⭐ ঘুমন্ত পুরী
(ঠাকুরমার ঝুলি | Ghumonto Puri | Thakurmar Jhuli Bangla Rupkotha | মুনশির কণ্ঠে গল্প)
🌿 গল্প
এক দেশে ছিল এক অদ্ভুত রাজ্য—নামের ঘুমন্ত পুরী। দিনের বেলায় যেমন-তেমন, কিন্তু রাত নামলেই পুরো রাজ্য এক গভীর জাদুর ঘুমে ঢেকে যেত। রাজা-রানী, প্রজারা, পথের কুকুর থেকে শুরু করে পাখিরাও—সবাই নিদ্রাহীন ঘুমে পড়ে থাকত। কেবল একটি মেয়ে জেগে থাকত—রাজকন্যা চন্দ্রাবতী। তাকে এ ঘুম ছুঁতে পারত না।
রাজকন্যা ভাবত, “এই জাদু ঘুম কে দিল? আর কবে শেষ হবে?”
একদিন সে সাহস করে প্রাসাদের গোপন কক্ষে রাখা পুরনো বই ঘেঁটে ঘেঁটে এক সত্য জানল—
ঘুমন্ত পুরীর উপর এক অভিশাপ আছে।
অনেক বছর আগে দুষ্ট জাদুকর রাজাকে শাস্তি হিসেবে এই অভিশাপ দেয়। অভিশাপ ভাঙবে শুধুমাত্র তখনই—যখন কোনো “নির্ভীক হৃদয়”—জাদুকরের কুঠিরে গিয়ে তার দুষ্ট জাদুর প্রদীপ নিভিয়ে আসবে।
রাজকন্যা সিদ্ধান্ত নিল—এ কাজ সে-ই করবে। সে রাতের অন্ধকারে রাজ্যের বাইরে নিষিদ্ধ বনে প্রবেশ করল। বন ভরা ভয়ঙ্কর জন্তু, অদ্ভুত শব্দ, আর জাদু। কিন্তু সে থামল না।
বনের গভীরে জাদুকরের কুটির দেখতে পেল। দরজায় লেখা—
“যে ভীত হয়, সে প্রবেশ করো না।”
চন্দ্রাবতী মৃদু হাসল,
— “ভয় তো আমাকেই ঘুম পাড়াতে পারে না।”
ভেতরে ঢুকে সে দেখল প্রদীপটি অলৌকিক আলো জ্বালিয়ে ঝিলমিল করছে। প্রদীপ নিভানোর মুহূর্তে জাদুকর এসে বাধা দিতে চাইল, কিন্তু মেয়েটির সাহস তার জাদুকে টেকাতে পারল না। শেষ শক্তি দিয়ে রাজকন্যা প্রদীপটি নিভিয়ে ফেলল।
মুহূর্তেই অভিশাপ ভেঙে গেল। পুরো রাজ্যে জেগে উঠল মানুষ। আনন্দে রাজদরবার মুখর হয়ে উঠল। রাজা-রানী তাদের মেয়েকে আলিঙ্গন করলেন।
রাজকন্যা বলল,
— “সাহসই হচ্ছে ঘুম ভাঙানোর প্রদীপ।”
সেদিন থেকে ঘুমন্ত পুরী আবার হলো এক সুখী, জাগ্রত রাজ্য।
⭐ নীতি
সাহসী হৃদয় যে কোনো অন্ধকার ও অভিশাপ জয় করতে পারে। ভয়কে জয় করলেই মুক্তি আসে।
