🐍 মনসামঙ্গল
মনসামঙ্গল (বা পদ্মাপুরাণ) বাংলা মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম প্রধান আখ্যানকাব্য, যা সর্পদেবী মনসার আরাধনা, চাঁদ সদাগরের অশুভতা, লখিন্দরের মৃত্যু আর বেহুলার ত্যাগের কাহিনি কেন্দ্র করে গঠিত। মূলত রাঢ় (পশ্চিমবঙ্গ) বা বিহার অঞ্চলে ১৩–১৬ শতকে এর উৎপত্তি ঘটে ।
⏳ উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
- শুরুতে এটি লোকমুখে গাওয়া গান বা ছড়া হিসেবে পল্লি অঞ্চলে প্রচলিত ছিল ।
- পরবর্তী সময়ে ১৩-১৪ শতকে ঘটনাগুলোকে কবিরা লিখিত রূপ দেন—অধিকাংশ ক্ষেত্রে অক্ষরবৃত্তে ‘পয়ার’ বা ‘ত্রিপদী’ ছন্দে ।
- উত্তর–পূর্ব বাংলা (পূর্ববঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ) ও সাহিত্যে ‘পদ্মাপুরাণ’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে ।
📘 সাহিত্যিক অগ্রগতি ও বৈশিষ্ট্য
-
মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় শাখা, যা আদি লোকমুখে প্রচলিত কাহিনি থেকে লিখিত কাব্যে পরিণত—বিশেষ করে ওড়িয়া-পদ্মাপুরাণ নামে ।
-
প্রতিটি কবি নিজস্ব ভাষা, ছন্দ ও অলংকারে উপাখ্যান সমৃদ্ধ করেছেন। বিজয় গুপ্তের রচনায় সাহিত্যিক গুণ, বিপ্রদাসের সাহসিকতা, নারায়ণ দেবের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে প্রকট ছিল ।
-
১৩–১৮শ শতকের মধ্যে এ কাব্য পর পর রচিত হয়ে বাংলা সাহিত্যের স্থানীয় ধর্ম–সংস্কৃতিতে গ্রাসিত হয়ে একটি লোক-ঐতিহাসিক সম্পদে রূপ নেয় ।
✍️ প্রধান কবি ও রচনাসমূহ
কবি | রচনা | প্রকাশ সাল / শতক |
---|---|---|
কানা হরিদত্ত | প্রাচীনতম আদি রচয়িতা (মানে লেখা এখন পাওয়া যায় না) | ১৩–১৪শ শতক , |
বিজয় গুপ্ত | “মনসামঙ্গল” বা “পদ্মাপুরাণ” | ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দ |
বিপ্রদাস পিপিলাই | “মনসা বিজয়” | ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দ |
নারায়ণ দেব | “পদ্মাপুরাণ” তিন খণ্ডে | ১৬শ শতকের শুরু |
কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ, দ্বিজবংশীদাস, দ্বারিকাদাস | বিভিন্ন সংস্করণ | ১৬–১৭শ শতক |
মনসামঙ্গল কাব্য পর্যায়ক্রমে বংশগত লোকসাহিত্য থেকে লিখিত আদি রূপে রূপান্তরিত হয়ে, ১৩–১৭ শতকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কালজয়ী মঙ্গলকাব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর রচনাকারীরা—বিশেষ করে বিজয় গুপ্ত ও নারায়ণ দেব—এতে নারী, ধর্ম ও সামাজিক মূল্যবোধের মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। উত্তর ও পূর্ববঙ্গে ‘পদ্মাপুরাণ’ নামে একই সাহিত্যকর্ম আজও গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত।
https://www.munshiacademy.com/মনসামঙ্গল/