ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত : জীবন ও সাহিত্যকর্ম

🖋️ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
🔹 জন্ম: ৬ মার্চ ১৮১২
🔹 জন্মস্থান: কাঞ্চনপল্লী, কাঁচড়াপাড়া, উত্তর ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত
🔹 মৃত্যু: ২৩ জানুয়ারি ১৮৫৯ (বয়স ৪৬)
🔹 পরিচিতি: কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
🔹 স্ত্রী: দুর্গামণি দেবী রেবা
🔹 পদবি: দাশগুপ্ত থেকে পরিবর্তিত হয়ে “গুপ্ত”
🧬 জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন এক সম্ভ্রান্ত বৈদ্য পরিবারে।
🔹 পিতা: হরিনারায়ণ দাশগুপ্ত (আয়ুর্বেদ চিকিৎসক)
🔹 মাতা: শ্রীমতি দেবী
🔹 প্রপিতামহ: নিধিরাম দাশগুপ্ত (খ্যাতনামা কবিরাজ)
মাত্র ১০ বছর বয়সে মাতৃহারা হন। পিতার দ্বিতীয় বিয়ের পর তিনি জোড়াসাঁকোর মামাবাড়িতে উঠে যান।
১৫ বছর বয়সে বিবাহ হয় গৌরহরি মল্লিকের কন্যা দুর্গামণি দেবীর সঙ্গে।
📖 শিক্ষা জীবন
🔹 প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় খুব অগ্রসর না হলেও আত্মচেষ্টায় তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষা রপ্ত করেন।
🔹 বেদান্ত দর্শনেও পারদর্শিতা অর্জন করেন।
🗞️ কর্মজীবন ও সাংবাদিকতা
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বাংলা সাংবাদিকতার অগ্রপথিকদের একজন।
🔹 ১৮৩১: ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত
🔹 ১৮৩2: ‘সংবাদ রত্নাবলী’ সম্পাদনা
🔹 ১৮৩৯: সংবাদ প্রভাকরকে দৈনিক রূপে প্রকাশ
🔹 ১৮৪৬: ‘পাষণ্ড’ সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ
🔹 পরবর্তী বছর: ‘সংবাদ সাধুরঞ্জন’ সম্পাদনা
🔹 গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে কবিগান সংগ্রহ ও প্রাচীন কবিদের জীবনী রচনা
🔹 শুরুতে রক্ষণশীল হলেও পরে তিনি প্রগতিশীল ভাবধারায় যুক্ত হন।
🔹 বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ আন্দোলনের বিরোধিতা করলেও পরে স্ত্রীশিক্ষা, দরিদ্রদের সহানুভূতি ও ধর্মসভার বিরোধিতা করেন।
✍️ সাহিত্যিক জীবন
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের “যুগসন্ধিক্ষণের কবি”।
🔹 মঙ্গলকাব্যের ঐতিহ্যবাহী রীতির পরিপন্থী হয়ে তিনি খণ্ডকবিতা ও সমসাময়িক বিষয়ের ওপর ব্যঙ্গ-বিদ্রূপমূলক কবিতা রচনা করেন।
🔹 কবিয়ালদের প্রভাব থাকলেও ভাষা ও ছন্দে ছিল নিজস্বতা।
🔹 বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতাকে গুরুত্ব দিতেন, ইংরেজি শব্দ পরিহার করে খাঁটি বাংলা ব্যবহারে জোর দিতেন।
📚 সাহিত্যকীর্তি
🔹 রচনাশৈলী:
- সমসাময়িক সমাজ ও রাজনীতির চিত্র তুলে ধরা
- ভাষা ও ছন্দে দক্ষতা
- ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে পারদর্শিতা
- নাগরিক রুচির প্রতিফলন
🔹 উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম:
📖 রামপ্রসাদ সেন কৃত কালীকীর্তন
(১৮৩৩)📖 কবিবর ভারতচন্দ্র রায় ও তাঁর জীবনবৃত্তান্ত
(১৮৫৫)📖 কাব্যসংগ্রহ
(সম্পা. বঙ্কিমচন্দ্র, ১৮৯২)🎭 নাটক: বোধেন্দুবিকাশ
(১৮৬৩)
🔹 তিনি বিভিন্ন কবির জীবনী সংকলনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সাহিত্যিকদের জন্য পথ সুগম করেন।
✨ যমক কাব্যশৈলী
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত যমক ব্যবহারে পারদর্শী ছিলেন — একই শব্দ বা বর্ণসমষ্টি দ্ব্যর্থবোধকভাবে ব্যবহার করতেন। নিচে কিছু উদাহরণ:
📝 কবিতা | 🔍 অর্থ |
---|---|
১. অতনু শাসনে তনু তনু অণুদিন | ১ম তনু = দেহ, ২য় তনু = কৃশ |
২. ভাবে নাহি ভাবি ভাবি | ১ম ভাবি = ভাবনা করি, ২য় ভাবি = ভবিষ্যৎ |
৩. আনা দরে আনা যায় কত আনারস | ১ম আনা = ১/১৬ টাকা, ২য় আনা = আনা হয়েছে |
৪. প্রকাশিয়া প্রভাকর শুভ দিন দিন | ১ম দিন = দিবস, ২য় দিন = প্রদান কর |
৫. মিথ্যার কাননে কভু ভ্রমে নাহি ভ্রমে | ১ম ভ্রমে = ভুলে, ২য় ভ্রমে = ঘুরে |
৬. দুহিতা আনিয়া যদি না দেহ, ত্যাজিব দেহ | ১ম দেহ = প্রদান, ২য় দেহ = শরীর |
৭. ওরে ভণ্ড হাতে দণ্ড, দণ্ডে দণ্ডে নিজ দণ্ডে দণ্ড কর ভোগ | দণ্ড = শাস্তি, লাঠি, সময় |
৮. কয় মাস খাও মাস উদর ভরিয়া | ১ম মাস = সময়, ২য় মাস = মাংস |
৯. চিত্রকরে চিত্র করে করে তুলি তুলি | তুলি = উত্তোলন, তুলি = আঁকার যন্ত্র |
১০. সেতার অনেক আছে, সে তার ত নাই | সে তার = তন্ত্র, তার = ধ্বনি |
১১. তানপুরা আছে মাত্র, তান পুরা নাই | তান = সঙ্গীতের আওয়াজ, তান পুরা = সম্পূর্ণ নয় |
🏅 মূল্যায়ন ও উত্তরাধিকার
🔹 বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাকে “খাঁটি বাঙালি কবি” বলেছিলেন।
🔹 তাঁর গদ্য ও কবিতা ভবিষ্যৎ বাংলা সাহিত্যের ভিত্তি নির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
https://www.munshiacademy.com/ঈশ্বরচন্দ্র-গুপ্ত-জীবন-ও/