শামসুদ্দীন আবুল কালাম

শামসুদ্দীন আবুল কালাম (১৯২৬ – ১০ জানুয়ারি ১৯৯৭) ছিলেন একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও উপন্যাসিক। তাঁর রচনায় গ্রামীণ জীবনের সরলতা, প্রেম, আবেগ ও মানবিক টানাপোড়েন স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।
জীবন ও কর্ম
শামসুদ্দীন আবুল কালাম ১৯২৬ সালের আগস্ট মাসে বরিশাল জেলার (তৎকালীন ঝালকাঠি মহকুমা) নলছিটি থানার কামদেবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন আকরাম আলী মুন্সি এবং মাতা মেহেরুনেসা। পরিবারে চার বোন (জাহানারা বেগম, রৌশোনারা বেগম, মমতাজ বেগম ও সাইদা আখতার) থাকলেও তিনি ছিলেন একমাত্র পুত্র।
তিনি ১৯৪১ সালে বরিশাল জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৩ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে আই.এ এবং ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ সম্পন্ন করেন। পরে এম.এ ক্লাসে ভর্তি হলেও তা শেষ করেননি।
দেশভাগের পরও তিনি কিছুদিন কলকাতায় অবস্থান করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকায় ফিরে এসে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার ও তথ্য দপ্তরে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে সহকারী পরিচালক হন। এই সময় তিনি ‘মাহে নও’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া পাকিস্তানের প্রথম মাসিক ‘সিনেমা’ পত্রিকায় উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তিনি “আল-বেরুনী” ছদ্মনামে ধারাবাহিক নাটক প্রকাশ করতেন।
১৯৫৯ সালে তিনি আলোকচিত্র, সেট ডিজাইন, সংগীত ও চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ইতালির রোমে যান। সেখানকার সরকারি প্রতিষ্ঠান Cinecittà-তে যোগ দেন এবং ষাটের দশকে রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি অর্জন করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তাঁর পরিচয় হয় হোসনে আরা বিজুর সাথে। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালের দিকে তিনি তাঁকে বিয়ে করেন।
রচনাবলি
উপন্যাস
- আলমনগরের উপকথা (১৯৫৪)
- কাশবনের কন্যা (১৯৫৪)
- দুই মহল (১৯৫৫)
- কাঞ্চনমালা (১৯৫৬, পুনর্মুদ্রণ ১৯৬১)
- জীবনকাব্য (১৯৫৬)
- জায়জংগল (১৯৭৮)
- সমুদ্রবাসর (১৯৮৬)
- নবান্ন (১৯৮৭)
- যার সাথে যার (১৯৮৬)
- মনের মতো ঠাই (১৯৮৫)
- কাঞ্চনগ্রাম (১৯৯৭)
গল্পসংগ্রহ
- অনেক দিনের আশা (১৯৫২)
- ঢেউ (১৯৫৩)
- পথ জানা নেই (১৯৫৩)
- দুই হৃদয়ের তীর (১৯৫৫)
- শাহের বানু (১৯৫৭)
পুরস্কার
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৪)
মৃত্যু
ফুসফুস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯০ সালে ইতালির ভেরোনায় তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। ১৯৯৩ সালের পর থেকে তিনি গ্লুকোমাজনিত চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি ইতালির রোমে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে মৃত্যুবরণ করেন।
টীকা
- তাঁর নাম সমসাময়িক আরেক সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন-এর সাথে মিল থাকায় বিভ্রান্তি এড়াতে ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত দুই হৃদয়ের তীর গ্রন্থ থেকে তিনি নিজের নামের বিন্যাস পরিবর্তন করে “শামসুদ্দীন আবুল কালাম” ব্যবহার করতে শুরু করেন।
তথ্যসূত্র
- মতিন, আবদুল। শামসুদ্দীন আবুল কালাম ও তাঁর পত্রাবলী, র্যাডিকাল এশিয়া পাবলিকেশনস, ঢাকা, ২০০৬।
- “এ. এম. হারুন অর রশীদ”। গুণীজন.অর্গ.বিডি। সংগৃহীত ৫ মার্চ ২০১৬।
- “রোমে সমাহিত আবুল কালামের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী”। Banglanews24.com। ১০ জানুয়ারি ২০১৮। সংগৃহীত ২০ ডিসেম্বর ২০২১।
- “পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক তালিকা”। Banglaacademy.org.bd। বাংলা একাডেমি। সংগৃহীত ২৭ জুলাই ২০২০।