ভাবছি আমি পাখি হবো-মমতাজ তপন
কবিতার নাম: ভাবছি আমি পাখি হবো
✍️ লেখক: মমতাজ তপন
🕊️ ধরন: চিন্তাধর্মী ও কাব্যিক কল্পনাপ্রবণ আত্মকথনমূলক কবিতা
নিশি রাতে একা বসে চাঁদের আলো দেখি,
হঠাৎ করে মনের খাতায় কল্পনাটা লেখি।
শূন্য আকাশ নীরব রাতে চাঁদের সাথে খেলে,
তাঁরার মালা গলায় পরে মনের পাখনা মেলে।
ভাবছি আমি পাখি হবো যাবো দূরের গাঁয়ে,
না হয় কোনো মাঝি হবো পালতোলা সেই নায়ে।
হয়তো কারো দুঃখ হবো চক্ষু ভালোবেসে,
না পাওয়া সুখ ভুলে যাবো মুচকি হেসে হেসে।
হারানো সে দিনগুলো আজ শুধু পিছু ডাকে,
মনের মাঝে কষ্ট এসে বিভোর করে রাখে।
আশা রাখি তবু আমি ওই আকাশের মতো,
কারো মনের ভাবনা হবো দিন চলে যাক যত।
কবিতা বিশ্লেষণ
প্রথম স্তবক বিশ্লেষণ:
নিশি রাতে একা বসে চাঁদের আলো দেখি,
হঠাৎ করে মনের খাতায় কল্পনাটা লেখি।
শূন্য আকাশ নীরব রাতে চাঁদের সাথে খেলে,
তাঁরার মালা গলায় পরে মনের পাখনা মেলে।
এই স্তবকে কবি এক নিঃসঙ্গ নিশার চিত্র আঁকেন, যেখানে তিনি চাঁদের আলোয় আবিষ্ট হয়ে কল্পনায় হারিয়ে যান। “মনের খাতায় কল্পনাটা লেখি”—এই পঙ্ক্তিতে কবির অন্তর্জগতের সৃষ্টিশীলতা ফুটে উঠেছে। চাঁদ ও তারার সঙ্গে মনের মিলন ঘটে এবং মনের পাখনা মেলে কল্পনার উড়ান শুরু হয়। এটি একটি রোমান্টিক ও বিমূর্ত ভাবনার বহিঃপ্রকাশ।
দ্বিতীয় স্তবক বিশ্লেষণ:
ভাবছি আমি পাখি হবো যাবো দূরের গাঁয়ে,
না হয় কোনো মাঝি হবো পালতোলা সেই নায়ে।
হয়তো কারো দুঃখ হবো চক্ষু ভালোবেসে,
না পাওয়া সুখ ভুলে যাবো মুচকি হেসে হেসে।
এই অংশে কবি রূপক এবং প্রতীক ব্যবহার করেছেন। পাখি হওয়া বা মাঝি হওয়া—উভয়টিই স্বাধীনতার, অভিযানের, এবং অন্যদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার ইচ্ছাকে তুলে ধরে। “কারো দুঃখ হবো চক্ষু ভালোবেসে”—এখানে কবি নিজেকে সহানুভূতির প্রতীক হিসেবে কল্পনা করেছেন। শেষ পঙ্ক্তির “না পাওয়া সুখ ভুলে যাবো মুচকি হেসে হেসে” দার্শনিক ও আত্মতৃপ্তির ইঙ্গিত বহন করে।
তৃতীয় স্তবক বিশ্লেষণ:
হারানো সে দিনগুলো আজ শুধু পিছু ডাকে,
মনের মাঝে কষ্ট এসে বিভোর করে রাখে।
আশা রাখি তবু আমি ওই আকাশের মতো,
কারো মনের ভাবনা হবো দিন চলে যাক যত।
এই স্তবকে রয়েছে কবির স্মৃতিচারণ এবং জীবনের প্রতি একটা দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি। হারানো দিনের স্মৃতি ও কষ্ট তাকে পিছু টানে, তবুও কবি আশাবাদী। “আশা রাখি তবু আমি ওই আকাশের মতো”—আকাশের মতো উদার, প্রশস্ত ও অন্তহীন হওয়ার ইচ্ছা কবি প্রকাশ করেছেন। শেষ পঙ্ক্তিতে কবি চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলতে চান অন্যের হৃদয়ে—যা একধরনের আত্মিক পরিপূর্ণতা এবং কাব্যিক আত্মপ্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত।
শৈলী ও কাব্যগুণ
- রূপক ব্যবহার: পাখি, মাঝি, আকাশ ইত্যাদি রূপকের মাধ্যমে কবি নিজের ইচ্ছা ও আত্মজিজ্ঞাসা প্রকাশ করেছেন।
- অনুভবের গভীরতা: কবিতাটি অন্তর্মুখী চেতনা ও জীবনের দর্শন তুলে ধরে।
- ছন্দ ও গঠন: চার পঙ্ক্তির স্তবকে বিন্যস্ত, ছন্দময় ও সুষমভাবে বিন্যস্ত।
- ভাষা: সহজ, সরল কিন্তু অর্থবহ। শব্দচয়ন কবিতার আবেগময়তা বাড়িয়েছে।
সারসংক্ষেপ:
“ভাবছি আমি পাখি হবো” কবিতাটি একজন চিন্তাশীল মানুষের মনের গভীরতা, কল্পনা, অতীত স্মৃতি এবং ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। কবিতার ভাব, ভাষা ও রূপক মিলে এটি একটি গভীর ও আবেগময় আত্মপ্রকাশের কাব্যরূপ।