সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য

Spread the love

সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য

 

বাংলা ভাষার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম প্রধান দুই রূপ হলো সাধু ভাষা এবং চলিত ভাষা। বাংলা সাহিত্য ও ভাষাবিজ্ঞান ক্ষেত্রে এই দুই রূপের গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় এই দুই ভাষার পার্থক্য বোঝা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ এটি ভাষার প্রকৃতি, ব্যবহার, রূপ এবং সামাজিক প্রয়োগ সম্পর্কে গভীর ধারণা প্রদান করে।

১. ভাষার সংজ্ঞা ও ব্যবহার ক্ষেত্র

সাধু ভাষা হলো বাংলা ভাষার ঐতিহ্যবাহী, আনুষ্ঠানিক এবং গম্ভীর রূপ। এটি মূলত সংস্কৃত ও প্রাচীন বাংলার শব্দভাণ্ডার ও ব্যাকরণ অনুসরণ করে গড়ে উঠেছে। সাধু ভাষার ব্যবহার সাধারণত সাহিত্য, ধর্মীয় গ্রন্থ, গৌরবময় রচনা এবং উচ্চাঙ্গের আলোচনা-আলোচনায় হয়ে থাকে। বিশেষ করে কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক ইত্যাদিতে এর ব্যবহার দেখা যায়।

অপরদিকে, চলিত ভাষা হলো দৈনন্দিন জীবনের কথ্য ভাষা, যা সহজ ও সাবলীল। এটি সাধারণ মানুষের কথোপকথনে, ব্যবসায়িক লেনদেনে, বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপচারিতায় এবং সামাজিক যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়। চলিত ভাষায় জটিলতা থাকে না, তাই এটি সকল শ্রেণির মানুষের জন্য সহজে গ্রহণযোগ্য।

২. শব্দচয়ন ও ব্যাকরণ

সাধু ভাষায় শব্দ নির্বাচন হয় বিশেষ যত্ন নিয়ে; এতে বেশি থাকে সংস্কৃত ও বিদগ্ধ শব্দ। বাক্য গঠন হয় অলঙ্কৃত ও দীর্ঘ, যার ফলে অর্থ ও ভাববোধ প্রকাশে তা গম্ভীর ও মহিমাময় হয়। যেমন, সাধু ভাষায় বলা হয়,
“আমি তোমার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করি।”

চলিত ভাষায় শব্দ হয় সাধারণ, সহজ ও পরিচিত। বাক্য গঠন স্বাভাবিক ও সংক্ষিপ্ত হয়। চলিত ভাষায় একই বাক্য হয়,
“আমি তোমাকে অনেক সম্মান করি।”

৩. উচ্চারণ ও ছন্দ

সাধু ভাষার উচ্চারণ নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে ধীরে ও স্পষ্ট, যেখানে সুর ও ছন্দের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। চলিত ভাষা উচ্চারণে সহজ ও দ্রুত, যা কথোপকথনের গতিকে প্রভাবিত করে। সাধু ভাষার গম্ভীর স্বর ও ছন্দ সাধারণত কবিতা ও গীতিকবিতায় বেশি ব্যবহৃত হয়।

৪. ব্যবহার ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

সাধু ভাষা শিক্ষিত সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিমণ্ডল এবং আনুষ্ঠানিক লেখালেখিতে ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষ মর্যাদা ও গরিমার প্রতীক। চলিত ভাষা বিভিন্ন সামাজিক স্তরে সহজে বোধগম্য হওয়ায় সকল মানুষের জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত।

৫. পারস্পরিক সম্পর্ক ও বাংলা ভাষার বিকাশে ভূমিকা

সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা উভয়ই বাংলা ভাষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। চলিত ভাষার সরলতা ও প্রাণবন্ততা সাহিত্যে সাধারণ মানুষের মনোজগৎকে তুলে ধরে, আবার সাধু ভাষার অলঙ্কার ও গম্ভীরতা সাহিত্যকে উচ্চাঙ্গে উন্নীত করে। ভাষার এই দ্বৈত রূপ বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ ও বহুমাত্রিক করেছে।

বাংলা ভাষার সাধু ও চলিত ভাষা দুটি ভিন্ন রূপ হলেও তারা পরস্পরের পরিপূরক। সাধু ভাষা ভাষার ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক, যেখানে চলিত ভাষা জীবনের সরলতা ও বাস্তবতার প্রকাশ। এই দুই ভাষার সঠিক জ্ঞান ও ব্যবহার শিক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং তাদের সাহিত্যবোধকে

 

নিচে সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার পার্থক্য টেবিল আকারে দেওয়া হলো:

বিষয় সাধু ভাষা চলিত ভাষা
সংজ্ঞা ও ব্যবহার ক্ষেত্র আনুষ্ঠানিক, গম্ভীর ও ঐতিহ্যবাহী ভাষা; সাহিত্য, ধর্মীয় গ্রন্থ ও গুরত্বপূর্ণ আলোচনায় ব্যবহৃত দৈনন্দিন কথ্য ভাষা; সহজ, সাবলীল ও সামাজিক যোগাযোগে ব্যবহৃত
শব্দচয়ন সংস্কৃত ঋণাত্মক শব্দ ও বিদগ্ধ শব্দ ব্যবহৃত সহজ, সাধারণ ও পরিচিত শব্দ ব্যবহৃত
বাক্য গঠন দীর্ঘ, অলঙ্কৃত ও গম্ভীর স্বাভাবিক, সংক্ষিপ্ত ও সহজ
উচ্চারণ ও ছন্দ ধীর, স্পষ্ট ও ছন্দবদ্ধ দ্রুত, সহজ ও স্বাভাবিক
সামাজিক প্রেক্ষাপট শিক্ষিত, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক মহলে ব্যবহৃত সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গৌরবময়, মর্যাদাপূর্ণ ভাব প্রকাশ সহজবোধ্য, দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ
ব্যবহারের ক্ষেত্র কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, ধর্মীয় গ্রন্থ কথোপকথন, ব্যবসায়িক লেনদেন, বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপ
উদাহরণ “আমি তোমার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করি।” “আমি তোমাকে অনেক সম্মান করি।”
ভাষার ধরন স্থির, নিয়ম-কানুন অনুসৃত জীবন্ত, পরিবর্তনশীল ও কথ্য ভাষা
সাহিত্যিক গুরুত্ব উচ্চাঙ্গ সাহিত্য তৈরিতে প্রধান ভূমিকা কথ্য সাহিত্য ও আধুনিক সাহিত্য রচনায় ব্যবহৃত

https://www.munshiacademy.com/সাধু-ও-চলিত-ভাষার-পার্থক্/

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *