়মবদ্ধ
  • গণিত ও যুক্তি দিয়েই প্রকৃতিকে বোঝা সম্ভব
  • গবেষণার আনন্দই বিজ্ঞানীর সবচেয়ে বড় পুরস্কার

মৃত্যু

খ্রিস্টপূর্ব ২১২ সালে, রোমান সেনা সিরাকিউজ নগরীতে আক্রমণ চালায়।

● মৃত্যুর ঘটনা:

রোমান এক সেনা তাঁকে হত্যা করে, যদিও রোমান সেনাপতি মার্কাস মার্সেলাস তাঁকে জীবিত ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

● কিংবদন্তি অনুযায়ী:

হত্যার আগে তিনি মাটিতে জ্যামিতিক চিত্র এঁকেছিলেন এবং সেনাকে বলেছিলেন—

“Do not disturb my circles!”
(আমার বৃত্ত নষ্ট করো না!)

উত্তরাধিকার ও স্মরণ

● প্রাচীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ:

  • নিউটন ও গাউস তাঁকে তাঁদের পূর্বসূরি হিসেবে গণ্য করেছেন
  • ইউক্লিডের পর তিনিই ছিলেন প্রাচীনতম যুগে সর্বাধিক প্রভাবশালী গণিতবিদ

● আর্কিমিডিসের স্মরণে:

  • চাঁদের এক স্থানের নাম রাখা হয়েছে “Archimedes Crater”
  • আধুনিক পদার্থবিদ্যার বহু সূত্রে “আর্কিমিডিস নীতি” প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত
  • স্কুল-কলেজে তাঁর নীতিকে বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা হিসেবে পড়ানো হয়

আধুনিক বিজ্ঞানে প্রভাব

আজকের অনেক আধুনিক প্রযুক্তি—যেমন:

  • জাহাজ নির্মাণ
  • হাইড্রোলিক ইঞ্জিনিয়ারিং
  • প্লাবন নিয়ন্ত্রণ
  • লিভার-সিস্টেম রোবটিক্স
    – এই সব কিছুর ভিত্তিতে আর্কিমিডিসের চিন্তার ছাপ বিদ্যমান।

উপসংহার

আর্কিমিডিস ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তাঁর অবদান প্রাচীন সভ্যতার গণ্ডি ছাড়িয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থলে স্থান করে নিয়েছে।

তিনি যেমন ছিলেন জ্ঞানান্বেষী, তেমনি ছিলেন কার্যকর উদ্ভাবক। তাঁর চিন্তা ও কর্ম আজও বিশ্ববিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রাসঙ্গিক।

“আর্কিমিডিস একজন মানুষ ছিলেন, যিনি গণনার মাধ্যমে বিশ্বের জটিলতাকে সহজ করে দেখিয়েছেন।”

তাঁর জীবন বিজ্ঞান, যুক্তি ও সৃজনশীলতার এক পরম নিদর্শন।

https://www.munshiacademy.com/আর্কিমিডিস-আবিষ্কার-ও-কর-2/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *