📚 নাম: সভ্যতার সংকট সভ্যতার সংকট
✒️লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
🕊️ধরন: প্রবন্ধ / রাজনৈতিক দর্শন
✒️ প্রকাশকাল: ১৯৪১ সাল (লেখকের মৃত্যুর ঠিক আগে)
🔍 প্রেক্ষাপট: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল, উপনিবেশিক শাসনের চরম পর্যায়

📝 সভ্যতার সংকট প্রবন্ধের অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (১ নম্বর)
❶ 🌀 ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধটি কে লিখেছেন?
🔹 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
❷ 🌀 ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধটি প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়?
🔹 বিশ্বভারতী পত্রিকায়।
❸ 🌀 রবীন্দ্রনাথ ‘সভ্যতা’ বলতে কী বোঝান?
🔹 মানবিক মূল্যবোধে গঠিত নৈতিক চরিত্র।
❹ 🌀 রবীন্দ্রনাথ কোন সভ্যতাকে সংকটগ্রস্ত বলেন?
🔹 পাশ্চাত্য তথা ইংরেজি সভ্যতা।
❺ 🌀 ‘Law and Order’ রবীন্দ্রনাথ কী অর্থে বলেছেন?
🔹 উপনিবেশিক শাসনের দমনমূলক শৃঙ্খলা।
❻ 🌀 রবীন্দ্রনাথ কোন দুটি দেশের উদাহরণ দেন বিকল্প সভ্যতার জন্য?
🔹 জাপান ও সোভিয়েত রাশিয়া।
❼ 🌀 রবীন্দ্রনাথ সভ্যতার সংকট কোথায় অনুভব করেছিলেন?
🔹 ইংরেজ উপনিবেশিক শাসনে।
❽ 🌀 রবীন্দ্রনাথের মতে সভ্যতার প্রকৃত উৎস কোথায়?
🔹 চরিত্র ও মানবতা।
📘 সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (৫ নম্বর)
❶ 🌿 ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজি সভ্যতার কী স্বরূপ তুলে ধরেছেন?
🔹 রবীন্দ্রনাথ এই প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, ইংরেজি সভ্যতা প্রযুক্তিগত উন্নতির মুখোশে লুকিয়ে থাকা এক শোষণমূলক, দমনমূলক ও আত্মবিরোধী ব্যবস্থা। এটি মানুষে মানুষে সম্পর্ককে ধ্বংস করে এবং উপনিবেশিক শাসনের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী কার্যকলাপকে সভ্যতার নামে প্রতিষ্ঠিত করে।
❷ 🌿 ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ কোন সভ্যতার পক্ষে সওয়াল করেন?
🔹 তিনি এমন একটি সভ্যতার পক্ষে সওয়াল করেন, যার মূল ভিত্তি মানবতা, নৈতিকতা ও আত্মমর্যাদা। এই সভ্যতা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে নৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের আন্তঃসম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়।
❸ 🌿 ‘Law and Order’ কথাটির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ কী ব্যঙ্গ প্রকাশ করেছেন?
🔹 রবীন্দ্রনাথ ব্যঙ্গের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন, ইংরেজদের তথাকথিত ‘Law and Order’ শুধু শাসন ও শোষণের মাধ্যম। এটি স্বাধীনতা হরণ করে এবং জনগণের মানবিক অধিকারকে পদদলিত করে।
❹ 🌿 রবীন্দ্রনাথ সভ্যতার বিকল্প কোথায় দেখেছেন?
🔹 তিনি জাপান ও সোভিয়েত রাশিয়ায় এমন সভ্যতার বিকল্প দেখেছেন, যেখানে প্রযুক্তি ও মানবতা পরস্পরের বিরোধী নয় বরং সম্পূরক।
🌟 মূলভাব:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে তিনি পশ্চিমা, বিশেষত ইংরেজি সভ্যতার অন্তঃসারশূন্যতা ও নৈতিক পতন গভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ যুক্তি দিয়ে দেখান যে, পাশ্চাত্য সভ্যতা বহিরাঙ্গিক উন্নয়ন ও বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষে যতই উন্নত হোক না কেন, এর ভিতরে রয়েছে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকট। ইংরেজ শাসকরা ‘সভ্যতা’র নামে ভারতকে দমন করে, তার স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদাকে পদদলিত করে; অথচ প্রকৃত সভ্যতা হওয়া উচিত মানবিক গুণ, সহমর্মিতা ও নৈতিক শক্তির বিকাশ। সভ্যতার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষে মানুষে সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় করা, অর্থ-লোভ নয় বরং চরিত্রবোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তিনি জাপান ও সোভিয়েত রাশিয়ার উদাহরণ দিয়ে দেখান, প্রযুক্তি ও মানবতার সহাবস্থান সম্ভব। অতএব, রবীন্দ্রনাথ আমাদের আহ্বান জানান, যেন আমরা বাহ্যিক জৌলুসের মোহ ত্যাগ করে অন্তরের আদর্শ ও মূল্যবোধকে সভ্যতার কেন্দ্রস্থলে স্থাপন করি। এটাই এই প্রবন্ধের গভীর মানবতাবাদী বার্তা।
🎓 ডিগ্রি ২য় বর্ষ উপযোগী আরও কিছু প্রশ্নোত্তর:
🔹 প্রশ্ন ১: সভ্যতা বলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী বোঝাতে চেয়েছেন?
🔸 উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, সভ্যতা মানে কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বা বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন নয়; বরং সভ্যতা হল মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিক চরিত্র, মমত্ববোধ ও পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধের উন্নয়ন।
🔹 প্রশ্ন ২: ইংরেজ সভ্যতার সংকট কীভাবে রবীন্দ্রনাথ উপস্থাপন করেছেন?
🔸 উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজ সভ্যতাকে অন্তঃসারশূন্য, অহংকারী ও শোষণমুখী সভ্যতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ সভ্যতা মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে এবং মানবতার অপমান করে।
🔹 প্রশ্ন ৩: সভ্যতার সংকট প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ কাকে সতর্ক করেছেন এবং কেন?
🔸 উত্তর: তিনি ভারতবাসীকে সতর্ক করেছেন, যাতে পাশ্চাত্য সভ্যতার বাহ্যিক চাকচিক্যে বিভ্রান্ত হয়ে নিজের মূল্যবোধ বিসর্জন না দেয়। তিনি বলেন, আত্মমর্যাদা ও মানবিক গুণ বজায় রাখা সভ্যতার প্রধান লক্ষণ।
🔹 প্রশ্ন ৪: রবীন্দ্রনাথ ‘মানুষের ধর্ম’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
🔸 উত্তর: ‘মানুষের ধর্ম’ বলতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন মানবিক গুণাবলি, যেমন: সহানুভূতি, সহমর্মিতা, আত্মত্যাগ, সততা ও ভালোবাসা— যা প্রকৃত সভ্যতাকে গঠিত করে।
🔹 প্রশ্ন ৫: রবীন্দ্রনাথ সভ্যতার ভবিষ্যৎ নিয়ে কী মত প্রকাশ করেছেন?
🔸 উত্তর: তিনি আশাবাদী যে, এই সংকট কাটিয়ে সভ্যতা মানবিক রূপে ফিরে আসবে। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রকৃত সভ্যতা সেই, যা মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেয়, ক্ষমতার বাহাদুরি নয়।
🔹 প্রশ্ন ৬: সভ্যতার সংকটে রবীন্দ্রনাথ কোন দুটি সভ্যতার তুলনা করেছেন?
🔸 উত্তর: তিনি ইংরেজ সভ্যতার সাথে জাপান ও রাশিয়ার (সোভিয়েত) সভ্যতার তুলনা করেছেন। জাপান ও রাশিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে পারে।
🔹 প্রশ্ন ৭: রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ শাসকদের কোন ‘ভুল ধারণা’ সম্পর্কে কথা বলেছেন?
🔸 উত্তর: তিনি বলেন, ইংরেজরা মনে করত তারা ভারতকে সভ্য করছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা শাসন ও শোষণের মাধ্যমে মানবতার অপমান করেছে।
🔹 প্রশ্ন ৮: সভ্যতার সংকট প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ কোন আদর্শ সভ্যতার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন?
🔸 উত্তর: তিনি এমন এক সভ্যতার কথা বলেন, যা বাহ্যিক শক্তি নয় বরং আত্মিক উন্নয়ন ও মানবিক গুণাবলিকে গুরুত্ব দেয়।
🔹 বিস্তারিত প্রশ্নোত্তর (Descriptive Questions):
🔸 প্রশ্ন ১: সভ্যতার সংকট প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজ সভ্যতাকে কীভাবে উপস্থাপন করেছেন?
🟢 উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সভ্যতার সংকট প্রবন্ধে ইংরেজ সভ্যতাকে আত্মকেন্দ্রিক, শোষণমূলক ও ধ্বংসাত্মক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর মতে, এই সভ্যতার উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ নয়, বরং ক্ষমতার বিস্তার ও ভোগের প্রতি আসক্তি। তিনি বলেন, এই সভ্যতা মানুষের মানবতাকে অপমান করে এবং নৈতিকতার চর্চা নষ্ট করে দেয়।
🔸 প্রশ্ন ২: সভ্যতা ও অসভ্যতার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ কী পার্থক্য দেখিয়েছেন?
🟢 উত্তর: রবীন্দ্রনাথ সভ্যতা বলতে বোঝান মানবিক গুণাবলির বিকাশ— যেমন দয়া, সহানুভূতি, সত্যবাদিতা ও আত্মসংযম। অন্যদিকে, অসভ্যতা বোঝায় ক্ষমতা, দম্ভ, লোভ ও নিষ্ঠুরতার আধিপত্য। ইংরেজরা বাহ্যিক চমকপ্রদ উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেদের সভ্য দাবি করলেও তারা বাস্তবে অসভ্যতার চর্চা করেছিল।
🔸 প্রশ্ন ৩: সভ্যতার সংকট প্রবন্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করুন।
🟢 উত্তর: প্রবন্ধটি রচিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। সেই সময় ইংরেজ শাসকেরা ভারতের উপর জোর করে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। তারা ভারতীয়দের মতামত ছাড়াই যুদ্ধের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়, যা রবীন্দ্রনাথের কাছে সভ্যতার পরিপন্থী। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রবন্ধটি লেখা হয়, যেখানে তিনি পশ্চিমা সভ্যতার অবক্ষয় তুলে ধরেন।
🔍সভ্যতা কী? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভ্যতার সংকট প্রবন্ধ অনুসারে ইংরেজি সভ্যতার স্বরূপ বিশ্লেষণ করুন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে ইংরেজি সভ্যতার স্বরূপ বিশ্লেষণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধটি তাঁর আশিতম জন্মদিন উপলক্ষে রচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা, যেখানে তিনি ইংরেজি সভ্যতার প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। প্রথমে তিনি ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইংরেজ জাতিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে ইংরেজ শাসনের বাস্তবতা উপলব্ধি করে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়।
১. ইংরেজি সভ্যতার বাহ্যিক মোহ ও অন্তর্নিহিত সংকট
রবীন্দ্রনাথ প্রাথমিকভাবে ইংরেজি সাহিত্যের গুণে মুগ্ধ ছিলেন এবং ইংরেজ জাতির ঔদার্য ও মানবতাবাদে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। তবে, তিনি লক্ষ্য করেন যে, এই সভ্যতা বাহ্যিকভাবে উন্নত হলেও, এর অন্তরে লুকিয়ে আছে শোষণ, বৈষম্য ও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব। তিনি বলেন, “সভ্যতাকে যারা চরিত্র-উৎস থেকে উৎসারিতরূপে স্বীকার করেছে, রিপুর প্রবর্তনায় তারা তাকে কী অনায়াসে লঙ্ঘন করতে পারে” ।
২. ইংরেজ শাসনের শোষণমূলক চরিত্র
রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ শাসনের শোষণমূলক চরিত্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইংরেজরা ভারতবর্ষে আইন ও শৃঙ্খলার নামে এমন এক শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে, যা মানুষের স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদাকে হরণ করে। তিনি বলেন, “এই বিদেশীয় সভ্যতা, যদি একে সভ্যতা বল, আমাদের কী অপহরণ করেছে তা জানি; সে তার পরিবর্তে দণ্ড হাতে স্থাপন করেছে যাকে নাম দিয়েছে Law and Order” ।
৩. ইংরেজি সভ্যতার মুখোশ উন্মোচন
রবীন্দ্রনাথ ইংরেজি সভ্যতার মুখোশ উন্মোচন করে দেখান যে, এটি কেবল বাহ্যিক চাকচিক্য ও প্রযুক্তিগত উন্নতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তিনি বলেন, “মানুষে মানুষে যে-সম্বন্ধ সব চেয়ে মূল্যবান এবং যাকে যথার্থ সভ্যতা বলা যেতে পারে তার কৃপণতা এই ভারতীয়দের উন্নতির পথ সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে দিয়েছে” ।
৪. বিকল্প সভ্যতার সন্ধান
রবীন্দ্রনাথ ইংরেজি সভ্যতার বিপরীতে বিকল্প সভ্যতার সন্ধান করেন। তিনি জাপান ও সোভিয়েত রাশিয়ার উদাহরণ দিয়ে দেখান, কিভাবে এই দেশগুলো প্রযুক্তি ও মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে একটি উন্নত সমাজ গঠন করেছে। তিনি বলেন, “এই সভ্যতা জাতিবিচার করে নি, বিশুদ্ধ মানবসম্বন্ধের প্রভাব সর্বত্র বিস্তার করেছে” ।
উপসংহার
‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজি সভ্যতার বাহ্যিক চাকচিক্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শোষণ, বৈষম্য ও মানবতাবিরোধী মনোভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি মানবিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার উপর ভিত্তি করে একটি বিকল্প সভ্যতার স্বপ্ন দেখেছেন, যা আজও প্রাসঙ্গিক।
প্রবন্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিয়ো দেখুন: