🌸 ডিবির হাওর : লাল শাপলার রাজ্যে
জীবনের একঘেয়েমি আর যান্ত্রিকতায় যখন মন খুঁজে ফেরে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া, তখন প্রকৃতি ডাকে তার নিজস্ব ভাষায়। কখনো তা ভোরের কোমল আলোয়, কখনো শীতের নিস্তব্ধ হাওয়ায়, আবার কখনোবা একরাশ শাপলার হাসিতে। ডিবির হাওর, সেই প্রকৃতির এক নিঃশব্দ কবিতা, যেখানে জল, কুয়াশা আর কল্পনার মেলবন্ধনে সৃষ্টি হয় এক স্বপ্নময় জগৎ।
ভোরের সূর্য যখন আলতো করে ছুঁয়ে যায় হাওরের জলে ঘুমিয়ে থাকা লাল শাপলাগুলোকে, তখন সেই দৃশ্য হৃদয়ে এঁকে যায় এক অনন্য রূপকথা। শীতের সকালগুলো হয়ে ওঠে আরও মোহনীয়, যখন দুরন্ত পরিযায়ী পাখিরা গান গায় অজানা দেশ থেকে এসে। এইসব মুহূর্তের টানে, আমরা পাড়ি দিই শহরের কোলাহল পেরিয়ে, প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়ায় নিজেকে হারাতে—আর ফিরে পাই এক নতুন জীবন, এক অনাবিল আনন্দ।
এই ভ্রমণ তাই কেবল স্থানান্তর নয়, বরং আত্মার এক নির্মল অভিপ্রায়—প্রকৃতির বুকে কিছুক্ষণ নিবিড় হয়ে থাকা, জীবনের আসল সৌন্দর্যকে ছুঁয়ে দেখা।
—
📍 কোথায় অবস্থিত?
অবস্থান: জৈন্তাপুর উপজেলা, সিলেট।
দূরত্ব: সিলেট শহর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার ।
—
📅 কখন যাবেন?
সেরা সময়: শীতকাল, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, যখন লাল শাপলা পূর্ণ বিকাশে থাকে এবং পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে ।
—
🛶 কীভাবে যাবেন?
1. বাসে: সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট থেকে জাফলংগামী বাসে জৈন্তাপুর বাজার পর্যন্ত। ভাড়া প্রায় ১০০ টাকা।
2. সিএনজি/টমটমে: জৈন্তাপুর বাজার থেকে ডিবির হাওর পর্যন্ত সিএনজি বা টমটমে যেতে পারেন। ভাড়া প্রায় ৩০ টাকা ।
3. ব্যক্তিগত যানবাহনে: সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে সরাসরি ডিবির হাওরে পৌঁছানো যায়।
—
💰 খরচের বিবরণ:
নৌকা ভাড়া: প্রতি ঘণ্টা ৪০০-৪৫০ টাকা ।
সিএনজি রিজার্ভ: সারা দিনের জন্য ১৫০০-১৮০০ টাকা ।
—
🏨 কোথায় থাকবেন?
ডিবির হাওরের আশেপাশে থাকার ব্যবস্থা সীমিত। তবে সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্ট হাউস রয়েছে, যেমন:
হোটেল হিল টাউন
হোটেল গুলশান
হোটেল দরগা গেইট
হোটেল সুরমা
হোটেল কায়কোবাদ
এই হোটেলগুলোর ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
—
🍽️ খাবারের ব্যবস্থা:
ডিবির হাওরের আশেপাশে খাবারের ব্যবস্থা সীমিত। তাই সঙ্গে শুকনো খাবার ও পানি নিয়ে যাওয়া উত্তম।
—
🐦 দর্শনীয় বিষয়সমূহ:
লাল শাপলার বিল: হাজারো লাল শাপলার সমারোহ।
পরিযায়ী পাখি: বালিহাঁস, পাতিসরালি, পানকৌড়ি, সাদাবক ও জল ময়ুরী।
ঐতিহাসিক মন্দির: জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত দুইশত বছরের পুরাতন মন্দির ।
—
💡 টিপস:
ভোরবেলা পৌঁছালে শাপলার পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
সঙ্গে ক্যামেরা ও বাইনোকুলার নিতে ভুলবেন না।
পরিবেশ রক্ষায় ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
—
ডিবির হাওর প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি, যা প্রতিটি প্রকৃতিপ্রেমীর মন ছুঁয়ে যায়। এই হাওরের লাল শাপলা ও পরিযায়ী পাখির সমারোহ আপনাকে নিয়ে যাবে এক স্বপ্নময় জগতে।
https://www.munshiacademy.com/ডিবির-হাওর-লাল-শাপলার-রাজ/