সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ: জীবন ও সাহিত্যকর্ম 

Spread the love

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ: জীবন ও সাহিত্যকর্ম 

(Syed Oaliullah: Jibon O Sahityokormo )

🟩 জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার শেওলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আহমদুল্লাহ ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যার বদলির কারণে ওয়ালীউল্লাহর শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এই বিচিত্র অভিজ্ঞতাগুলো পরবর্তীতে তাঁর সাহিত্যকর্মে গভীর প্রভাব ফেলে।

🟩 শিক্ষাজীবন

তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করেন। এই সময়েই তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন এবং বামপন্থী চেতনা গ্রহণ করেন।

🟩 পেশাজীবন

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পাশাপাশি একজন কূটনীতিক হিসেবেও কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি রেডিও পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন, পরবর্তীতে সরকারি চাকরির সুবাদে দিল্লি, জাকার্তা, লন্ডন, প্যারিস ইত্যাদি শহরে দায়িত্ব পালন করেন।

🟩 সাহিত্যকর্ম

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলা সাহিত্যে গভীর মনস্তাত্ত্বিক ও দার্শনিক চেতনার সন্নিবেশ ঘটান।

🔹 উপন্যাস:

১. লালসালু (১৯৪৮) – তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস, যেখানে এক প্রতারক মৌলবির মাধ্যমে গ্রামীণ ধর্মান্ধতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
২. চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪) – আত্মজিজ্ঞাসা ও জীবনসংঘাতকে কেন্দ্র করে লেখা।
৩. কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮) – উপনিবেশিক শোষণ ও মানুষের অস্তিত্বের সংকট নিয়ে লেখা।

🔹 নাটক:

  • বহিপীর (১৯৬০) – মঞ্চ নাটক, যেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সমাজ বাস্তবতা তুলে ধরা হয়।

🔹 গল্প:

  • ছোটগল্পেও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন শক্তিমান। তাঁর গল্পে সমাজ, সংস্কৃতি ও মানুষের মনোজগৎ গভীরভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে।

🟩 সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লেখায় ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্ব, দার্শনিক অস্তিত্ববাদ এবং বাস্তববাদী চিত্রায়ন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি লোকজ সংস্কৃতি ও ধর্মের সংঘাতকে উপন্যাসে নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।

🟩 পুরস্কার ও সম্মাননা

  • আদমজী সাহিত্য পুরস্কার
  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার
  • মরণোত্তর একুশে পদক (১৯৮৪)

🟩 মৃত্যু

তিনি ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

🟩 উপসংহার

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য শিল্পী, যিনি তাঁর সাহিত্যকর্মে মানুষ, সমাজ ও ধর্মীয় মনস্তত্ত্বের গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। “লালসালু”-র মত উপন্যাস আজও পাঠক-সমাজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁর লেখনী বাংলা সাহিত্যকে যেমন বৈচিত্র্য দিয়েছে, তেমনি গভীর দার্শনিক চিন্তার বিকাশও ঘটিয়েছে।

 

https://www.munshiacademy.com/সৈয়দ-ওয়ালীউল্লাহ-জীবন/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *