শামসুর রাহমান
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে খ্যাত শামসুর রাহমান, যিনি তার কবিতায় সময়, সমাজ, রাজনীতি এবং মানুষের আবেগ-অনুভূতির জটিলতা তুলে ধরেছেন অসাধারণ দক্ষতায়। তাঁর কাব্যচর্চা যেমন ছিল মানবিক মূল্যবোধে উদ্ভাসিত, তেমনি ছিল সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মাতা আমেনা খাতুন। শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। তিনি নবাবপুর সরকারি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, এরপর ঢাকা কলেজ থেকে আইএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
#সাহিত্যজীবন
শামসুর রাহমানের সাহিত্যজীবনের সূচনা হয় কবিতা দিয়ে। ১৯৪৯ সালে সোনার তরী পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে। এরপর থেকে তিনি বাংলা কবিতায় আধুনিকতার কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
#প্রধানসাহিত্যকর্ম
শামসুর রাহমান প্রায় ৬০টির বেশি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন।
#প্রসিদ্ধ_কবিতাগ্রন্থসমূহ:
- প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে
- নির্বাচিত কবিতা
- বন্দী শিবির থেকে
- ধ্বংস ও নির্মাণের কবিতা
- আমি অনাহারী রমণীর কাছে
- দুঃসময়ের মুখোমুখি
#গদ্যওসাংবাদিকতা:
তিনি একজন সফল প্রবন্ধকারও ছিলেন। দৈনিক দৈনিক বাংলা এবং বাংলাদেশ টাইমস-এ তিনি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
#রাজনীতি_ও_সমাজচেতনা
শামসুর রাহমানের কবিতায় রাজনীতি, মানবতা ও সমাজচেতনার প্রবল প্রতিফলন রয়েছে। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁর কলম ছিল প্রখর ও সোচ্চার। তাঁর “স্বাধীনতা তুমি”, “তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা” কবিতাগুলো স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর নিদর্শন।
#পুরস্কারওস্বীকৃতি
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য শামসুর রাহমান অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১)
- একুশে পদক (১৯৭৭)
- স্বাধীনতা পদক (১৯৯১)
- আনন্দ পুরস্কার, কলকাতা (১৯৯৪)
#মৃত্যু
২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট শামসুর রাহমান ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের অবসান ঘটে।
#উপসংহার
শামসুর রাহমান শুধু একজন কবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি যুগ, একটি চেতনা, একটি আন্দোলন। তাঁর সাহিত্যকর্ম মানবতা, স্বাধীনতা এবং সৌন্দর্যের এক অবিনাশী জ্যোতি হিসেবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে চিরভাস্বর থাকবে।