মুনীর চৌধুরী

জন্ম: আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, ২৭ নভেম্বর ১৯২৫, মানিকগঞ্জ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ (বয়স ৪৬)
পেশা: নাট্যকার, প্রবন্ধকার
ভাষা: বাংলা
জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয়
নাগরিকত্ব: ব্রিটিশ ভারত
শিক্ষা: এমএ (ভাষাতত্ত্ব)
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য রচনা: রক্তাক্ত প্রান্তর, কবর
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮০)
দাম্পত্যসঙ্গী: লিলি চৌধুরী
সন্তান: আহমেদ মুনীর, আশফাক মুনীর, আসিফ মুনীর
আত্মীয়: ফেরদৌসী মজুমদার (বোন), কবীর চৌধুরী (ভাই)
জীবনসংক্ষিপ্ত
আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী (২৭ নভেম্বর ১৯২৫ – ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, বাগ্মী এবং বুদ্ধিজীবী। তার রচিত কবর (রচনাকাল ১৯৫৩, প্রকাশকাল ১৯৬৬) পূর্ববাংলার প্রথম প্রতিবাদী নাটক। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক নিহত হন।
তার পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীর চাটখিল থানাধীন গোপাইরবাগ গ্রামে। মুনীর চৌধুরী ইংরেজ আমলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরীর চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন।
শিক্ষাজীবন
মুনীর চৌধুরী ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৩ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স (১৯৪৬) এবং মাস্টার্স (১৯৪৭) পাস করেন। তিনি সলিমুল্লাহ হলে আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ছাত্রজীবনের প্রথম বর্ষে প্রোভোস্ট’স কাপ জিতে হলের সেরা বক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান।
ছাত্রজীবনে তিনি বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি সলিমুল্লাহ হলে বহিস্কারিত হন। বন্দী জীবনের মধ্যে তিনি নাটক রচনা এবং বাংলায় প্রাথমিক এমএ পরীক্ষা দেন।
শিক্ষকতা
১৯৪৯ সালে খুলনার ব্রজলাল কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫৩ সালে কারাবন্দী অবস্থায় কবর নাটক রচনা করেন। মুক্তির পর ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে বাংলা বিভাগের স্থায়ী প্রভাষক হন। ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনৈতিক জীবন
মুনীর চৌধুরী ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে কারাবন্দী অবস্থায় নাটক কবর রচনা করেন। ১৯৬৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ এবং ১৯৬৮ সালে বাংলা বর্ণমালার সংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলা টাইপরাইটার ও প্রযুক্তি
১৯৬৫ সালে মুনীর চৌধুরী বাংলা টাইপরাইটারের উন্নত কী-বোর্ড উদ্ভাবন করেন, যার নাম “মুনীর অপটিমা”। এটি বাংলা টাইপরাইটার ব্যবহারে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
সাহিত্য ও নাটক
নাটক
- রক্তাক্ত প্রান্তর (১৯৬২): যুদ্ধবিরোধী নাটক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত
- চিঠি (১৯৬৬)
- কবর (১৯৫৩/১৯৬৬): পূর্ববাংলার প্রথম প্রতিবাদী নাটক
- দণ্ডকারণ্য (১৯৬৬)
- পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য (১৯৬৯)
- মানুষ (১৯৪৭)
- নষ্ট ছেলে (১৯৫০)
- রাজার জন্মদিন (১৯৪৬)
অনুবাদ নাটক
- কেউ কিছু বলতে পারে না (১৯৬৯) – জর্জ বার্নার্ড শর
- রূপার কৌটা (১৯৬৯) – জন গলজ্ওয়ার্ড
- মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০) – উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
প্রবন্ধ ও সমালোচনা
- ড্রাইডেন ও ডি.এল. রায় (১৯৬৩)
- মীর মানস (১৯৬৫) – দাউদ পুরস্কারপ্রাপ্ত
- রণাঙ্গন (১৯৬৬) – সৈয়দ শামসুল হক ও রফিকুল ইসলামের সঙ্গে
- তুলনামূলক সমালোচনা (১৯৬৯)
- বাংলা গদ্যরীতি (১৯৭০)
মৃত্যু
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও আল-বদর বাহিনী তার বাবার বাড়ি থেকে অপহরণ করে এবং সম্ভবত ঐ দিনই হত্যা করে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (নাটক), ১৯৬২
- দাউদ পুরস্কার (মীর মানস), ১৯৬৫
- সিতারা-ই-ইমতিয়াজ (বর্জন করেন ১৯৭১)
- স্বাধীনতা পুরস্কার (সাহিত্য), ১৯৮০
- বাংলাদেশ মুজিবনগর কর্মচারী কল্যাণ সংসদ সম্মাননা স্মারক, ১৯৯২
- ভাষা সৈনিক ও রাজবন্দী পরিষদ সম্মাননা স্মারক, ১৯৯৩
তথ্যসূত্র
- আল হেলাল, বশীর (২০০৩), ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, পৃ. ২০৯-২১৬
- হোসেন, সেলিনা; ইসলাম, নুরুল (১৯৯৭), বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, পৃ. ২৯২-২৯৩
- জয়নুদ্দীন, মোহাম্মদ (২০০৫), “কবর নাটকের স্বাতন্ত্র্য ও সাফল্য”, থিয়েটার, ৩৪ (২), পৃ. ১৫৩–১৬২
- ইমাম, জাহানারা (১৯৮৬), একাত্তরের দিনগুলি, ঢাকা: সন্ধানী প্রকাশনী, পৃ. ২৬
- “Google Doodle pays tribute to Munier Chowdhury on 95th birth anniversary”, দিইন্ডিপেন্ডেন্টবিডি.কম, ২৭ নভেম্বর ২০২০