বাংলা ব্যাকরণের মৌলিক উপাদানসমূহ

Spread the love

📘 বাংলা ব্যাকরণের মৌলিক উপাদানসমূহ

🗣️ ভাষা

সংজ্ঞা:
ভাষা হলো চিন্তা, অনুভব, অভিপ্রায় ও বার্তা প্রকাশের মাধ্যম। এটি মৌখিক ও লিখিত উভয় রূপে হতে পারে।

বিশেষত্ব:

  • ভাষা সামাজিক ও মানসিক প্রকাশের প্রধান উপায়।
  • ভাষার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান, সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করে।

📜 সাধু ভাষা

সংজ্ঞা:
যে ভাষাশৈলীতে বাক্য গঠনে পূর্ণরূপে ক্রিয়া ও গাম্ভীর্য বজায় থাকে, তাকে সাধু ভাষা বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • ‘করিলা’, ‘গেলাম’, ‘খাইতেছে’ ইত্যাদি ক্রিয়ার রূপ ব্যবহৃত হয়।
  • সাহিত্যে গাম্ভীর্য, রুচি ও প্রাচীনতার ছাপ থাকে।
  • রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখ লেখকের রচনায় ব্যবহৃত।

উদাহরণ:
“আমি বিদ্যালয়ে গেলাম। সেখানে অনেক ছাত্র উপস্থিত ছিল।”

💬 চলিত ভাষা

সংজ্ঞা:
প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত সাধারণ কথ্য ভাষা, যা সরল ও গতিময়, তাকে চলিত ভাষা বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • ‘করেছি’, ‘গেছি’, ‘খাচ্ছে’ ইত্যাদি ক্রিয়ার রূপ ব্যবহৃত হয়।
  • আধুনিক সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বেশি প্রচলিত।
  • কাজী নজরুল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় ব্যবহৃত।

উদাহরণ:
“আমি স্কুলে গেছি। সেখানে অনেক ছাত্র ছিল।”

🏡 আঞ্চলিক ভাষা

সংজ্ঞা:
ভাষার যে রূপ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা এলাকার মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তাকে আঞ্চলিক ভাষা বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • একেক অঞ্চলের উচ্চারণ, শব্দ, বাক্যগঠন ভিন্ন হয়।
  • এটি মূল ভাষার উপভাষা বা রূপান্তর।
  • গ্রামীণ জীবন ও লোকসাহিত্যে বেশি ব্যবহৃত।

উদাহরণ:

  • চট্টগ্রামে: “তুই কই যাওঁ গা?”
  • রাজশাহীতে: “ক্যামনে আছস রে?”

🔁 তুলনামূলক চিত্র (ছোট টেবিল):

ভাষার ধরন ব্যবহার বৈশিষ্ট্য উদাহরণ বাক্য
সাধু ভাষা সাহিত্য, ভাষণ গাম্ভীর্যপূর্ণ, পূর্ণ ক্রিয়া আমি বিদ্যালয়ে গেলাম।
চলিত ভাষা দৈনন্দিন ব্যবহার, আধুনিক সাহিত্য সহজ, গতিময় আমি স্কুলে গেছি।
আঞ্চলিক ভাষা নির্দিষ্ট এলাকা স্থানভেদে ভিন্ন উচ্চারণ ও শব্দ তুই কই যাওঁ গা? (চট্টগ্রাম)

 

🔤 ১. অক্ষর (Letter):

🔹 যেসব চিহ্ন এককভাবে বা অন্য অক্ষরের সঙ্গে মিলিত হয়ে ধ্বনি প্রকাশ করে, সেগুলোকে অক্ষর বলে।

🔊 ২. ধ্বনি (Phoneme):

🔹 মানুষের মুখনিঃসৃত শব্দ বা শব্দাংশ, যা উচ্চারণের সময় শ্রুতিতে ধরা পড়ে, তাকে ধ্বনি বলে।
🔸 উদাহরণ: ক, ট, ম, ই

🅱️ ৩. বর্ণ (Alphabetic Sound):

🔹 ধ্বনির লিখিত রূপকে বর্ণ বলে।
🔸 ধ্বনি = শ্রুতিমূলক | বর্ণ = লিখিত রূপ

🔠 ৪. বর্ণমালা (Alphabet):

🔹 সকল বর্ণের একটি সুসংবদ্ধ সমষ্টিকে বর্ণমালা বলে।
🔸 বাংলা বর্ণমালায় মোট বর্ণ: ৫০+ (ভিন্ন মত বিদ্যমান)

 

🔍 ধ্বনিগত শ্রেণিবিন্যাস

📢 ৫. ঘোষ ধ্বনি (Voiced):

🔹 উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র স্পন্দিত হয় — এমন ধ্বনি।
🔸 উদাহরণ: গ, ড, দ, ন

🤐 ৬. অঘোষ ধ্বনি (Unvoiced):

🔹 উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র স্পন্দিত হয় না।
🔸 উদাহরণ: ক, খ, চ, ঠ

🫁 ৭. অল্পপ্রাণ ধ্বনি (Unaspirated):

🔹 উচ্চারণে কম বায়ুপ্রবাহ লাগে।
🔸 উদাহরণ: ক, ট, ত

🌬️ ৮. মহাপ্রাণ ধ্বনি (Aspirated):

🔹 উচ্চারণে বেশি বায়ুপ্রবাহ লাগে।
🔸 উদাহরণ: খ, ঠ, থ

👃 ৯. নাসিক্য ধ্বনি (Nasal):

🔹 যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস নাক দিয়ে বের হয়।
🔸 উদাহরণ: ঙ, ঞ, ণ, ন, ম

🌀 ১০. শিসধ্বনি (Sibilant):

🔹 যেসব ধ্বনি উচ্চারণে শিসের মতো শব্দ হয়।
🔸 উদাহরণ: শ, ষ, স

 

🗣️ উচ্চারণস্থলভিত্তিক বর্ণ শ্রেণি

🦷 ১১. দন্ত্য বর্ণ (Dental):

🔹 যেসব বর্ণ উচ্চারণে দাঁতের সংস্পর্শে জিহ্বা লাগে।
🔸 উদাহরণ: ত, থ, দ, ধ, ন

👅 ১২. তালব্য বর্ণ (Palatal):

🔹 জিহ্বার আগা তালুর সঙ্গে সংস্পর্শে যে ধ্বনি হয়।
🔸 উদাহরণ: চ, ছ, জ, ঝ, ঞ

🧠 ১৩. মূর্ধন্য বর্ণ (Retroflex):

🔹 জিহ্বার অগ্রভাগ মূর্ধার সঙ্গে সংস্পর্শ করে যেসব ধ্বনি হয়।
🔸 উদাহরণ: ট, ঠ, ড, ঢ, ণ

🧏 ১৪. কণ্ঠ্য বর্ণ (Guttural):

🔹 গলার পেছন দিক থেকে উচ্চারিত ধ্বনি।
🔸 উদাহরণ: ক, খ, গ, ঘ, ঙ

🫦 ১৫. ওষ্ঠ্য বর্ণ (Labial):

🔹 ঠোঁট ব্যবহার করে উচ্চারিত বর্ণ।
🔸 উদাহরণ: প, ফ, ব, ভ, ম

🌫️ ১৬. আনুনাসিক ধ্বনি (Semi-nasal):

🔹 মুখ ও নাসারন্ধ্র — উভয় পথে বাতাস প্রবাহিত হয়।
🔸 উদাহরণ: ঙ, ঞ, ণ, ন, ম (নাসিক্য ধ্বনির অন্তর্ভুক্ত)

 

 

https://www.munshiacademy.com/বাংলা-ব্যাকরণের-মৌলিক-উপ/

 

♣ স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ। শুদ্ধ উচ্চারণ। স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সঠিক উচ্চারণ। Bangla Bornomala। বর্ণ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *