Charjapod - চর্যাপদ
Spread the love

📜 চর্যাপদ: প্রাচীন বাংলার আদি কবিতার ধারা

🔍 ভূমিকা

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে চর্যাপদ (চর্যাগীতি নামেও পরিচিত) একটি অনন্য স্থান দখল করে আছে। এগুলো মূলত বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের অংশ হিসেবে রচিত গানের সংগ্রহ। চর্যাপদের ভাষা, ভাব এবং রচনার ধরণ বাংলা ভাষার বিবর্তনের ইতিহাস বুঝতে সাহায্য করে। এই প্রবন্ধে আমরা চর্যাপদের উৎপত্তি, ভাষা, সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।

🏛️ চর্যাপদের আবিষ্কার

চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয় ১৯০৭ সালে, নেপালের রাজদরবারের একটি পুঁথির মধ্য দিয়ে। 🙏 ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ওই পুঁথিটি নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগারে খুঁজে পান এবং সেটিকে “চর্যাচর্যবিনিশ্চয়” নামে প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থটিতে ৮টি তিব্বতি ভাষায় লেখা টীকাও সংযুক্ত ছিল।

🧘 রচয়িতা ও সংখ্যা

চর্যাপদে মোট ৫০টি পদের উল্লেখ পাওয়া যায় (যদিও বর্তমান সময় ৪৭টি পদ পাওয়া যায় সম্পূর্ণভাবে)। এগুলোর রচয়িতা ছিলেন ২২ জন বৌদ্ধ সহজিয়া সাধক। উল্লেখযোগ্য কবিদের মধ্যে আছেন:

  • লুইপা
  • কুক্কুরীপা
  • বহোরি চন্ডীদাস
  • শবরপা
  • টিলোপা
  • ভুসুকুপা
  • দারিকাপা
  • কানুপা
  • সারহা (সরহপা)
  • ভদ্রপা

প্রতিটি পদে সাধকের নাম ও তাঁদের দীক্ষাগুরু বা আধ্যাত্মিক বংশগৌরবের উল্লেখ আছে।

🗣️ ভাষা ও রচনাশৈলী

চর্যাপদের ভাষা হল প্রাচীন অবহট্ঠ ভাষার উপর ভিত্তি করে গঠিত এক রূপান্তরধর্মী ভাষা, যেখানে প্রাকৃত, সংস্কৃত, এবং প্রাচীন বাংলা ভাষার মিল পাওয়া যায়। এই ভাষাকে অনেকেই “প্রাচীন বাংলা” বলে থাকেন।

✍️ চর্যাপদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর প্রতীকী ও গূঢ় ভাষা। সহজিয়া সাধকরা আধ্যাত্মিক চিন্তা ও অনুভবকে গোপনীয় রাখতে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বোধ্য রূপে উপস্থাপন করতেন। একে বলা হয় সন্ধ্যাকথা বা সাধক ভাষা

উদাহরণ:

বজ্রঘরে পদম ধরিয়া বল্লে কথা রহসিয়া।
— লুইপা

এই পদে ‘বজ্রঘর’, ‘পদ্ম’ প্রভৃতি শব্দ আধ্যাত্মিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

🌾 বিষয়বস্তু

চর্যাপদের বিষয়বস্তু মূলত:

  • আত্মশুদ্ধি ও মুক্তি
  • বৌদ্ধ তত্ত্ব (সহজিয়ান ও বজ্রযান ধারা)
  • জীবন ও দেহতত্ত্বের প্রতীকী ব্যাখ্যা
  • গুরু-শিষ্য সম্পর্ক
  • প্রেম, দেহতত্ত্ব ও যোগসাধনা

📚 সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব

চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন — এটাই বাংলা ভাষার লিখিত রূপে প্রথম ব্যবহার।
✅ ভাষার বিবর্তনের সাক্ষ্যবাহী — এতে প্রাচীন বাংলা শব্দরূপ, ক্রিয়ারূপ ও বাক্যগঠন বিশ্লেষণযোগ্য।
✅ সাহিত্যিক শৈলীতে আধ্যাত্মিকতা, প্রতীকবাদ এবং সংগীতধর্মিতা অনন্য।
✅ ইতিহাস, ধর্ম ও সমাজচিত্রের পরোক্ষ পরিচয় মেলে।

🗺️ ভূগোল ও বিস্তার

চর্যাপদের কবিরা ভারতের নানা অঞ্চল থেকে এসেছেন—গৌড় (বাঙাল), কামরূপ (অসম), উড়িষ্যা, মগধ, নেপাল ইত্যাদি অঞ্চল এদের রচনার পটভূমি।

🏁 উপসংহার

চর্যাপদ শুধু বাংলা সাহিত্যের সূচনা নয়, বরং বাংলা ভাষার ক্রমবিকাশের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এর মধ্যে নিহিত ভাব-ভাষা, রূপক, এবং আধ্যাত্মিক সাধনার মিশ্রণে বাংলা সাহিত্য এক ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এটি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের এক অমূল্য রত্ন।

 

📌 মূল তথ্যসূত্র:

  • হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, Charyacharyavinishchaya, ১৯০৭
  • সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, Origin and Development of the Bengali Language
  • দীনেশচন্দ্র সেন, History of Bengali Literature

 

 

 

https://www.munshiacademy.com/চর্যাপদ-প্রাচীন-বাংলার-আ/

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Specify Twitch Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitch Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *