আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় :  জীবন ও সাহিত্যকর্ম

Spread the love

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় :  জীবন ও সাহিত্যকর্ম

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় (Prafulla Chandra Ray) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, শিক্ষক, সমাজসেবক এবং সাহিত্যিক। তাঁকে ভারতীয় রসায়নের জনক বলা হয়ে থাকে। তিনি শুধু একজন বিজ্ঞানী হিসেবেই নয়, একজন মানবতাবাদী চিন্তাবিদ ও লেখক হিসেবেও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

🔶 জন্ম ও শিক্ষাজীবন:

আচার্য রায় জন্মগ্রহণ করেন ২ আগস্ট ১৮৬১ সালে, খুলনা জেলার রাড়ুলী-কাঠোলে (বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত)। পিতা হরিশচন্দ্র রায় ছিলেন একজন সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী। প্রাথমিক শিক্ষা বরিশালে শুরু করে পরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৮২ সালে তিনি স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে ডক্টরেট (D.Sc) ডিগ্রি অর্জন করেন।

🔶 বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন:

আচার্য রায় কলকাতায় ফিরে এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ভারতের প্রথম রসায়ন গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন।
১৮৯২ সালে তিনি নিজ উদ্যোগে বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস নামক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল ভারতের প্রথম কেমিক্যাল কোম্পানি।

তাঁর গবেষণার মূল ক্ষেত্র ছিল নাইট্রাইট ও হাইপোনাইট্রাইট যৌগ। তাঁর আবিষ্কৃত কিছু যৌগ আজও রসায়নে গুরুত্বপূর্ণ। রায় ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী ও শিক্ষক; উপমহাদেশে বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে তিনি এক অসামান্য ভূমিকা পালন করেন।

🔶 সাহিত্যকর্ম ও লেখনী:

প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন এক উজ্জ্বল সাহিত্যমনস্ক বিজ্ঞানী। তিনি বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই লেখালেখি করেছেন। তাঁর লেখা সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ “A History of Hindu Chemistry” – যেখানে প্রাচীন ভারতীয় রসায়নের ইতিহাস বিশ্লেষণ করেছেন।

তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য সহজ ভাষায় প্রবন্ধ রচনা করতেন।
বাংলা ভাষায় লিখিত তাঁর রচনাগুলো ছিল সাহসিকতা, যুক্তিবোধ ও মানবিকতায় পরিপূর্ণ। তিনি বিজ্ঞানকে কেবল পরীক্ষাগারেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, সমাজের প্রয়োগক্ষেত্রেও তা বাস্তব করে তুলেছিলেন।

🔶 সমাজসেবক ও মানবপ্রেমী:

প্রফুল্লচন্দ্র ছিলেন একজন নিঃস্বার্থ সমাজসেবক। বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারির সময় তিনি নিজের অর্থ ও শ্রম দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য ছিলেন এবং জাতিভেদ প্রথার কঠোর বিরোধী ছিলেন। দেশীয় শিল্পের উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। স্বদেশি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দেশীয় পণ্যের প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

🔶 মৃত্যু ও উত্তরাধিকার:

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৬ জুন ১৯৪৪ সালে কলকাতায় পরলোকগমন করেন। তাঁর জীবন ও কাজ পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও সমাজচিন্তকদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।

🔶 উপসংহার:

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন সত্যিকারের এক রেনেসাঁস পুরুষ – যিনি বিজ্ঞানের প্রচার, দেশপ্রেম, শিক্ষা এবং মানবকল্যাণকে একত্রে ধারণ করেছিলেন। তাঁর জীবন, সাহিত্যকর্ম ও অবদান আমাদের চিন্তা-চেতনার জগতে আজও আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।

https://www.munshiacademy.com/আচার্য-প্রফুল্ল-চন্দ্র-র/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *