রাধানন্দ জমিদার বাড়ি

রাধানন্দ জমিদার বাড়ি ভ্রমণ প্রতিবেদন

ভূমিকা

বাংলাদেশের ইতিহাসে জমিদার সংস্কৃতি এক বিশেষ ঐতিহ্যের অংশ। প্রতিটি জমিদারবাড়ি যেন ইতিহাসের নীরব সাক্ষী, বহন করে জমকালো অতীতের গল্প। হবিগঞ্জের রাধানন্দ জমিদার বাড়ি এমনই একটি নিদর্শন, যা একসময় প্রজাদের সুখ-দুঃখের কেন্দ্রস্থল ছিল। বর্তমানে এটি হারানো ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অতীতের মহিমা মনে করিয়ে দেয় আজও।


কোথায়

রাধানন্দ জমিদার বাড়ি অবস্থিত হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধুলিয়াখাল ও মিরপুর সড়কের ফাঁড়ি পথে। স্থানীয়ভাবে এটি “হাতিরথান জমিদার বাড়ি” নামেও পরিচিত।


কেন যাবেন

যদি আপনি ইতিহাস, ঐতিহ্য আর স্থাপত্যের প্রতি আগ্রহী হন, তাহলে রাধানন্দ জমিদার বাড়ি আপনার জন্য চমৎকার একটি গন্তব্য। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন ইট, সুরকি ও রড দিয়ে তৈরি পুরনো স্থাপত্য, জমিদারদের বসতভিটা এবং স্থানীয় মানুষের মুখে শোনা অতীতের গল্প। এই ভ্রমণ আপনাকে নিয়ে যাবে হবিগঞ্জের অতীত ঐশ্বর্যের যুগে।


কখন যাবেন

রাধানন্দ জমিদার বাড়ি ঘোরার সেরা সময় শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)। এ সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে, এবং আশেপাশের গ্রামীণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে।


কীভাবে যাবেন / রুট (Step by Step)

  1. ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ:
    • সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল বা মহাখালী থেকে হবিগঞ্জগামী বাসে উঠুন। যাত্রাসময় ৪-৫ ঘণ্টা।
  2. হবিগঞ্জ শহর থেকে জমিদার বাড়ি:
    • শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় করে ধুলিয়াখাল-মিরপুর সড়ক ধরে ১৫-২০ মিনিটে পৌঁছানো যায় রাধানন্দ জমিদার বাড়িতে।
    • স্থানীয়ভাবে কেউ “হাতিরথান জমিদার বাড়ি” বললে চিনতে পারবে।

কী দেখবেন

  • প্রাচীন ভবনসমূহ: জমিদার আমলের ইট ও সুরকির দেয়াল, খিলান ও খোদাই করা দরজা-জানালা।
  • রাধানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: জমিদার রাধানন্দ বাবুর প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
  • পুরনো পুকুর ও বাগান: বাড়ির পাশে থাকা পুকুর ও ফলজ গাছের সারি একসময় রাজকীয় পরিবেশের অংশ ছিল।
  • স্থানীয় লোককথা: বাড়ির ইতিহাস ও জমিদার পরিবারের গল্প শুনতে পাবেন স্থানীয় প্রবীণদের কাছ থেকে।

খরচ

  • বাস ভাড়া: ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ ৪০০–৬০০ টাকা।
  • সিএনজি/রিকশা: হবিগঞ্জ শহর থেকে যাওয়া-আসা ২০০–২৫০ টাকা।
  • খাবার ও অন্যান্য খরচ: জনপ্রতি ৩০০–৪০০ টাকার মধ্যে ঘোরা সম্ভব।

পরিবহন

হবিগঞ্জ শহর থেকে অটোরিকশা, সিএনজি বা প্রাইভেট কারে সহজেই পৌঁছানো যায়। সড়কপথ ভালো ও নিরাপদ।


খাওয়ার ব্যবস্থা

হবিগঞ্জ শহরে রেস্টুরেন্ট ও খাবার হোটেল রয়েছে—যেমন “হোটেল নদী”, “রূপসী হবিগঞ্জ” ও “আদর্শ রেস্টুরেন্ট”। এখানে দেশীয় ভর্তা, মাছ, ডাল ও ভাত বেশ জনপ্রিয়।


যোগাযোগ

📍 ঠিকানা: ধুলিয়াখাল-মিরপুর সড়ক, হবিগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জ
📞 নিকটবর্তী শহর: হবিগঞ্জ শহর (প্রায় ৫ কিমি দূরে)
🌐 জেলা প্রশাসন: হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়


আবাসন ব্যবস্থা

  • হবিগঞ্জ শহরে: হোটেল জয়া ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল রূপসী বাংলা, হোটেল সেন্ট্রাল পার্ক।
  • মাধবপুর বা বাহুবলে: ছোট গেস্টহাউস ও মোটেল পাওয়া যায়।
  • আগে থেকে বুকিং করে রাখলে সুবিধা হবে।

দৃষ্টি আকর্ষণ

  • জমিদার বাড়িটি ঐতিহাসিক নিদর্শন, তাই ভেতরের স্থাপনা বা দেয়ালে হাত না দেওয়া উত্তম।
  • স্থানীয়দের অনুমতি নিয়ে ছবি তুলুন।
  • ঐতিহাসিক স্থানটি শ্রদ্ধার সঙ্গে ঘুরে দেখুন।

সতর্কতা

  • বাড়ির কিছু অংশ ভগ্নপ্রায়, তাই সাবধানে চলাচল করুন।
  • রাতে সেখানে না থাকাই ভালো।
  • বৃষ্টির দিনে কাদা জমে, তাই হালকা জুতা ব্যবহার করুন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ
  • রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
  • মাধবপুর লেক
  • হবিগঞ্জ শহরের পুরনো ব্রিটিশ আমলের ভবনসমূহ
  • চুনারুঘাট চা বাগান এলাকা

টিপস

  • সকালে রওনা দিলে পুরো এলাকা আরাম করে ঘোরা যায়।
  • ইতিহাসপ্রেমী বন্ধুদের সঙ্গে গেলে অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে।
  • স্থানীয়দের কাছ থেকে গল্প শুনে নিন—অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *