হুমায়ুন আজাদ: প্রথাবিরোধী মননের দীপ্ত প্রতীক

Spread the love

✿✿✿ হুমায়ুন আজাদ: প্রথাবিরোধী মননের দীপ্ত প্রতীক ✿✿✿

প্রথাবিরোধী লেখক, কবি ও ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ সমাজের কুসংস্কার, মৌলবাদ ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর ও চিন্তার আলো।
প্রথাবিরোধী লেখক, কবি ও ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ সমাজের কুসংস্কার, মৌলবাদ ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর ও চিন্তার আলো।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রথাবিরোধী, যুক্তিবাদী ও সাহসী লেখক ড. হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, ভাষাবিজ্ঞানী, ঔপন্যাসিক, সমালোচক ও কিশোরসাহিত্যিক। তাঁর লেখনীতে সমাজের কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও রাজনৈতিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ প্রতিফলিত হয়েছে।  তাঁর লেখায় সাহস, যুক্তিবাদ, মানবিকতা ও বিদ্রোহী মনোভাব পাশাপাশি স্থান পেয়েছে।  ভাষার শুদ্ধতা ও সৌন্দর্য রক্ষায় তাঁর অবদান অসামান্য।  মৌলবাদ, কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ছিলেন নির্ভীক যোদ্ধা।  ভাষাবিজ্ঞানে তাঁর গবেষণা বাংলা সাহিত্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তিনি ছিলেন এক নিখাদ মননের আলো, যাঁর কলম আজও আলোকবর্তিকা হয়ে প্রজন্মকে জাগিয়ে তোলে।

🏡 জন্ম ও শৈশব

ড. হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুর রাশেদ এবং মাতার নাম জোবেদা খাতুন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৬২ সালে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (১৯৬৭) ও স্নাতকোত্তর (১৯৬৮) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

🎓 শিক্ষকতা ও পেশাগত জীবন

ড. আজাদ ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।

📚 সাহিত্যকর্ম

ড. হুমায়ুন আজাদের সাহিত্যকর্মের পরিসর বিস্তৃত। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭০টিরও বেশি। এর মধ্যে রয়েছে ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ এবং ৮টি কিশোরসাহিত্য।

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

  • অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩) – প্রথম কাব্যগ্রন্থ
  • নারী (১৯৯২) – নারীবাদী গবেষণামূলক প্রবন্ধ
  • সব কিছু ভেঙে পড়ে (১৯৯৫) – আধুনিক জীবনবাদী উপন্যাস
  • পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪) – রাজনৈতিক উপন্যাস
  • আব্বুকে মনে পড়ে – কিশোরসাহিত্য, যা জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে

🖋 ভাষাবিজ্ঞান ও গবেষণা

ড. আজাদ বাংলা ভাষার বাক্যতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করে আধুনিক ভাষাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূচনা করেন। তাঁর পিএইচডি গবেষণার শিরোনাম ছিল “Pronominalisation in Bangla”। তিনি ‘বাক্যতত্ত্ব’ ও ‘বাঙলা ভাষা’ শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন।

⚔️ আক্রমণ ও মৃত্যু

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে ফেরার পথে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা ড. আজাদের ওপর হামলা চালায়। তিনি গুরুতর আহত হন এবং পরে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন। ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট তিনি জার্মানিতে গবেষণার জন্য যান এবং ১২ আগস্ট মিউনিখে তাঁর মৃত্যু হয়।

🏆 পুরস্কার ও স্বীকৃতি

  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৬)
  • অগ্রণী ব্যাংক-শিশু সাহিত্য পুরস্কার
  • মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার
  • মরণোত্তর একুশে পদক (২০১২)

🕊️ উত্তরাধিকার

ড. হুমায়ুন আজাদ ছিলেন এক সাহসী ও আপসহীন লেখক, যিনি সমাজের কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। তাঁর লেখনী আজও পাঠকদের প্রেরণা জোগায় এবং যুক্তিবাদী চিন্তার পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হয়।

✿✿✿ তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ✿✿✿

 

 

 

https://www.munshiacademy.com/হুমায়ুন-আজাদ-প্রথাবিরো/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *