লিপির গল্প – চতুর্থ শ্রেণির বাংলা

Spread the love

লিপির গল্প | চতুর্থ শ্রেণির বাংলা

লিপির গল্প শিক্ষার্থীদের ভাষা ও লেখার ইতিহাস সম্পর্কে জানার কৌতূহল উদ্দীপিত করে। গল্পের আকারে উপস্থাপিত এই পাঠে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে লিপির উদ্ভব ও বিবর্তনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রাচীনকালে কোনো বর্ণমালা ছিল না, ফলে মানুষ চিঠি বা বই লিখতে পারত না। গল্প বলার মাধ্যমে জ্ঞান সংরক্ষণ করা হতো। কিন্তু ভুলে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে লিপি আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রথমে রেখাচিত্র দিয়ে ভাব প্রকাশ করা হতো, যা ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট চিহ্ন বা বর্ণে পরিণত হয়।

লিপির গল্প

শিক্ষক: আমি আজ একটি গল্প বলব। গল্প হলেও এর কিছুটা সত্য, কিছুটা অনুমান, আর কিছুটা বানানো।
মনজুলা: স্যার, আমারও গল্প বানাতে ভালো লাগে।
শিক্ষক: খুব ভালো। গল্প বানাতে হলে কিন্তু গল্প শুনতে হবে, গল্প পড়তে হবে, গল্প লিখতেও হবে।

আলো: আচ্ছা, এখন আমরা গল্প শুনব। কিন্তু কোন গল্প? রাক্ষস-খোক্ষসের গল্প, বেঙমা-বেঙমির গল্প, নাকি সুয়োরানি-দুয়োরানির গল্প?
শিক্ষক: তোমরা অনেক গল্প জান। আজ একটা গল্প বলব। লিপির গল্প।
অনজু: লিপির গল্প! শুনিনি তো কোনো দিন!

শিক্ষক: লিপি মানে লেখা। কোনো শব্দ শুনে লেখা, জিনিস দেখে লেখা। চিন্তা করে মনের কথা লেখা। এই লেখা কেমন করে মানুষ পেল, কেমন করে আবিষ্কার করল, কেমন করে অভ্যাস করল তাই বলব। লিপির গল্প মানে লেখার ইতিহাস।
হাসান: মজা তো!

শিক্ষক: অনেক দিন আগের কথা। একশো, দুশো বছর নয়। এক হাজার দুহাজার বছর নয়। প্রায় ছয়-সাত হাজার বছর আগে পৃথিবীতে লোকজন লিখতে ও পড়তে জানত না। জানবে কী করে? তখন তো বর্ণ বলে কিছু ছিল না।
আদিত্য: অ্যা, বর্ণমালা ছিল না? মানে অ আ ক খ কিছুই ছিল না?

শিক্ষক: সত্যিই কোনো ভাষার কোনো বর্ণমালা বা হরফ কিছুই ছিল না। তখন লিখতে জানা লোক ছিল না, সাক্ষর লোকও ছিল না।
আমিনা: তাহলে তারা চিঠি লিখত কী করে?

শিক্ষক: তখন চিঠিপত্র ছিল না, বইপত্র ছিল না, কালি-কলম ছিল না। সেকালে দাদা-দাদি, বাবা-মা বাচ্চাদের গল্প বানিয়ে বানিয়ে শোনাতেন। বড়োরা গল্প করতেন আর ছোটোরা গল্প শুনত। গল্প শুনে শুনে বড়ো হয়ে নিজেরা আবার ছোটোদের গল্প বানিয়ে শোনাত।

সুজিত: আচ্ছা, ভুলে গেলে তারা কী করত?
শিক্ষক: খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছ। ভুলে গেলে তখন আর গল্প বলতে পারত না। আবার নতুন করে নতুন গল্প বানাতে হতো। সে জন্যই ভুলে যাওয়ার বিপদ থেকে বাঁচার জন্য লিপি তৈরির চিন্তা মাথায় এলো। শূন্যে মিলিয়ে যাওয়া কথাকে রেখার বন্ধনে বন্দি করার ফন্দি হলো লিপি।

নাহিদ: এখন যেমন কথাবার্তা, গানবাজনা, আবৃত্তি, বক্তৃতা প্রভৃতি ইলেক্টনিক ডিভাইসে ধরে রাখা হয়, সে রকম?
শিক্ষক: ঠিক বলেছ, অনেকটা তাই। এখন যন্ত্রের মধ্যে কথাকে বন্দি করে রাখা হয়। তখন হাতে আঁকা রেখায় কথাকে বন্দি করে রাখা হতো।

কথাকে রেখার বন্ধনে বন্দি করে রাখার জন্যই তৈরি হয়েছিল লিপি। লিপিকে কেউ বলেন লিখন পদ্ধতি। কেউ বলেন বর্ণ। কেউ বলেন হরফ। কেউ বলেন অক্ষর। মানুষ যেদিন লিপি দিয়ে কথাকে বন্দি করে রাখতে শিখল, সেদিন থেকেই সভ্যতার পথে নতুন যাত্রা শুরু হলো।

হাসান: লিপি আবিষ্কার করলেন কে?
শিক্ষক: প্রাগৈতিহাসিক কালে কে কখন কীভাবে লিপি আবিষ্কার করেছিলেন, তা কেউ ঠিকভাবে বলতে পারবে না। আধুনিক কালে যাঁরা এ ধরনের কাজ করেছেন, তাঁদের কারো কারো নাম জানা যায়। যেমন- কোরিয়ার রাজা সে জং এবং ইউরোপের এক ধর্মযাজক সন্ত সিরিল।

টমাস বাংলা লিপি কীভাবে এলো?
শিক্ষক: বাংলা লিপি কে প্রচলন করেছেন তা জানা যায় না। প্রাচীন ব্রাহ্মী লিপি থেকে অশোক লিপি, অশোক লিপি থেকে কুটিল লিপি এবং কুটিল লিপি থেকে বঙ্গলিপি। তবে লিপির নানা ধাপ পেরিয়ে বঙ্গলিপি থেকেই বাংলা লিপি এসেছে বলে পণ্ডিতদের ধারণা।

শিউলি: স্যার পৃথিবীতে কত লিপি ছিল?
শিক্ষক: কত লিপি ছিল তা সঠিক কেউ জানে না। অনেক লিপি কালে কালে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেক লিপির নমুনা পাওয়া গেছে, যেমন: মহেঞ্জোদারোর লিপি, মিশরীয় লিপি। তবে এগুলোর পাঠ উদ্ধারের জন্য এখনও ভাষাবিজ্ঞানী ও প্রত্নতাত্ত্বিকেরা গবেষণা করছেন। তোমরা বড়ো হয়ে প্রাচীন লিপি সম্পর্কে আরও জানতে পারবে।

এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ

১. জেনে নিই।
লিপির গল্পটি একটি কথোপকথনধর্মী রচনা। ধ্বনির প্রতীক হিসেবে কীভাবে ধীরে ধীরে বর্ণের রূপ পেয়েছে, এই রচনায় তার ধারণা দেওয়া হয়েছে। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আলোচনার মাধ্যমে লিপিমালা আবিষ্কারের তথ্য জানানো হয়েছে।

২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
অভ্যাস, সাক্ষর, বন্ধন, বঙ্গলিপি, রূপান্তর

৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
অভ্যাস, বন্ধন, সাক্ষর, রূপান্তর, বঙ্গলিপি

ক. _______ লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
খ. চা খাওয়ার সময় বাবার পত্রিকা পড়ার _______।
গ. বাক্যটি বংলা থেকে ইংরেজি ভাষায় _______ করো।
ঘ. বাংলা লিপির পুরোনো নাম _______ ।
ঙ. মানুষের সাথে মানুষের _______ দৃঢ় হোক।

৪. শূন্যস্থান পূরণ করি।
তুমি খুব _______ প্রশ্ন করেছ।
আবার নতুন করে নতুন _______ বানাতে হতো।
লিপিকে কেউ বলেন _______ ।
বঙ্গলিপি থেকেই _______ এসেছে।

৫. নিচের শব্দগুলো দিয়ে বিপরীত শব্দ লিখি ও বাক্য রচনা করি।
বিলুপ্ত –
শিক্ষক –
আনন্দ –
চিন্তা –
আবিষ্কার –
সাক্ষর –
প্রাচীন –

৬. মুখে মুখে উত্তর বলি ও লিখি।
ক. লিপি বলতে কী বুঝি?
খ. লিপি তৈরির চিন্তা এলো কীভাবে?
গ. লিপি আবিষ্কারকদের নাম লিখি।
ঘ. বাংলা লিপি কীভাবে এলো?
ঙ. কখন থেকে মানুষের সভ্যতার পথে নতুন যাত্রা শুরু হলো?

৭. বুঝিয়ে বলি।
শূন্যে মিলিয়ে যাওয়া কথাকে রেখার বন্ধনে বন্দি করার ফন্দি হলো লিপি।

৮. কর্ম-অনুশীলন।
পাঠের সংলাপগুলো শিক্ষকের সহায়তায় অভিনয় করি।

https://www.munshiacademy.com/লিপির-গল্প-চতুর্থ-শ্রেণি/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *