প্রবন্ধের মূলভাব ও লেখকের উপলব্ধি
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর “সভ্যতার সংকট” প্রবন্ধটি আধুনিক সমাজে সভ্যতার ধ্বংস এবং মানুষের চিন্তাহীনতা নিয়ে গভীর দর্শনাত্মক ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ। লেখক আমাদের সচেতন করতে চেয়েছেন যে, সভ্যতার প্রকৃত ভিত্তি কোনো বাহ্যিক উন্নতি, যান্ত্রিক অগ্রগতি বা আরাম-প্রাচুর্য নয়; বরং চিন্তা ও বুদ্ধির চর্চা, নৈতিকতা, সত্য ও বিবেক–এর উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
লেখকের প্রধান উপলব্ধি
- চিন্তা চর্চা সভ্যতার মূল ভিত্তি:
লেখক ব্যাখ্যা করেছেন, মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো চিন্তা করার ক্ষমতা। পশুপাখি যেমন স্বাভাবিক প্রজননের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, মানুষের চিন্তা–বুদ্ধি এবং নৈতিক চেতনা তাঁকে সভ্যতার উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। সভ্যতার প্রথম সোপান হলো চিন্তাশীল হওয়া, চিন্তার অভ্যাস ও বুদ্ধি চর্চা। - আধুনিক সভ্যতা শুধু বাহ্যিক অগ্রগতি নয়:
লেখক দেখিয়েছেন, আজকের সভ্যতা প্রায়শই উপকরণ-প্রাচুর্য, গতি ও যান্ত্রিক অগ্রগতির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এসব মানুষের মন, হৃদয়, চরিত্র এবং নৈতিকতা বিকাশে কার্যকর হয় না; বরং অতিরিক্ত আরাম ও যান্ত্রিকতা মানুষের চিন্তাশক্তি ও নৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে। - চিন্তাহীনতার মারাত্মক বিপদ:
লেখক সতর্ক করেছেন, চিন্তাহীন মানুষ সহজেই প্রলোভন, মিথ্যা বা ক্ষমতাসীনদের স্বার্থপরতা বিশ্বাস করে। ফলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র সবক্ষেত্রেই নীতিভ্রষ্ট হয়ে যায়। হিরোশিমা ও নাগাসাকি এমনই এক চরম পরিণতির উদাহরণ। - মানবিক মূল্যবোধ ও বিবেকের ক্ষয়:
লেখক উপলব্ধি করেছেন যে, সত্য, ন্যায়, নৈতিকতা ও জীবনদর্শন ছাড়া আধুনিক সভ্যতা মানুষের জন্য বিপজ্জনক। বিবেকী না হলে মানুষ যান্ত্রিক সভ্যতার মধ্যে হারিয়ে যায় এবং ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের চরম ক্ষয় ঘটে। - চিন্তা ও নৈতিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা:
লেখকের মূল তাগিদ হলো, মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে হলে মানুষকে চিন্তা করতে শেখাতে হবে, বিবেক ও নৈতিকতা চর্চার মাধ্যমে সত্যের অনুসন্ধান করতে হবে। কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের স্থায়ী উন্নতি ও সমৃদ্ধি কেবল এ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সারসংক্ষেপ মূলভাব
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর “সভ্যতার সংকট” প্রবন্ধে দেখা যায় যে, আধুনিক সভ্যতা বাহ্যিক অগ্রগতি ও যান্ত্রিক উৎকর্ষের দ্বারা নয়, বরং চিন্তা, বুদ্ধি, নৈতিকতা ও বিবেকের ভিত্তিতে স্থির থাকে। চিন্তাহীনতা, নৈতিক ক্ষয় এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সভ্যতার সবচেয়ে বড় সংকট। সভ্যতার সঠিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের নিজস্ব চিন্তা ও বিবেককে সক্রিয় করা অপরিহার্য।
