🌺 ঠাকুরমার ঝুলি – দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার 🌺
📘 প্রথম প্রকাশ: ১৩১৪ বঙ্গাব্দ
📍 গ্রন্থকার: দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার
🖋️ ভূমিকা লিখেছেন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
📚 প্রকাশনায়: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ
✨ ভূমিকা
✍️ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
❝ ঠাকুরমার ঝুলিটির মত এত বড় স্বদেশী জিনিস আমাদের দেশে আর কি আছে? কিন্তু হায়! এই মোহন ঝুলিটিও ইদানীং ম্যাঞ্চেস্টারের কল থেকে তৈরি হয়ে আসছিল। এখনকার কালে বিলাতের “Fairy Tales” আমাদের ছেলেমেয়েদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠছিল। স্বদেশের দিদিমারা যেন একেবারে দেউলে হয়ে গেছেন।
✅ কোথায় রাজপুত্র পাত্তরের পুত্র,
✅ কোথায় বেঙ্গমা-বেঙ্গমী,
✅ কোথায় সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের রাজার ধন-মানিক!
🎭 পালা, পার্বণ, যাত্রা, গান, কথকতা—এই সমস্ত লোকঐতিহ্যও শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের মানুষের মধ্যে কঠোরতা, স্বার্থপরতা ও সংস্কারহীনতা ঢুকে পড়ছে।
📚 এখনকার পাঠ্যবইয়ের ভাষায় রূপকথার সুর বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু দক্ষিণারঞ্জনবাবু সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন। তিনি ঠাকুরমার মুখের কথা ছাপার অরে তুলে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যেন পাতাগুলো আজও সবুজ ও তাজা।
🎨 এই রূপকথার ভাষা, রীতি ও সরলতাকে বজায় রেখে তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর সূক্ষ্ম রসবোধ ও কলানৈপুণ্য।
📢 আমার প্রস্তাব—এখনই দেশের দিদিমাদের জন্য একটি বিদ্যালয় খোলা হোক এবং দক্ষিণারঞ্জনবাবুর এই বইখানি অবলম্বন করেই শিশুদের ঘুমপাড়ানি জগত ফিরিয়ে আনা হোক।
📅 রচনাস্থল ও সময়ঃ বোলপুর, ২০ ভাদ্র, ১৩১৪ বঙ্গাব্দ
🌸 গ্রন্থকারের নিবেদন
✍️ দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার
⛪ একদিন দেবালয়ে আরতির সুর থেমে যাওয়ার পর মা’র আঁচলে মাথা রেখে শুনছিলাম রূপকথা।
🌓 “জ্যোৎস্না ফুল ফুটেছে”—মা’র মুখের এই কথাতেই শুরু হয়েছিল সেই অলৌকিক রূপকথার রাজ্য। কত রাজপুত্র, রাজকন্যা, কত অচিনপুর—সব ফুটে উঠতো আমার শৈশব মনে!
📖 পাঠ্যবই পড়তে ঘুম পেতো, কিন্তু রূপকথা জাগিয়ে রাখতো রাতভর।
🏡 বাংলার প্রতিটি ঘরে ছিল রূপকথার আবেশ। মা, দিদি, ঠাকুমারা—ঘরের নারী মাত্রেই রূপকথা জানতেন। না জানলে যেন লজ্জার বিষয় ছিল।
🎨 এই বই তৈরির জন্য আমি নানা পল্লীগ্রামের বৃদ্ধাদের মুখে শোনা রূপকথাগুলো সংগ্রহ করেছি। বহু বছরের শ্রমে সেই বিচ্ছিন্ন রূপকথার কঙ্কালের উপর নির্মাণ করেছি এই ফুলমন্দির।
📘 বইয়ের প্রতিটি ছবিও আমি নিজে হাতে এঁকেছি। যাঁদের জন্য এই বই, তাঁরা যদি ছবি দেখে হাসেন, তাহলেই বুঝবো—আঁকাটা ঠিক হয়েছে।
🙏 এই বই প্রকাশের ক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয়ের উৎসাহ ও পরামর্শ আমার পথপ্রদর্শক হয়েছে। ছোট বোন বোন্টি খুঁটিনাটিতে সাহায্য করেছে। বন্ধু বিমলাকান্ত সেন মুদ্রণ বিষয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
📅 প্রথম প্রকাশঃ কলকাতা, ১৩১৪ বঙ্গাব্দ
🌼 উৎসর্গ
নীল আকাশে সূর্যিমামা ঝলক দিয়েছে,
সবুজ মাঠে নতুন পাতা গজিয়ে উঠেছে,
পালিয়ে ছিল সোনার টিয়ে ফিরে এসেছে,
ক্ষীর নদীটির পারে খোকন হাসতে লেগেছে,
হাসতে লেগেছে রে খোকন, নাচতে লেগেছে,
মায়ের কোলে চাঁদের হাট ভেঙে পড়েছে।
🎁 এই বই উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে থাকা মায়ের কোলে শুয়ে থাকা সেই খোকনকে, যে রূপকথার মধ্যে শৈশব খুঁজে পায়, স্বপ্ন দেখে এবং একদিন বড় হয়েও মনে রাখে তার মায়ের মুখের সেই রূপকথার সুর।