📜সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ – ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য প্রতিভা, যিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ ও গীতিকবিতাসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় সমান দক্ষতায় কাজ করেছেন। তাঁর বহুমাত্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য তাঁকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়ে থাকে। সৈয়দ শামসুল হক বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য বহুমাত্রিক প্রতিভা। তিনি ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। “আমার পরিচয়, আমি বাংলার কবি”—এই চিরস্মরণীয় উক্তিতে তার সাহিত্যিক অবস্থান স্পষ্ট। তাঁর লেখায় মুক্তিযুদ্ধ, মানবতা ও রাজনৈতিক বাস্তবতা গভীরভাবে প্রতিফলিত। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে তার নাটক ও কাব্য নতুন মাত্রা এনেছে। তিনি আধুনিক বাংলা নাট্যরীতির পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। সামাজিক অসঙ্গতি, প্রেম-বিরহ ও মানবচেতনার বিষয়ে তিনি ছিলেন দক্ষ গল্পকার। “নিষিদ্ধ লোবান”, “পরাণের গহীন ভিতর” সহ বহু কালজয়ী রচনা তার সৃষ্টি। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলা সাহিত্যের আকাশে তিনি চিরকাল উজ্জ্বল এক নক্ষত্র।
—
🌿 জন্ম ও শৈশব
কুড়িগ্রাম জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ শামসুল হক। তাঁর পিতা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, এবং মাতা হালিমা খাতুন। তিনি ছিলেন আট ভাই-বোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম।
—
📚 শিক্ষা ও সাহিত্যজীবনের সূচনা
শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে, পরে কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কসসহ ম্যাট্রিক পাস করেন। পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ১৯৫১ সালে বম্বে যান এবং সেখানে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫২ সালে দেশে ফিরে জগন্নাথ কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়ন করেন, যদিও স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনা হয় ১৯৫১ সালে ‘অগত্যা’ পত্রিকায় “উদয়াস্ত” গল্প প্রকাশের মাধ্যমে।
—
✍️ সাহিত্যকর্ম
সৈয়দ শামসুল হকের সাহিত্যকর্মের পরিধি বিশাল ও বৈচিত্র্যময়।
কবিতা:
‘একদা এক রাজ্যে’ (১৯৬১)
‘বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা’ (১৯৬৯)
‘বিরতিহীন উৎসব’ (১৯৬৯)
‘পরাণের গহীন ভিতর’ (১৯৮০)
উপন্যাস:
‘এক মহিলার ছবি’ (১৯৫৯)
‘নিষিদ্ধ লোবান’ (১৯৯০)
‘খেলারাম খেলে যা’ (১৯৯১)
নাটক:
‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’
‘নুরলদীনের সারাজীবন’
‘গণনায়ক’
অনুবাদ:
শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’, ‘দ্য টেম্পেস্ট’ এবং ‘ট্রয়লাস অ্যান্ড ক্রেসিডা’।
গীতিকবিতা:
“হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস”
“জার ছায়া পড়েছে মনের আয়নায়”
—
🏆 পুরস্কার ও সম্মাননা
তাঁর সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন:
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬)
একুশে পদক (১৯৮৪)
স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০০)
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (চিত্রনাট্য ও সংলাপের জন্য)
প্রেমচাঁদ ফেলোশিপ, সাহিত্য অকাদেমি, ভারত (২০১০)
—
👨👩👧👦 ব্যক্তিগত জীবন
তিনি প্রথিতযশা লেখিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
—
🕯️ মৃত্যু
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, ৮০ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
—
🌟 উত্তরাধিকার
সৈয়দ শামসুল হক বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর রচনাসমূহ আজও পাঠকপ্রিয় এবং বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান