✍️ আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুউদ্দিন : জীবন ও সাহিত্যকর্ম
(বাংলা সাহিত্যে বিজ্ঞানের কণ্ঠস্বর)

🧬 জন্ম ও পরিচিতি
আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন ছিলেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞানবিষয়ক কবি, লেখক ও শিক্ষাবিদ। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি ১৯৩০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পর বাংলাদেশে চলে আসেন এবং সারাজীবন বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে নিবেদিত ছিলেন।
🎓 শিক্ষাজীবন
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। সেখানে তিনি বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে কাজ করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি ও শিক্ষকতার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেন।
📚 সাহিত্য ও বিজ্ঞানচর্চা
আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিনের সাহিত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য হলো – বিজ্ঞানকে সহজ ভাষায় শিশু ও কিশোরদের নিকট উপস্থাপন করা। তিনি ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ ও অনুবাদ—সব ধরনের সাহিত্যেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ জাগাতে চেষ্টা করেছেন।
তাঁর লেখা পাঠ্যবই ও জনপ্রিয় বিজ্ঞানগ্রন্থও ব্যাপকভাবে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
📖 উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ
- আলো ও ছায়ার কাহিনী
- বিজ্ঞানীর রোমাঞ্চকর কাহিনী
- আমরা কীভাবে চলি
- পদার্থবিজ্ঞানের সহজ পাঠ
- তরুণদের জন্য বিজ্ঞান কাহিনী
- আণবিক কাব্য (ছড়া ও পদ্যে বিজ্ঞান)
- কল্পবিজ্ঞানের গল্প (অনুবাদসহ)
✒️ সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য
- সহজ, বোধগম্য ও ছন্দময় ভাষা
- বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবনার ছড়া ও কবিতা
- শিক্ষামূলক অথচ কল্পনাময় রচনা
- শিশু ও কিশোরদের মনের মতো ভাষা ও উদাহরণ
- আধুনিক বিজ্ঞান ও সমাজের বাস্তবতা নিয়ে কাব্যিক দৃষ্টিভঙ্গি
🛰️ অবদান ও প্রভাব
বাংলাদেশে বিজ্ঞানসাহিত্য ও বিজ্ঞান শিক্ষার গণপ্রচারে তার অবদান অসামান্য।
তিনি “বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ” (BCSIR)-এর চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং UNESCO-সহ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সংগঠনেও প্রতিনিধিত্ব করেন।
🏁 মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন ১৯৯৮ সালের ৩০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সাহিত্য ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি নিষ্ঠা আজও পাঠক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রেরণার উৎস।
✅ উপসংহার
আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন ছিলেন বাংলা ভাষার প্রথম সারির বিজ্ঞান লেখকদের অন্যতম। তিনি শিশু-কিশোরদের মধ্যে বিজ্ঞানভীতি দূর করে কৌতূহল জাগাতে পেরেছিলেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম শুধু জ্ঞানচর্চা নয়, এক বিশুদ্ধ মানবিক ও কল্পনাপ্রবণ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।