✨ অধ্যাপক ড. আহমদ শরীফ: বাঙালি চিন্তার বীরোবীর প্রতিধ্বনি ✨
একজন শিক্ষক – একজন অধিকারবাদী গবেষক – একজন সমাজ–রাজনৈতিক–দার্শনিক বিনির্মাণকারি

👶 জন্ম ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট
-
জন্ম: ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২১, সুচক্রদণ্ডী (পটিয়া), চট্টগ্রাম ।
-
পিতা আব্দুল আজিজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট স্কুলে করণিক ও মা মিরাজ খাতুন।
-
তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন আইন উদ্দিন, চাচা ছিলেন বাংলা পুঁথি–সংগ্রাহক ও সাহিত্যবিশারদ আবদুল করিম—যাঁদের স্নেহ-শ্রদ্ধা ও জ্ঞানই তাঁর বুদ্ধিবৃত্তির ভিত্তি।
🎓 শিক্ষাজীবন ও ডক্টরেট
-
পটিয়া হাই স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স (১৯৪৪) ও পিএইচডি (১৯৬৭, “সৈয়দ সুলতান” ভিত্তিক) অর্জন।
📚 পেশাদার জীবনের কাব্যিক ছন্দ
-
১৯৪৫–৪৯: নওয়াব ফয়জুন্নেসা কলেজ ও ফেনী ডিগ্রি কলেজে বাংলা শিক্ষকতা, বেতন ছিল মাত্র ১১৫–২৫০ টাকা ।
-
১৯৫০–৮৩: ঢাবিতে গবেষণা সহকারী থেকে অধ্যাপক, ৩৩ বছরের সেবা, প্রযোজকের দায়িত্ব—বিভাগীয় চেয়ারম্যান, কলা অনুষদের ডীন, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ।
-
অবসর (১৯৮৩) পর “নজরুল অধ্যাপক” হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর (১৯৮৪–৮৬) ।
-
এক সময় রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা কেন্দ্রেও অনুষ্ঠান সহকারী ছিলেন।
💡 গবেষণা ও সাহিত্য–সচেতনতা
-
বাংলার মধ্যযুগীয় পুথি গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা, ৪০টিরও বেশি পুথি সম্পাদনা—(যেমন: Layli Majnu, Puthi Parichiti, Alāwar Toḥfa, Sikandarnāma) ।
-
সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ লেখক শিবির (১৯৭২), সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও স্বাধীনতাবিষয়ক লিখায় সক্রিয় ভূমিকা।
-
রাজনৈতিক-সামাজিক প্রবন্ধের শক্ত জমাট: ‘ইতিহাসের ধারায় বাঙালি’ (১৯৬৫), “Itihasher Dharay Bangali”—‘বাংলাদেশ’ নাম ব্যবহারের প্রাথমিক স্বরূপ।
-
ধারায় যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ, মার্কসবাদ—তার চিন্তা চেতনায় অনুপ্রবেশ ছিল, যা প্রগতিশীল সমাজসংস্কারের পথযাত্রায় আলোকদায়ী ।
📝 বিশিষ্ট প্রকাশনা
-
সম্পাদিত:
-
Layli Majnu (১৯৫৭), Puthi Parichiti (১৯৫৮) ।
-
-
মূল্যবান প্রবন্ধ/গ্রন্থ:
-
বিচিতচিন্তা, স্বদেশচিন্তা, যুগযন্ত্রণা, কলা-সংস্কৃতিবিষয়ক চিন্তা, বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি–চিন্তা–চেতনাবিবর্তন, বাংলার বিপ্লবী পটভূমি, মানবতা ও গণমুক্তি, বাংলা, বাঙালি ও বাঙালীত্ব প্রভৃতি ।
-
-
প্রায় একশ’র বেশি দর্পণাত্মক-আলোচনামূলক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ।
🏆 পুরস্কার ও সম্মান
-
বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, দাউদ সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক (১৯৯১) ।
-
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট (১৯৯৩) ।
🕊️ অবশেষ, মৃত্যুও মহৎ দান
-
২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, ঢাকা—১৮০০ টাকায় চক্ষু ও শরীর দান, ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের উপকরণ হিসেবে নিজ দেহ উৎসর্গ।
🔭 চূড়ান্ত ভাবনা
সেক্যুলার, নির্ভীক, মানবতাবাদী, ঈশ্বরবাদের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল, জ্ঞান–চিন্তা–সংস্কৃতির ঐতিহাসিক পুনর্গঠনকারী—এই সব গুণে বিশ্বজুড়ে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছেন ড. আহমদ শরীফ। তাঁর গবেষণা ও প্রবন্ধ–আলোচনা আজও তরুণ বুদ্ধিজীবীদের জন্য পথনির্দেশক, তাঁর সাহিত্য–চিন্তার ‘নন–কনফর্মিস্ট’ স্বাধীনভাবে আলো জ্বালায় বাঙালি মনের অন্ধকারে।