সোমপুর মহাবিহার

সোমপুর মহাবিহার


ভূমিকা

বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ও গৌরবময় ইতিহাসের এক মহিমান্বিত নিদর্শন হলো সোমপুর মহাবিহার। পাল যুগে নির্মিত এই বিহারটি প্রাচীন বাংলাদেশের বৌদ্ধ শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র ছিল। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে রাখে। ইতিহাস, স্থাপত্য ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে সোমপুর মহাবিহার বাংলাদেশের গর্ব।


কোথায়

সোমপুর মহাবিহার অবস্থিত নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে। এটি নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে।


কেন যাবেন

যারা ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও বৌদ্ধ সভ্যতার প্রতি আগ্রহী, তাদের জন্য সোমপুর বিহার একটি অনন্য স্থান। এখানে এসে আপনি দেখতে পাবেন হাজার বছরের পুরনো স্থাপত্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ—যা একসময় জ্ঞানচর্চার মহাকেন্দ্র ছিল।


কখন যাবেন

শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) সোমপুর বিহার ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তখন আবহাওয়া মনোরম থাকে, ধুলা বা গরমের কষ্ট কম হয়। সকাল বা বিকেলের সময় ঘুরতে সবচেয়ে ভালো।


কীভাবে যাবেন / রুট (Step by Step)

১️⃣ ঢাকা থেকে:

  • বাসে: গাবতলী বা কল্যাণপুর থেকে নওগাঁ/বগুড়া/রানীনগরগামী বাসে উঠুন। নওগাঁ পৌঁছে স্থানীয় বাস বা সিএনজি করে পাহাড়পুর।
  • ট্রেনে: কমলাপুর থেকে সান্তাহার বা জয়পুরহাটগামী ট্রেনে উঠুন। সেখান থেকে অটো/সিএনজি করে সোমপুর বিহার।

২️⃣ রাজশাহী থেকে:

  • রাজশাহী থেকে সরাসরি নওগাঁ বা সান্তাহার হয়ে পাহাড়পুর যাওয়া যায়।
  • দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার।

৩️⃣ রুট সারাংশ:
ঢাকা → বগুড়া → নওগাঁ → বদলগাছী → পাহাড়পুর → সোমপুর বিহার


কী দেখবেন

  • মূল বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ
  • প্রাচীন স্থাপত্যে ব্যবহৃত পোড়ামাটির ফলক
  • প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর (মিউজিয়াম)
  • বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার কক্ষ
  • প্রাচীন জলাধার ও পথনির্দেশক প্রাচীর
  • পাল যুগের স্থাপত্য নিদর্শন ও শিল্পকর্ম

খরচ

  • প্রবেশমূল্য:
    • বাংলাদেশি প্রাপ্তবয়স্ক: ২০ টাকা
    • বিদেশি পর্যটক: ১০০ টাকা
    • শিক্ষার্থী: ১০ টাকা
  • মিউজিয়াম প্রবেশ: ১০ টাকা
  • গাইড চার্জ: ২০০–৩০০ টাকা (ইচ্ছানুযায়ী)

পরিবহন

ঢাকা থেকে নওগাঁ পর্যন্ত যেকোনো এক্সপ্রেস বাসে যাওয়া যায় (রাতের বাস সুবিধাজনক)।
নওগাঁ থেকে পাহাড়পুর পর্যন্ত স্থানীয় পরিবহন—সিএনজি, অটো বা বাস সহজলভ্য।
নিজস্ব গাড়ি বা ট্যুরিস্ট মাইক্রোবাসেও যাওয়া যায়।


খাওয়ার ব্যবস্থা

  • নওগাঁ শহর ও বদলগাছী বাজারে হোটেল-রেস্তোরাঁ আছে।
  • স্থানীয় হোটেল যেমন “হোটেল রাজা”, “হোটেল নওগাঁ ইন”, “নওগাঁ রেস্টুরেন্ট” থেকে ভালো খাবার পাওয়া যায়।
  • স্থানীয়ভাবে ভাত, ডাল, মাছ, দেশি মুরগি ও সবজি জনপ্রিয়।

যোগাযোগ

ঠিকানা: সোমপুর মহাবিহার, পাহাড়পুর, বদলগাছী, নওগাঁ।
ফোন (পুরাতত্ত্ব অধিদপ্তর): +880-2-9556611
ওয়েবসাইট: www.archaeology.gov.bd


আবাসন ব্যবস্থা

  • নওগাঁ জেলা শহরে: হোটেল রাজা, হোটেল নওগাঁ ইন, গেস্ট হাউস
  • পাহাড়পুরে: সরকারি ডাকবাংলো (আগে বুকিং প্রয়োজন)
  • বগুড়ায়: আরও উন্নত হোটেল যেমন নাজ গার্ডেন, শাওন রিসোর্ট ইত্যাদি

দৃষ্টি আকর্ষণীয় বিষয়

  • পোড়ামাটির ফলকে বুদ্ধমূর্তি, প্রাণী ও মানুষের জীবনের দৃশ্য
  • পাল যুগের বিশাল বৌদ্ধ স্থাপত্য
  • প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিদর্শন
  • সবুজ ঘাসে ঘেরা উন্মুক্ত প্রান্তর ও ইতিহাসের আবেশ

সতর্কতা

  • প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনায় উঠা বা আঁকিবুকি করা নিষিদ্ধ।
  • আবর্জনা ফেলবেন না।
  • গাইড ছাড়া ভিতরের জায়গায় বিভ্রান্ত হতে পারেন, তাই একজন অনুমোদিত গাইড নিতে পারেন।
  • দুপুরের রোদে ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করুন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • মহাস্থানগড়, বগুড়া
  • পাহাড়পুর জাদুঘর
  • কুসুম্বা মসজিদ
  • রানীনগর দুর্গ
  • দুর্গাপুর বৌদ্ধবিহার
  • বারিন্দ গবেষণা জাদুঘর

টিপস

  • ভোরে গেলে ফটো ও আবহ দুই-ই দারুণ হয়।
  • স্থানীয়দের কাছ থেকে ইতিহাস শুনলে অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে।
  • মিউজিয়াম দেখা মিস করবেন না।
  • পানি ও হালকা খাবার সঙ্গে রাখুন।
  • স্থানীয় হস্তশিল্প বা ফলমূল সংগ্রহ করতে পারেন।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *