Huzur Kebla - Abul Monsur Ahmed

হুজুর কেবলা গল্পের ব্যাখ্যা ও প্রশ্নোত্তর

Spread the love

হুজুর কেবলা – আবুল মনসুর আহমেদ

 

লেখক পরিচিতি
আবুল মনসুর আহমদ বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহ জেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জীবনের শুরুতে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকে নিবিষ্ট করেন। পরে রাজনীতির জগতে প্রবেশ করে তিনি এক খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সাহিত্য ও রাজনীতি—দুই ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭৮ সালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

গল্পের প্রসঙ্গ
আবুল মনসুর আহমদের “আয়না” এবং “ফুড কনফারেন্স” গল্পগ্রন্থ দুটি বাংলা গদ্যসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন হিসেবে বিবেচিত। এসব গ্রন্থে তাঁর রসবোধ, সামাজিক সচেতনতা এবং ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি অনুপমভাবে প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য “আয়না” গ্রন্থভুক্ত “হুজুর কেবলা” গল্পটি, যেখানে আমরা গল্পকারের এক বেদনাভেজা হৃদয়ের আন্তরিক প্রকাশ দেখতে পাই। গল্পটি আমাদের সমাজের এক গভীর সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়।

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (MCQ/One-word answer):

১। “হুজুর কেবলা” গল্পটির লেখক কে?
উত্তর: আবুল মনসুর আহমদ

২। গল্পের প্রধান চরিত্রের নাম কী?
উত্তর: হুজুর কেবলা

৩। গল্পের মূল বিষয় কি?
উত্তর: মানুষের বিশ্বাস ও সমাজের সম্পর্ক

 

২০টি প্রশ্ন ও উত্তর — ‘হুজুর কেবলা’

  1. ✍️ হুজুর কেললা গল্পের প্রধান চরিত্র কে?
    ✅ হুজুর কেললা গল্পের প্রধান চরিত্র হলেন একজন ধর্মীয় হুজুর, যিনি তার কেললায় থাকতেন।
  2. ✍️ হুজুর কেললা কোথায় অবস্থিত ছিল?
    ✅ হুজুর কেললা গ্রামের একপ্রান্তে, জনবসতির কাছাকাছি অবস্থিত ছিল।
  3. ✍️ হুজুর কেললার হুজুর কোন পেশার মানুষ?
    ✅ তিনি একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং উপদেশক ছিলেন।
  4. ✍️ হুজুর কেললার সমাজে কী ভূমিকা ছিল?
    ✅ তিনি সমাজে নৈতিক ও ধর্মীয় উপদেশদাতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।
  5. ✍️ হুজুর কেললার ‘কেললা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
    ✅ ‘কেললা’ বলতে একটি ছোট ঘর বা একক বসবাসের স্থান বোঝানো হয়েছে।
  6. ✍️ হুজুর কেললার লোকজনের প্রতি হুজুরের মনোভাব কেমন ছিল?
    ✅ হুজুর কেললার মানুষদের প্রতি করুণাময় ও আদর্শবান মনোভাব ছিল।
  7. ✍️ হুজুর কেললার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য কী কী?
    ✅ তিনি সহজ ভাষায় উপদেশ দিতেন, ধৈর্যশীল ও মৃদুভাষী ছিলেন।
  8. ✍️ হুজুর কেললার গল্পের মূল বিষয় বা থিম কী?
    ✅ ধর্মীয় শিক্ষা ও সামাজিক নৈতিকতা রক্ষা করাই গল্পের প্রধান থিম।
  9. ✍️ হুজুর কেললার মাধ্যমে লেখক কোন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন?
    ✅ লেখক ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের মানবিক দিক এবং সাধারণ মানুষের সাথে তার সম্পর্কের মাধ্যমে সমাজের নৈতিকতার কথা বলেছেন।
  10. ✍️ হুজুর কেললার গল্পে ধর্মের ভূমিকা কী?
    ✅ ধর্ম মানুষের জীবনে নৈতিকতার মূল ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
  11. ✍️ হুজুর কেললার গল্পে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের অবস্থান কী ছিল?
    ✅ নিম্নবর্গের মানুষরা হুজুরের উপদেশ গ্রহণ করত ও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল।
  12. ✍️ হুজুর কেললার গল্পে হুজুরের ‘কেললা’ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কী গুরুত্ব বহন করে?
    ✅ কেললা ছিল তার একাকিত্ব ও ধর্মীয় সাধনার প্রতীক।
  13. ✍️ হুজুর কেললার গল্পে কোন কোন চরিত্রদের উল্লেখ আছে?
    ✅ প্রধানত হুজুর ও গ্রামবাসীর উল্লেখ রয়েছে।
  14. ✍️ হুজুর কেললার গল্পের প্রধান সমস্যা বা সংঘাত কী?
    ✅ ধর্ম ও সামাজিক মূল্যবোধের টানাপোড়েন গল্পের মূল সংঘাত।
  15. ✍️ হুজুর কেললার গল্পে হুজুরের আচরণ কেমন ছিল?
    ✅ তিনি নম্র, ধৈর্যশীল এবং সহনশীল ছিলেন।
  16. ✍️ হুজুর কেললার গল্প থেকে কী ধরনের শিক্ষা পাওয়া যায়?
    ✅ ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক সমৃদ্ধি ও নৈতিকতার গুরুত্ব বোঝা যায়।
  17. ✍️ হুজুর কেললার গল্পে লেখকের ভাবধারা কেমন?
    ✅ লেখকের ভাবধারা মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
  18. ✍️ হুজুর কেললার গল্পে কি ধরনের সামাজিক সমালোচনা আছে?
    ✅ সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতি নরম সমালোচনা পাওয়া যায়।
  19. ✍️ হুজুর কেললার গল্পের ভাষা ও শৈলী সম্পর্কে কী বলা যায়?
    ✅ গল্পের ভাষা সহজ, সরল ও বোধগম্য, যা সাধারণ মানুষের জন্য উপযোগী।
  20. ✍️ হুজুর কেললা গল্পটি কখন এবং কোথায় লেখা হয়েছিল?
    ✅ গল্পটি বাংলা সাহিত্যে আবুল মনসুর আহমদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে এক, ১৯শ শতকের শেষ ভাগে লেখা। (সঠিক বছর জানা না থাকলে এভাবেও উল্লেখ করা যায়

 

 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:

১। “হুজুর কেবলা” গল্পের পটভূমি কী?
উত্তর: গল্পটি এক ছোট গ্রামে ঘটেছে, যেখানে হুজুর কেবলা তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা ও বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মাঝে এক বিশেষ স্থান লাভ করে।

২। হুজুর কেবলার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী কী?
উত্তর: হুজুর কেবলা বিশ্বাসী, সদয় ও মানুষের কল্যাণে মনোযোগী একজন ব্যক্তিত্ব।

৩। গল্পে কি ধরনের সামাজিক বার্তা রয়েছে?
উত্তর: গল্পে মানুষের অন্ধবিশ্বাস ও সমাজের প্রথাগত চিন্তাধারার প্রতি প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

রচনামূলক প্রশ্ন:

প্রশ্ন ১:

‘হুজুর কেললা’ গল্পের চরিত্র হুজুরের ব্যক্তিত্ব ও তাঁর সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে লিখ।

উত্তর:
‘হুজুর কেললা’ গল্পের হুজুর একজন জটিল চরিত্র হিসেবে উঠে এসেছেন, যিনি তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস ও সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি মেনে চলেন। তিনি সমাজের নিয়মকানুন রক্ষা করার পক্ষে থাকেন, কিন্তু তাঁর চিন্তা-ভাবনা অনেক সময় অসংলগ্ন ও সীমাবদ্ধ। হুজুর নিজেকে একটি মর্যাদাপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভাবেন, যার ওপর সমাজ নির্ভরশীল। তাঁর ‘কেললা’ বা বাড়ি, সমাজে একটি বিশেষ স্থান ও ক্ষমতার প্রতীক।

গল্পে হুজুরের মাধ্যমে লেখক আমাদের সমাজের এমন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন, যেখানে ধর্মীয় আধিপত্য ও সামাজিক শাসন মিলেমিশে এক ধরনের শক্তির জন্ম দেয়। হুজুর নিজে ধর্মীয় আচরণে কঠোর হলেও বাস্তবে তিনি অনেকসময় অবিচার ও অযৌক্তিক আচরণ করেন। সমাজের নিম্নবর্গের মানুষদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রাধানত ক্ষমতার বৈঠক বা নিয়ন্ত্রণমূলক।

অর্থাৎ, হুজুর চরিত্রটি সমাজের এমন শ্রেণিকে প্রতিফলিত করে, যারা নিজেদের স্বার্থ ও ধর্মীয় মর্যাদা রক্ষার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে। এই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে গল্পটি ধর্ম ও সমাজের সম্পর্ক নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে এবং পাঠককে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে।

প্রশ্ন ২:

‘হুজুর কেললা’ গল্পে লেখক কী সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থানের সমালোচনা করেছেন? তা বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:
‘হুজুর কেললা’ গল্পের মাধ্যমে আবুল মনসুর আহমদ সমাজ ও ধর্মের সম্পর্কের এক কঠিন বাস্তবতা আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন। গল্পে লেখক সামাজিক শ্রেণিবিভাজন এবং ধর্মের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনা করেছেন। হুজুর চরিত্রের মধ্য দিয়ে সমাজের এমন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে, যা ধর্মের লম্বায় সমাজকে শাসন করার চেষ্টা করে।

গল্পে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা এমনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যা দেখায়, কিভাবে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি হয় এবং ক্ষমতার এক ধরনের কুপ্রয়োগ হয়। হুজুর ও তাঁর ‘কেললা’ সমাজে একপ্রকার নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে নিম্নবর্গের মানুষদের ওপর আধিপত্য কায়েম রাখা হয়।

লেখক ধর্মের আড়ালে লুকানো অসঙ্গতি ও অসংলগ্নতা তুলে ধরেছেন, যা ধর্মীয় বিশ্বাসকে জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজে লাগানোর পরিবর্তে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যয় হয়। এই সমালোচনার মাধ্যমে গল্পটি সমাজে ধর্মের অবস্থান ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং পাঠকদের ঐতিহাসিক ও সাম্প্রতিক বাস্তবতার প্রতিফলন দেখতে সাহায্য করে।

সুতরাং, ‘হুজুর কেললা’ গল্পে লেখক সমাজ ও ধর্মের সম্পর্কের জটিলতা, ধর্মের অপব্যবহার এবং সামাজিক শ্রেণিবিভাজনের কুপ্রভাব নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ ও সমালোচনা করেছেন।

 

 

https://www.munshiacademy.com/হুজুর-কেবলা-গল্পের-ব্যাখ/

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *