🖋️ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : জীবন ও সাহিত্যকর্ম

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যে ক’জন মনীষী চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, তাদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) অন্যতম। তিনি বাংলা উপন্যাসের পথিকৃত, গদ্য সাহিত্যের আধুনিক রূপদাতা এবং বাংলার সাহিত্যসম্রাট হিসেবেও পরিচিত। ‘বন্দে মাতরম’ কাব্যাংশের স্রষ্টা এই মনীষী সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
🔸 জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি
📍 জন্ম: ২৬ জুন ১৮৩৮
📍 স্থান: কাঁঠালপাড়া গ্রাম, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগণা, ব্রিটিশ ভারত
👨👩👦 পিতা: যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (ডেপুটি কালেক্টর)
👩 মাতা: দুর্গাসুন্দরী দেবী
👨👦 ভাই: সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক)
🔸 শিক্ষা জীবন
📚 প্রথম শিক্ষা শুরু হয় মেদিনীপুর ইংরেজি স্কুলে।
📌 হুগলি কলেজে দীর্ঘ সাত বছর অধ্যয়ন করেন।
🎓 প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইন পড়েন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম B.A. ডিগ্রিধারী (১৮৫৯ সালে যদুনাথ বসুর সঙ্গে)।
📜 ছাত্রজীবনে কবিতা লেখেন এবং ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
🔸 কর্মজীবন
👨⚖️ ব্রিটিশ শাসনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন (১৮৫৮–১৮৯১)।
🏅 ১৮৯১ সালে ‘রায় বাহাদুর’ উপাধি ও ১৮৯৪ সালে ‘Companion of the Most Eminent Order of the Indian Empire (CIE)’ খেতাবে ভূষিত হন।
📍 কর্মস্থল: যশোর, খুলনা, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, আলিপুর, হাওড়া, ঝিনাইদহ প্রভৃতি।
🔸 পারিবারিক জীবন
👰 প্রথম বিবাহ: ১৮৪৯ সালে মোহিনী দেবীর সঙ্গে (তাঁর মৃত্যু ১৮৫৯ সালে)
👰 দ্বিতীয় বিবাহ: ১৮৬০ সালে রাজলক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে
🔸 সাহিত্যকর্ম
📘 বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা সাহিত্যে প্রথম আধুনিক উপন্যাস লেখেন।
🖋️ তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উপন্যাস রচনা করেন।
📖 তার সাহিত্যকর্ম ‘বঙ্কিমী রীতি’ নামে খ্যাত।
🔹 উপন্যাসসমূহ:
- দুর্গেশনন্দিনী (প্রথম সার্থক বাংলা উপন্যাস)
- কপালকুণ্ডলা
- মৃণালিনী
- বিষবৃক্ষ
- কৃষ্ণকান্তের উইল
- রাজসিংহ
- চন্দ্রশেখর
- রজনী
- আনন্দমঠ (ভেতরে “বন্দে মাতরম” কবিতা অন্তর্ভুক্ত)
- দেবী চৌধুরানী
- সীতারাম
(তিনটি উপন্যাস ত্রয়ী: দেবী চৌধুরানী, আনন্দমঠ, সীতারাম)
✍️ ইংরেজি উপন্যাস: Rajmohan’s Wife
🔹 প্রবন্ধ ও অন্যান্য গ্রন্থ:
- কমলাকান্তের দপ্তর (ব্যঙ্গ ও সমালোচনা)
- কৃষ্ণচরিত্র
- বিজ্ঞানরহস্য
- সাম্য
- মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত
- লোকরহস্য
- শ্রীমদ্ভগবদগীতা (ভাষ্য সহ)
- ললিতা (গল্প)
- ধর্ম্মতত্ত্ব
- সহজ রচনা শিক্ষা
🔹 জীবনী ও সম্পাদনা:
- দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী
- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী
- বাঙলা সাহিত্যে প্যারীচাঁদ মিত্রের স্থান
🔸 ‘বন্দে মাতরম’ ও জাতীয় প্রেরণা
📜 “আনন্দমঠ” উপন্যাসে সংযুক্ত ‘বন্দে মাতরম’ কবিতাটি পরবর্তীতে ভারতের জাতীয় স্তোত্ররূপে (১৯৩৭ সালে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে) গৃহীত হয়।
🇮🇳 এই গান ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণাসূত্রে পরিণত হয়।
🔸 মৃত্যু
🕯️ মৃত্যু: ৮ এপ্রিল ১৮৯৪
📍 স্থান: কলকাতা
⚰️ মৃত্যুর সময় তিনি বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
🔹 উপসংহার
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শুধুই একজন সাহিত্যিক নন; তিনি ছিলেন জাতীয় চেতনার প্রবর্তক, সাহসী চিন্তক এবং নতুন যুগের অগ্রদূত। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান চিরস্মরণীয়। ‘বন্দে মাতরম’ কেবল কবিতা নয়—এটি বাঙালি আত্মমর্যাদার প্রতীক, যার রচয়িতা ছিলেন এই মহান মনীষী।
https://www.munshiacademy.com/বঙ্কিমচন্দ্র-চট্টোপাধ্য/