✨ চর্যাপদের কবিগণ — চর্যাপদের সিদ্ধাচার্য
চর্যাপদের কবিগণ—যাদেরকে সিদ্ধাচার্য বলা হয়—বজ্রযানী ও সহজযানী বৌদ্ধ তান্ত্রিক সাধকদের মধ্যে গণ্য। তিব্বতি ও ভারতীয় কিংবদন্তিতে এঁরা ‘চারাশি সিদ্ধা’ নামে পরিচিত, তবে তাঁদের প্রকৃত সম্মিলিত তালিকা অজানা রয়েই গেছে ।
📍 ভৌগোলিক ও সম্প্রদায়গত বৈচিত্র্য
এই কবিগণ পূর্ব ভারত ও নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা; অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পূর্ববঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, রাঢ়, বিহার, ওড়িশা, অসম ও কামরূপের সাধকেরা । অনেকেই অঘোরী সম্প্রদায়ের সাথে সংযুক্ত ছিলেন ।
🖋️ প্রমাণসাপেক্ষ কবিদের তালিকা ও পদসংখ্যা
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আবিষ্কৃত মূল পুঁথিতে ৫০টি পদে ২৪ জন সিদ্ধাচার্য যুক্ত ছিলেন:
- সর্বাধিক রচনাপ্রিয়: কাহ্নপাদ (১৩টি পদ; ১২টি পাওয়া যায় ৭,৯,১০,১১,১২,১৩,১৮,১৯,৩৬,৪০,৪২,৪৫ নম্বর)
- দ্বিতীয় সর্বোচ্চ: ভুসুকুপাদ (৮টি পদ: ৬,২১,২৩,২৭,৩০,৪১,৪৩,৪৯)
- সরহপাদ (৪টি: ২২,৩২,৩৮,৩৯), কুক্কুরীপাদ (৩টি: ২,২০,৪৮), শান্তিপাদ (২টি: ১৫,২৬), শবরপাদ (২টি: ২৮,৫০)
- একক পদ রচনা করেছেন: ভিরুআ (৩), গুণ্ডরী (৪), চাটিল (৫), কম্বলাম্বরপাদ (৮), ডোম্বীপাদ (১৪), মহিদারপাদ (১৬), বীণাপাদ (১৭), আজদেব (৩১), ঢেণ্ধপাদ (৩৩), দারিক (৩৪), ভদ্রপাদ (৩৫), তাড়ক (৩৭), কঙ্কণ (৪৪), জয়নন্দীপাদ (৪৬), ধামপাদ (৪৭) ।
- লাড়ীডোম্বীপাদ রচিত কোনো পদ পাওয়া যায়নি ।
🌟 প্রধান কবিদের বিশদ পরিচিতি
- লুইপাদ (Luipāda): আদি সিদ্ধাচার্য হিসেবে বৃহত্তর সম্মানিত; রাঢ়–মগধ অঞ্চলের বাসিন্দা, পদ ১ ও ২৯-এর লেখক )।
- কাহ্নপাদ (Kānhapāda): কৃষ্ণাচার্য বা কৃষ্ণবজ্র নামেও তিনি পরিচিত; চর্যাগীতির সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত কবি; তিব্বতে সিদ্ধাচার্যদের ঐতিহ্যে চর্চিত।
- ভুসুকুপাদ (Bhusukupāda): সম্ভবত বাঙালি; ষাড়া ভাষাবৈশিষ্ট্যে প্রাচীন বাংলা প্রাঞ্জলভাবে ব্যবহার করেছেন ।
- অন্যান্য কবিদের (সরহপাদ, শান্তিপাদ, শবরপাদ, বীণাপাদ ইত্যাদি) সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও, ক্ষুদ্র পদসংখ্যা থেকে বোঝা যায়, এরা ষাট-দশকের আধ্যাত্মিক পদ্যকার ছিলেন ।
🧭 উপসংহার
- চর্যাপদের ২৪ জন কবির মধ্যে কেউ কেউ অঞ্চলবিশেষে মিশ্র ভাষায় রচনা করেছেন যা বাংলা, ওড়িয়া ও বিভিন্ন প্রাক-ভাষার মিশ্রণ।
- লুইপাদ ও কাহ্নপাদ হলো দুটি কেন্দ্রে আবদ্ধ কাঠামোয় গুরুস্থানীয়, বাকি কবিরা পদসংখ্যা ও বৈচিত্র্যে সাহিত্য ইতিহাসে নিজস্ব স্থান দখল করে রেখেছেন।
https://www.munshiacademy.com/চর্যাপদের-কবিগণ-চর্যাপ/