মহাকবি আলাওল – জীবনী


🖋️ মহাকবি আলাওল – জীবনী

সৈয়দ আলাওল (১৬০৭ – ১৬৮০) ছিলেন মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ মুসলমান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘পদ্মাবতী’ তাঁকে বাংলা কাব্যসাহিত্যে অমর করেছে। ভাষা, ছন্দ, অলঙ্কার ও ভাবের পরিশীলনে তিনি মধ্যযুগের কবিদের মধ্যে “শিরোমণি আলাওল” নামে খ্যাত।

আলাওল ১৬০৭ সালে ফতেহাবাদ (বর্তমান মাদারীপুর জেলার জালালপুর) এ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মজলিশ-ই-কুতুব ছিলেন স্থানীয় শাসনকর্তার অমাত্য। শৈশবেই বাংলা, আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃত ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তরুণ বয়সে জলদস্যুদের আক্রমণে পিতাকে হারিয়ে বন্দি হন ও আরাকান রাজ্যে দাসরূপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর প্রতিভা রাজদরবারে স্বীকৃতি পায়। আরাকান রাজা ও সভাসদ মাগন ঠাকুর তাঁর সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ দেন।

আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ (১৬৪৮) কবি মালিক মুহম্মদ জায়সীর ‘পদুমাবৎ’ কাব্যের বাংলা রূপান্তর, যেখানে প্রেম, নীতি ও মানবতাবাদ মিশেছে অনবদ্যভাবে। তিনি আরও রচনা করেন—‘সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল’, ‘সপ্ত পয়কর’, ‘সতীময়না লোরচন্দ্রানী’, ‘সিকান্দরনামা’, ও ‘তোহফা’। তাঁর কাব্যে ইসলামি ও হিন্দু ধর্মচেতনা, রূপক, মানবপ্রেম ও আধ্যাত্মিক ভাব একাকার।

আলাওলের কাব্য শুধু অনুবাদ নয়—সেগুলোতে ছিল দার্শনিক মনন, গভীর নন্দনচেতনা ও প্রেমমিশ্রিত নীতিবোধ। তিনি বাংলা সাহিত্যে আরবি-ফার্সি ও সংস্কৃত ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন।

১৬৮০ সালে আলাওল মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মরণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাহিত্য পুরস্কারের নামকরণ করা হয়েছে, যেমন—আলাওল সাহিত্য পুরস্কারচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হল




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *