বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়: জীবনী

Spread the love
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, Bibhutibhushan_Bandopadhyay
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, Bibhutibhushan_Bandopadhyay

🔶 বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় : জীবন ও সাহিত্যকর্ম 🔶

🔷 পরিচিতি

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ – মৃত্যু: ১ নভেম্বর ১৯৫০) বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার লেখা উপন্যাস, ছোটগল্প, দিনলিপি, ভ্রমণকাহিনি ও কিশোরসাহিত্যের জন্য তিনি স্মরণীয়। বিশেষ করে ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’ উপন্যাস তাকে অমর করে রেখেছে সাহিত্যের পাঠকমনে।

🔷 জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি

🔹 জন্মস্থান: মুরাতিপুর গ্রাম, উত্তর ২৪ পরগণা, বাংলা প্রদেশ
🔹 পিতামহ: কবিরাজ
🔹 পিতা: মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় — সংস্কৃত পণ্ডিত, শাস্ত্রী উপাধিপ্রাপ্ত
🔹 মাতা: মৃণালিনী দেবী
🔹 পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বিভূতিভূষণ ছিলেন জ্যেষ্ঠ সন্তান

🔷 শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবন

🔸 শৈশবেই সংস্কৃত ও প্রাথমিক পাঠ পিতার নিকট শুরু
🔸 বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন
🔸 অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হওয়ায় অবৈতনিকভাবে পড়াশোনার সুযোগ পান

🔷 বিবাহ ও ব্যক্তিগত জীবন

🔹 প্রথম স্ত্রী: গৌরী দেবী (বিবাহ: ১৯১৭, মৃত্যু: ১৯১৮)
🔹 দ্বিতীয় স্ত্রী: রমা দেবী (বিবাহ: ১৯৪০)
🔹 সন্তান: তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

🔷 কর্মজীবন

🔸 শিক্ষকতা দিয়ে শুরু — দ্বারকানাথ হাইস্কুল, ধর্মতলা মেমোরিয়াল স্কুল, গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশন
🔸 কিছুদিন কাজ করেন খেলাৎচন্দ্র ঘোষের এস্টেটে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে
🔸 গোপালনগরের স্কুলে কর্মরত থাকাকালীনই মৃত্যুবরণ করেন

🔷 সাহিত্যজীবনের সূচনা

🔹 ১৯২১ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় “উপেক্ষিতা” গল্প প্রকাশ
🔹 ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ — যা সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র উভয় ক্ষেত্রেই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে
🔹 “অপরাজিত”, “চাঁদের পাহাড়”, “আরণ্যক”, “আদর্শ হিন্দু হোটেল”, “ইছামতী”, “অশনি সংকেত” তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম

🔷 চলচ্চিত্রে অনুবাদ

🔸 সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘অপুর সংসার’ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত
🔸 ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘অশনি সংকেত’, ‘নিশিপদ্ম’ প্রভৃতি উপন্যাস ও ছোটগল্প চলচ্চিত্রে রূপায়িত
🔸 ‘চাঁদের পাহাড়’ ও ‘আমাজন অভিযান’ রূপকথার মতো অভিযানমূলক কাহিনির ভিত্তি

🔷 পুরস্কার ও সম্মাননা

🏆 রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫১) – মরণোত্তর, ‘ইছামতী’ উপন্যাসের জন্য
🏞️ ‘বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’ — তার সম্মানে নামকরণকৃত

🔷 মৃত্যুবরণ

📍 ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর, ঘাটশিলায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ
📍 তার বাড়ি ‘গৌরীকুঞ্জ’ — স্ত্রীর নামে নামাঙ্কিত
📍 শেষকৃত্য হয় সুবর্ণরেখা নদীর তীরে পঞ্চপাণ্ডব ঘাটে

🔷 স্মৃতিঘাট

🕊️ বনগাঁর টালিখোলা মোড়ে ‘বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাট’ — যেখানে তার মূর্তি, অতিথিশালা ও ঝুলন্ত সেতু রয়েছে
🕊️ এই স্থান এখনও ইছামতির ধারে একটি নৈসর্গিক প্রেরণার স্থান

🔷 সাহিত্যকর্মের পরিসর

📚 উপন্যাস: পথের পাঁচালী, অপরাজিত, চাঁদের পাহাড়, আরণ্যক, ইছামতী, আদর্শ হিন্দু হোটেল, দেবযান ইত্যাদি
📚 গল্পগ্রন্থ: মেঘমল্লার, মৌরীফুল, যাত্রাবদল, তালনবমী
📚 কিশোরসাহিত্য: চাঁদের পাহাড়, মরণের ডঙ্কা বাজে, সুন্দরবনের সাত বৎসর
📚 ভ্রমণকাহিনি: অভিযাত্রিক, বনে পাহাড়ে, হে অরণ্য কথা কও
📚 অন্যান্য: দিনের পরে দিন, বিচিত্র জগত, আমার লেখা, পত্রাবলী

🔷 উপসংহার

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এমন একজন সাধক, যিনি প্রকৃতি, জীবন এবং সমাজের সূক্ষ্মতম অনুভূতিকে সাহিত্যের পাতায় জীবন্ত করে তুলেছেন। তার রচনার মধ্যে রয়েছে এক গভীর মানবতাবোধ, দর্শন ও সাহিত্যিক রস। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান চিরস্মরণীয়।

 

https://www.munshiacademy.com/বিভূতিভূষণ-বন্দ্যোপাধ্য/

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *