আবুল মনসুর আহমদ : সাহিত্য, রাজনীতি ও বিদ্রূপের প্রতিভা


🖋️ আবুল মনসুর আহমদ : সাহিত্য, রাজনীতি ও বিদ্রূপের প্রতিভা

আবুল মনসুর আহমদ (৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৮ – ১৮ মার্চ ১৯৭৯) ছিলেন একজন বাংলাদেশি সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও ব্যঙ্গরচয়িতা। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক লেখক এবং যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচির অন্যতম প্রণেতা। সাহিত্য, রাজনীতি ও সাংবাদিকতা—এই তিন অঙ্গনে তাঁর অবদান সমানভাবে স্মরণীয়।


🏠 প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা

১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা আব্দুর রহিম ফরাজী, মাতা মীর জাহান খাতুন
তিনি ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক, ১৯১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইনশাস্ত্রে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন।


⚖️ কর্মজীবন : আইন, সাংবাদিকতা ও রাজনীতি

প্রথমে তিনি আইনজীবী হিসেবে ময়মনসিংহে কাজ শুরু করেন, পরে কলকাতায় সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন।
তিনি ইত্তেহাদ, নবযুগ, সুলতানমোহাম্মদী পত্রিকায় কাজ করেছেন।
১৯৪৬ সালে “ইত্তেহাদ” পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তিনি মুসলিম সমাজে প্রগতিশীল চেতনা ছড়িয়ে দেন।

রাজনীতিতে তিনি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলনের সহযোগী এবং পরে মুসলিম লীগ ও যুক্তফ্রন্ট রাজনীতির সক্রিয় কর্মী।
তিনি যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), শিক্ষামন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী (১৯৫৬-৫৭) ছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে (১৯৭৯) নির্বাচিত হন।


✍️ সাহিত্যকর্ম ও ব্যঙ্গরচনা

আবুল মনসুর আহমদ ব্যঙ্গরচনায় অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেন। তাঁর রচনায় সমাজের ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, ও রাজনৈতিক ভণ্ডামি তীক্ষ্ণ বিদ্রূপে উন্মোচিত হয়েছে।

প্রধান গ্রন্থসমূহ:

  • আয়না (১৯৩৬–৩৭)
  • ফুড কনফারেন্স (১৯৪৪)
  • গালিভারের সফরনামা
  • হুযুর কেবলা (১৯৩৫)
  • সত্য মিথ্যা (১৯৫৩)
  • জীবনক্ষুধা (১৯৫৫)
  • আসমানী পর্দা (১৯৬৪)
  • আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯)
  • আত্মকথা (১৯৭৩)
  • শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু (১৯৭২)

বাংলা একাডেমি তাঁর রচনাসমগ্র তিন খণ্ডে প্রকাশ করেছে।


🏅 পুরস্কার ও সম্মাননা

  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০)
  • নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক
  • স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৯, মরণোত্তর)

⚰️ মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর সাহিত্যকর্ম ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা আজও বাংলাদেশের সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করছে।
তিনি ছিলেন এমন এক চিন্তাবিদ, যিনি সাহিত্যকে ব্যবহার করেছেন জাতীয় চেতনা ও মুক্তবুদ্ধির বিকাশের হাতিয়ার হিসেবে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *