মির্জা গালিব: জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মির্জা গালিব (মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ খান; ডিসেম্বর ২৭, ১৭৯৭ – ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৮৬৯) ছিলেন শেষ মুঘল যুগের একজন উর্দু ও ফার্সি ভাষার কবি, যিনি প্রেম, দার্শনিক চিন্তা, ইতিহাস ও জীবনের গভীরতা আধুনিক গজলে অনন্যভাবে মিশিয়েছেন। সাহিত্যে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে “দাবির-উল-মালিক” ও “নাজিম-উদ-দৌলা” উপাধি প্রদত্ত হয়েছিল । আজ গালিবকে উর্দু সাহিত্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি হিসেবে সম্মান করা হয় ।
প্রথম জীবন ও শিক্ষা
আগ্রার কাদা মহলে জন্ম, পিতামহের সেলজুক-তুর্ক বংশের ইতিহাস থেকে তিনি এলেন এক জ্ঞানপিপাসু বংশে । ছয় বছর বয়সে পিতা, আট বছরে চাচার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গালিব জীবনের প্রথম দুঃখ সঙ্গী করেন। ১৪ বছর বয়সে তাঁর উস্তাদ আবদুস সামাদ তাঁকে ফার্সি, আরবি, দর্শন ও যুক্তিবিদ্যায় শিক্ষাদান করেন ।
কবিতার সূচনা ও গজল শিল্প
১১ বছর বয়সে প্রথম কবিতা রচনা শুরু করে গালিব। প্রথমে ফার্সি কবিতা লিখলেও পরবর্তীতে উর্দু ভাষায় তাঁর কাব্যরীতি জনপ্রিয় হয় । গজল লেখায় তিনি প্রেম, দার্শনিক চিন্তা, জীবনের রহস্য ও বেদনার গভীরে প্রবেশ করেন । গজলকে তিনি রূপ-আহ্লাদ ও ভাবের মিশ্রণে বিকশিত করেন, যা আগে ছিল শুধুই বিরহ বা প্রেমের যন্ত্রণা প্রকাশে সীমাবদ্ধ ।
গদ্যশৈলী – চিঠি (Letters)
“Urdu-e-Mualla” নামে পরিচিত তাঁর চিঠিসমগ্র কেবল কবিতা নয়—এটি আধুনিক উর্দু গদ্যের ভিত্তিপ্রতিষ্ঠা হিসাবে বিবেচিত। তার চিঠিতে কলমের ভাষায় হৃদয়ের সরল ভাব ফুটে উঠে:
“Main koshish karta hoon ke koi aisi baat likhoon jo padhe khush ho jaaye.”
তিনি দারুন সহজ-সরল ভাষায় গদ্যে প্রকাশ করেছেন ব্যক্তিত্ব, বিশুদ্ধ রুচি ও সময়ের সামাজিক–রাজনৈতিক চিত্র ।
ছদ্মনাম
তার আসল তখাল্লুস (ছদ্ম নাম) ছিল আসাদ (যার অর্থ সিংহ), যা তার প্রদত্ত নাম আসাদুল্লাহ খান থেকে নেওয়া। তার কাব্যিক জীবনের প্রথম দিকেই তিনি ‘গালিব’ (যার অর্থ সর্বজয়ী, শ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম) নামটি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সাহিত্যকর্ম ও রচনাসমূহ
১. Diwan‑e‑Ghalib – তাঁর গজলসংকলন, যা আনুমানিক ২০০টি গজল অন্তর্ভুক্ত করে ।
২. Nuskha‑e‑Arshi, Nuskha‑e‑Hamidiya – মির্জা গালিবের পরিবর্তিত সংস্করণ, গবেষক ইমতিয়াজ আলি ‘আরশি’–র আবদ্ধ, ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত ।
৩. Letters (Khutoot‑e‑Ghalib) – গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সমসাময়িক ইতিহাসের দ্যর্শনযোগ্য বিবরণ ।
৪. Persian কবিতা ও prose – Masnavi, Odes, হালকা লিপিবদ্ধ গবেষণামূলক রচনাও অন্তর্ভুক্ত ।
বৈশিষ্ট্য ও দার্শনিক সূক্ষ্মতা
- দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি: জীবনের বেদনা, নিঃসঙ্গতা ও মৃত্যুর অভিঘাত তাঁর গজলে গভীরভাবে প্রতিফলিত। এক বিখ্যাত couplet–এ তিনি লিখেছেন:
“قید حیات و بند غم اصل میں دونوں ایک ہیں…”
- রূপ ও ভাষা: তাঁর গজলে ঐন্দ্রজালিক অলঙ্কার এবং সংক্ষিপ্ত তীব্রতা লক্ষণীয়। প্রেমিক-প্রিয়তমা ধ্রুপদী বিতর্ক আড়াল করে, ভাবের সারবত্তা ও विषাদ অনুভব হয় ।
- লেখার এবং চিঠির মানবীয়তা: সরল, হাস্যরসাত্মক ও আন্তরিক ভাষায় সাহিত্যিক আবেগ ফুটে ওঠে ।
সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ব্যক্তিজীবন
- সিপাহীবিদ্রোহের সাক্ষী: মির্জা গালিব দিল্লির পতনের সময়কার প্রভাবশালী ঘনিষ্ঠ চিত্রকর; সে সময়ের শোক ও ধ্বংসের শব্দ তিনি চিঠি ও কবিতায় পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন ।
- অর্থনৈতিক সংকট: নিত্যকালীন ব্যাধি ও পেনশন-সংঘর্ষে তিনি জীবন জুড়েছেন—কলকাতায় গিয়ে পেনশন চাইতে থাকেন ।
- রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা: ১৮৫০ সালে বাহাদুর শাহ জাফর তাঁকে “Dabir-ul-Mulk” ও “Najm-ud-Daulah” উপাধি দেন ।
পেনশন এবং পৃষ্ঠপোষকতা
গালিবকে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি সম্পত্তি অর্জন বা বাণিজ্যে নিযুক্ত হওয়ার চেয়ে পেনশন পাওয়া নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন। গালিব ১৮২৭ সাল পর্যন্ত তার চাচার সরকারি পেনশন থেকে প্রতি মাসে ৫২ রুপি এবং ৮ আনা বেতন পেতেন। তিনি কলকাতায় গিয়ে গভর্নর-জেনারেলকে একটি পিটিশন দাখিল করেন যাতে তিনি এই পেনশন থেকে টাকা পেতে পারেন। গালিবের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল রয়েল মুঘল দরবারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের উস্তাদ হওয়া। এই অবস্থান শুধু তার শৈল্পিক দক্ষতাই প্রমাণ করত না, বরং তাকে প্রতি মাসে ৪০০ রুপি বেতন দিত। রাজসভার আনুষ্ঠানিক কবি হওয়ার আগে, গালিবকে তৈমুর বংশের ইতিহাস নিয়ে লেখার জন্য প্রতি মাসে ৫০ রুপি বেতন দেওয়া হত।
চিঠি
গালিবের হাতে লেখা চিঠির একটি পাতা
মির্জা গালিব একজন প্রতিভাবান চিঠি লেখক ছিলেন[২১]। শুধু উর্দু কবিতা নয়, গদ্যও মির্জা গালিবের কাছে ঋণী। তার চিঠিগুলি সহজ এবং জনপ্রিয় উর্দুর ভিত্তি তৈরি করেছিল। গালিবের আগে, উর্দুতে চিঠি লেখা অত্যন্ত অলঙ্কৃত ছিল। তিনি এমন শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করে তার চিঠিগুলিকে “কথা” বানিয়েছিলেন যেন তিনি পাঠকের সাথে কথা বলছেন। গালিবের ভাষায়:
ہزار کوس سے بہ زبانِ قلم باتیں کرو
ہجر میں وصال کے مزے لیا کرو
হাজার মাইল দূর থেকেও কলমের ভাষায় কথা বলো,
বিচ্ছেদের মাঝেও মিলনের আনন্দ উপভোগ করো।
তার চিঠিগুলি খুব অনানুষ্ঠানিক ছিল; কখনও কখনও তিনি শুধু ব্যক্তির নাম লিখতেন এবং চিঠি শুরু করতেন। তিনি খুব হাস্যরসপূর্ণ ছিলেন এবং খুব আকর্ষণীয় চিঠি লিখতেন। এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “ম্যায় কশিশ করতা হুঁ কা কোই আইসি বাত লিখোঁ জো পড়ে খুশ হো যায়ে'” (আমি এমন কথা লিখার চেষ্টা করি যা যে কেউ পড়বে এবং আনন্দিত হবে)। কিছু পণ্ডিত বলেছেন যে কেবল তার চিঠির ভিত্তিতে গালিবের উর্দু সাহিত্যে একই স্থান থাকবে। রালফ রাসেল তার চিঠিগুলিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন দ্য অক্সফোর্ড গালিব-এ।
গালিব একটি অশান্ত সময়ের ইতিহাসবিদ ছিলেন। একের পর এক গালিব খাস বাজার, উর্দু বাজার, খারাম-কা বাজার এর মতো বাজারগুলি বিলীন হতে দেখেছিলেন, এবং পুরো মহল্লা (এলাকাগুলি) এবং কাত্রা (গলিগুলি) ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তার বন্ধুদের হাভেলি (অট্টালিকা) ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। গালিব লিখেছিলেন যে দিল্লি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। পানির অভাব ছিল। দিল্লি ছিল “একটি সামরিক শিবির”। এটি ছিল ফিউডাল এলিটের শেষ সময় যার মধ্যে গালিব অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি লিখেছেন:
ہے موجزن اک قلزم خوں کاش یہی ہو
آتا ہے ابھی دیکھیے کیا کیا مرے آگے
একটি রক্তের মহাসাগর আমার চারপাশে ফুঁসছে – আফসোস! এটাই কি সব ছিল?
ভবিষ্যতই বলবে আমার সামনে আরও কি কি অপেক্ষা করছে।
মির্জা গালিবের জীবনের গতিপথ পরিবর্তন
গালিবের কবিতা বা শায়ারি দিল্লির মুঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফরকে মুগ্ধ করেছিল। ব্রিটিশ শাসনের সময়, বাদশাহ ব্রিটিশ পেনশনভোগী হয়ে উঠেছিলেন। ব্রিটিশরা তাকে তার দর্শনার্থীদের সাথে, যাদের মধ্যে গালিবও ছিলেন, কঠোর নজরদারিতে রেখেছিল, কারণ তারা তার উপর সন্দেহ করছিল। গালিবের পেনশন ব্রিটিশরা স্থগিত করে দিয়েছিল। এটি গালিবকে তার পেনশন সম্পর্কে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলের কাছে আপিল করার জন্য কলকাতায় একটি দীর্ঘ যাত্রা করতে বাধ্য করেছিল।
মির্জা গালিবের কলকাতায় ভ্রমণ, যা তখনকার ক্যালকাটা নামে পরিচিত ছিল, তার সাহিত্যিক জীবনে একটি বিশাল পরিবর্তন এনেছিল।[২৪] মির্জা গালিব আনন্দের শহরে (সিটি অব জয়) এসে এ শহরের প্রেমে পড়েন। কলকাতার প্রতি তার ভালোবাসা তার একটি রচনায়, ‘সাফর-ই-কালকত্তাহ’, স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। সেখানে তিনি তার সরল বাসস্থান, হাভেলি নং ১৩৩, যা সিমলা মার্কেট এলাকায় অবস্থিত ছিল, সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি উর্দুতে কবিতা লিখতেন, কিন্তু এই ভ্রমণের পর থেকে তিনি ফারসিতে কবিতা লেখা শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে কলকাতার সাহিত্যিক পরিবেশ তার পরিচিত জগতের থেকে অনেক ভিন্ন। কলকাতায় অবস্থানের সময় তিনি অনেক সাহিত্যিক সভায় অংশগ্রহণ করেন, যা দিল্লির মতো রাজকীয় ছিল না। এই সভাগুলি ছিল অনেক বেশি উদার এবং নমনীয়, যা যে কোনো সৃজনশীল মনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
মির্জা গালিবের কলকাতায় অবস্থান তার সাহিত্যিক যাত্রার দিগন্তকে প্রসারিত করেছিল। তিনি নিজেকে কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং শহরের আলোকিত দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা ও সমালোচনা দুই-ই পান। এই সময়কালে, তিনি ফারসিতে দুটি মসনবি লিখেন, যেমন চিরাগ-এ দাইর (মন্দিরের প্রদীপ) এবং বাদ-এ মোকালিফ (বিপরীত বায়ু)। তার চিঠিগুলি তার কলকাতার প্রেমের কাহিনীকে সাক্ষ্য দেয়।
মির্জা আলি বখশ খানকে লেখা এক চিঠিতে তিনি জানান কিভাবে শহরটি তার হৃদয় চুরি করেছে এবং তাকে বিমোহিত করেছে। তিনি শহরটিকে এমন একটি জায়গা হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা মৃত্যুর ছাড়া সব কিছুর প্রতিকার প্রদান করে এবং শহরের প্রতিভাবান মানুষদের প্রশংসা করেন।
মোগল সম্রাট কর্তৃক প্রদত্ত উপাধি ও জীবনসংক্রান্ত বিবরণ
১৮৫০ সালে, মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর মির্জা গালিবকে দবীর-উল-মুলক (ফার্সি: دبیر الملک, অর্থ ‘রাষ্ট্রের সচিব’) উপাধিতে ভূষিত করেন। এর পাশাপাশি তাঁকে নজম-উদ-দৌলা (ফার্সি: نجم الدولہ, অর্থ ‘রাষ্ট্রের তারা’) নামে একটি অতিরিক্ত সম্মানসূচক খেতাবও দেওয়া হয়। এই উপাধিগুলো মির্জা গালিবের দিল্লির অভিজাত সমাজে অন্তর্ভুক্তির পরিচায়ক ছিল। এছাড়া, তিনি মির্জা নৌশা (ফার্সি: مرزا نوشہ) উপাধিও পেয়েছিলেন, যার ফলে ‘মির্জা’ শব্দটি তাঁর নামের অংশ হয়ে ওঠে।
মির্জা গালিব মোগল দরবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। সম্রাট বাহাদুর শাহ নিজেও কবি ছিলেন, ফলে ১৮৫৪ সালে গালিবকে তাঁর কবি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, সম্রাটের বড় পুত্র ফখর-উদ-দিন মির্জার শিক্ষক হিসেবেও তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মোগল দরবারে রাজকীয় ইতিহাসবিদ হিসেবেও গালিবের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সম্রাট তাঁকে তৈমুর বংশের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব দেন এবং এর জন্য প্রতি বছর ছয়শ’ রুপি ভাতা প্রদান করেন।
গালিবের মানসিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এই দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে কিছুটা স্থিতিশীল হয়। কিন্তু ইতিহাস রচনার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অধ্যবসায় ও ধৈর্য গালিবের মধ্যে ছিল না। ফলে, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই তিনি মোগল বংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের তুলনায় বেশি অগ্রগতি করতে পারেননি। তাঁর আর্থিক অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন এবং মাসিক ভাতা প্রাপ্তির জন্য তিনি সম্রাট বাহাদুর শাহকে চিঠি লিখেছিলেন, যা অনুমোদিত হয়।
তবে ১৮৫১ সালের মধ্যে গালিব সম্রাট হুমায়ূনের জীবনী রচনার ক্ষেত্রেও খুব অগ্রগতি করতে পারেননি। প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। তিনি যা লিখেছিলেন, তা ‘মিহির-ই-নিমরোজ’ নামে ১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হয়।
গালিবের কবি খ্যাতি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিনি অযোধ্যার নবাব ওয়াজিদ আলী শাহের ওপরও প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালান, যার ফলে নবাব তাঁকে বার্ষিক পাঁচশ’ রুপি ভাতা প্রদান করেন। এর ফলে অর্থনৈতিক সংকট কিছুটা কমলেও তাঁর স্বাস্থ্য ক্রমেই অবনতি হতে থাকে। চোখে এবং কানেও সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় তাঁর কবি বন্ধু মোমিন ও জওকের মৃত্যুর ফলে তিনি গভীরভাবে ব্যথিত হন।
১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ শাসন অযোধ্যাকে অধীনে নিয়ে আসে এবং একই বছরে মোগল সম্রাটের পুত্র মির্জা ফখরুদ্দিনের মৃত্যু হয়, যার ফলে গালিবের ভাতা দুই উৎস থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ভয়াবহ বিপর্যয় আসে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে। বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা মোগল বাদশাহর ভাতা বাতিল করে দেয়, যা মির্জা গালিবের জীবন ও আর্থিক অবস্থাকে পুনরায় সংকটময় করে তোলে।
গালিবের খ্যাতি যদিও জীবদ্দশায় সীমিত ছিল, তিনি নিজেই বিশ্বাস করতেন যে তাঁর আসল মর্যাদা ও স্বীকৃতি পরবর্তী প্রজন্ম তাকে দেবে।
উত্তরাধিকার ও প্রভাব
- উর্দু গজল শিল্পে অবদান: গজলকে মানুষের জীবনের দার্শনিক ছবি হিসেবে গড়ে তুলতে ভুমিকা রেখেছিল ।
- মৌখিক ও লেখার উভয় মাধ্যমে জনপ্রিয়: গজল ও চিঠি উভয়েই সাহিত্যে সারল্য ও গভীরতার দৃষ্টান্ত হয়ে আছে ।
- বালিবোধ্য ভাষা ও সাহিত্য: পরবর্তী কবি-গদ্যকারদের ওপর তাঁর ভাষাগত ও ভাবগত প্রভাব আজও প্রবল।
উপসংহার
মির্জা গালিব শুধু কবি নন, স্বয়ং এক সাহিত্যবিজ্ঞান ও ইতিহাসবিদ। তার জীবনের সংগ্রাম, রাজনৈতিক ও আত্মিক সংকট, গদ্য ও ছন্দের অনুপম সমন্বয়—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন দক্ষিণ এশিয়ার উর্দু ও ফার্সি সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা। মৃত্যুর পরে তাঁর গজল ও চিঠি আজও বিশ্বসাহিত্যে অমলিন অবদান রেখে চলেছে। পৃথিবীতে আজও গালিবের আত্মার স্পন্দন সুরে ও রশ্মিতে অনায়াসে অনুভূত হয়।
তথ্যসূত্র:
- জন্ম, শিক্ষা, ব্যথামূলক জীবন ও গজল শিল্প
- চিঠি, মৌখিকতা ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
- সাহিত্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
- https://www.munshiacademy.com/মির্জা-গালিব-জীবন-ও-সাহিত/