লক্ষ্মী বাওড় জলাবন ভ্রমণ প্রতিবেদন
(Lakshmi Baor Swamp Forest Travel Report)
ভূমিকা
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভান্ডারে নতুন সংযোজন হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ের লক্ষ্মী বাওড় জলাবন। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মিঠাপানির সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলাবন, যা স্থানীয়ভাবে “খড়তির জঙ্গল” নামে পরিচিত। হিজল-কড়চে ঘেরা এই বনজলভূমি যেন এক জীবন্ত ছবির মতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নানান প্রজাতির পাখি, উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীর মিলনে লক্ষ্মী বাওড় জলাবন আজ একটি আকর্ষণীয় ইকো-ট্যুরিজম স্পট।
কোথায়
লক্ষ্মী বাওড় জলাবন অবস্থিত হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বানিয়াচং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নে, খড়তি নদীর দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত বিরাট হাওরের মধ্যে। হবিগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১২ মাইল দূরে এর অবস্থান। এর দক্ষিণে লোহাচুড়া, উত্তরে খড়তি, পশ্চিমে নলাই নদী এবং পূর্বে গঙ্গাজলের হাওর বিস্তৃত।
কেন যাবেন
প্রকৃতিপ্রেমী বা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এটি এক স্বর্গরাজ্য। জলে ভাসমান গাছ, হিজল-কড়চের ছায়াময় সৌন্দর্য, নানান দেশি ও অতিথি পাখির কলকাকলি—সব মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এছাড়াও, এটি রাতারগুলের মতো নয়; বরং আরও বড়, বিস্তৃত ও নির্জন। যারা শান্ত প্রকৃতির কোলে কিছু সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এই জলাবন আদর্শ গন্তব্য।
কখন যাবেন
লক্ষ্মী বাওড় জলাবন ঘোরার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বর্ষা মৌসুম (জুন থেকে সেপ্টেম্বর)। এ সময় বনটি সম্পূর্ণভাবে পানিতে ভরে থাকে এবং নৌকায় ভেসে ঘোরার স্বর্গীয় অনুভূতি মেলে। তবে শুকনো মৌসুমে বনের আসল সৌন্দর্য কিছুটা ফিকে হয়ে যায়।
কীভাবে যাবেন / রুট (Step by Step)
১. ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ:
- সড়কপথে: সায়দাবাদ, ফকিরাপুল বা মহাখালী থেকে বাসে (Hanif, Ena, Shamoli, Sohagh) হবিগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়া যায়। সময় লাগবে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা।
২. হবিগঞ্জ থেকে বানিয়াচং: - স্থানীয় বাস, অটোরিকশা বা মোটরবাইকে বানিয়াচং বড় বাজার পর্যন্ত (প্রায় ১২ কিমি)।
৩. বানিয়াচং থেকে লক্ষ্মী বাওড় জলাবন: - বড় বাজার থেকে ৮ কিমি উত্তর দিকে নৌকা বা অটোরিকশায় যেতে হবে।
- বর্ষাকালে নৌপথেই যাওয়াই সবচেয়ে উপভোগ্য।
কী দেখবেন
- জলে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল-কড়চ, বরুণ, কাকুরা, বউল্লা, খাগড়া, নল ও চাইল্লা গাছ।
- দোয়েল, বক, পানকৌড়ি, বালি হাঁস, ঘুঘু, শালিকসহ শতাধিক দেশি ও পরিযায়ী পাখি।
- মিঠাপানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও সরীসৃপ।
- বর্ষায় নৌকাভ্রমণের সৌন্দর্য—সবুজ গাছের ছায়ায় জলপথে ভাসা যেন এক রূপকথার জগৎ।
খরচ
- ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ বাসভাড়া: ৫০০–৬০০ টাকা (একদিকে)
- হবিগঞ্জ থেকে বানিয়াচং: ৫০–৮০ টাকা
- নৌকা ভাড়া: ঘন্টাপ্রতি ৫০০–৮০০ টাকা (নৌকার আকার অনুযায়ী)
- খাওয়া ও অন্যান্য খরচ: প্রতিজন গড়ে ১০০০–১৫০০ টাকায় একদিনের ট্যুর সম্পন্ন করা সম্ভব।
পরিবহন
- সড়কপথ: ঢাকা → হবিগঞ্জ → বানিয়াচং
- নৌপথ: বানিয়াচং → লক্ষ্মী বাওড় (বর্ষাকালে)
- স্থানীয় যোগাযোগের জন্য অটোরিকশা, ভ্যান ও নৌকা সহজলভ্য।
খাওয়ার ব্যবস্থা
বানিয়াচং বড় বাজারে কয়েকটি ভালো মানের স্থানীয় রেস্তোরাঁ ও হোটেল আছে, যেমন—
- হোটেল সোনার বাংলা
- হোটেল শান্তি নিবাস
- হোটেল মদিনা
স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় দেশি মাছ, ভর্তা, ডাল ও ভাত—সাদামাটা কিন্তু মজাদার খাবার।
যোগাযোগ
বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়:
ফোন: +880-831-xxxxxx
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন (পর্যটন সেল):
ওয়েবসাইট: www.habiganj.gov.bd
আবাসন ব্যবস্থা
হবিগঞ্জ শহরে থাকার জন্য মানসম্মত হোটেল রয়েছে—
- Hotel Sonartori (৩-তারকা মানের)
- Hotel Jamil
- Hotel Rest Inn
ভাড়া: প্রতি রাত ১০০০–২৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বানিয়াচংয়েও ছোট গেস্টহাউস আছে, তবে আগাম যোগাযোগ করে বুকিং করা ভালো।
দৃষ্টি আকর্ষণ
- স্থানীয় জনগণের সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট না করে ভ্রমণ করুন।
- বনে সাপ ও জোঁক থাকতে পারে, তাই সাবধান থাকুন।
- প্লাস্টিক বা ময়লা ফেলবেন না।
- জলে নামার আগে স্থানীয় গাইডের পরামর্শ নিন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং গ্রাম
- রাতারগুল জলাবন (সিলেট)
- মাধবপুর লেক
- চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
- তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ
টিপস
- সকাল সকাল রওনা দিন, যাতে দিনের আলোয় পুরো বন দেখা যায়।
- পানির বোতল, সানগ্লাস, ক্যামেরা, হালকা ছাতা সঙ্গে রাখুন।
- বর্ষায় নৌকা ভ্রমণের সময় লাইফজ্যাকেট পরুন।
- গাইড ছাড়া অপরিচিত এলাকায় প্রবেশ করবেন না।
