🌟 সৈয়দ আলী আহসান : জীবন ও সাহিত্যকর্ম

👶 জীবন ও পরিবার
সৈয়দ আলী আহসান (২৬ মার্চ ১৯২২ – ২৫ জুলাই ২০০২) ছিলেন একজন প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যসমালোচক, অনুবাদক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। তিনি জন্মগ্রহণ করেন মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে, এক প্রাচীন সুফি পরিবারে। তাঁর পিতা সৈয়দ আলী হামেদ ছিলেন সরকারি স্কুল পরিদর্শক এবং মাতা সৈয়দা কামরুন্নেসা খাতুন ছিলেন এক ধর্মপ্রাণ সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।
🎓 শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন
শৈশবে তিনি পড়াশোনা করেন ঢাকার আরমানিটোলা স্কুলে এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। প্রথমে হুগলি ইসলামিয়া কলেজে, এরপর অল ইন্ডিয়া রেডিওতে এবং পরে রেডিও পাকিস্তানে কাজ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। পরবর্তীকালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, এবং ডারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ‘জাতীয় অধ্যাপক’ হিসেবে সম্মানিত হন।
✍️ সাহিত্য ও সৃজনশীলতা
সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। তাঁর লেখায় রয়েছে দেশপ্রেম, সুফিবাদ, সংস্কৃতির সম্মিলন এবং ভাষা ও জাতিসত্তার স্বরূপ অন্বেষণের স্পষ্ট প্রতিফলন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:
📘 একক সন্ধ্যায় বসন্ত
📘 আমার পূর্ববাংলা
📘 অনেক আকাশ
📘 রাত্রির নীচে সূর্য
📘 পূর্ব পশ্চিম
তিনি বাংলা ভাষার উন্নয়নে অনুবাদ সাহিত্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর অনুবাদে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ইকবাল প্রমুখের সাহিত্য নতুন মাত্রা পেয়েছে।
তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সরকার স্বীকৃত ইংরেজি অনুবাদকও ছিলেন।
🏅 সম্মাননা ও অবদান
সৈয়দ আলী আহসান পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কার। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংগঠন ও সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ফরাসি সরকার তাঁকে সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করে।
🇧🇩 মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ‘চেনা কণ্ঠ’ ছদ্মনামে স্বাধীন বাংলা বেতারে অংশ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে সাহসী ভূমিকা রাখেন।
✅ উপসংহার
সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি যেমন একজন শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন, তেমনি ছিলেন জাতির বিবেকস্বরূপ একজন বিদ্বান চিন্তক। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান তাঁকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ে চিরকাল অম্লান রাখবে।
https://www.munshiacademy.com/সৈয়দ-আলী-আহসান-জীবন-ও-সাহ/