বই পর্যালোচনা / রিভিউ

নিচে “বুক রিভিউ যেভাবে লিখবেন” লেখাটি সম্পাদনা, বিন্যাস ও পাঠযোগ্যতা বাড়িয়ে সুগঠিত আকারে উপস্থাপন করা হলো—


📚 বুক রিভিউ যেভাবে লিখবেন

🔹 ভূমিকা

একটি বই পড়া শেষ হওয়ার পরও তার রেশ থেকে যায় পাঠকের মনে। বইপড়ুয়াদের প্রিয় এক কাজ হলো সেই অনুভব ও বিশ্লেষণকে ‘জাবর কাটা’—অর্থাৎ বইটি নিয়ে ভাবনা ও আলোচনা করা।
এই ভাবনাকে প্রকাশ করার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হলো বুক রিভিউ। এতে পাঠক নিজের বিশ্লেষণ প্রকাশ করতে পারেন, পাশাপাশি অন্যদেরও বইটি সম্পর্কে ধারণা দেন।

🔹 রিভিউ লেখার মানসিক প্রস্তুতি

লেখক যখন বই লেখেন, তা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। কিন্তু একজন রিভিউয়ার বইটি বিশ্লেষণ করেন নিজের চিন্তাভাবনা ও পাঠ-অভিজ্ঞতার আলোকে।
তবে এ বিশ্লেষণ যেন বস্তুনিষ্ঠতার সীমা ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত পক্ষপাতদুষ্টতা না হয়—সে ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।
ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি যেমন—“আমার মনে হয়”, “আমার প্রিয় বই”, “আমার ভালো লাগেনি”—এ ধরনের বাক্য ব্যবহার না করাই শ্রেয়।


🔹 শিরোনাম ও ভূমিকা অংশ

রিভিউর শুরুতেই একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম দিতে হবে।
শিরোনামে বইয়ের নাম থাকলে পাঠকের জন্য তা সহজ হয়।
এরপর আসে লেখার প্রাথমিক কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ—ভূমিকা বা ইন্ট্রোডাকশন (সংক্ষেপে ইন্ট্রো)

ইন্ট্রো হতে হবে সংক্ষিপ্ত, সরল ও চিত্তাকর্ষক—যাতে পাঠক পুরো লেখাটি পড়তে আগ্রহী হন।
অনেকে লেখার শুরুতেই ইন্ট্রো নিয়ে আটকে যান; এ অবস্থায় পুরো লেখা শেষ করে পরে ইন্ট্রো লিখে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।


🔹 কাহিনির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

রিভিউতে বইয়ের কাহিনির একটি সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ দেওয়া যেতে পারে। তবে এ অংশে সংযম প্রয়োজন।
বেশি কাহিনি বললে লেখা একঘেয়ে হয়ে পড়ে এবং রিভিউ মূল উদ্দেশ্য হারায়। মনে রাখতে হবে—রিভিউ বইয়ের কাহিনি শোনানোর জন্য নয়, বই নিয়ে আলোচনা করার জন্য।


🔹 প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ

প্রত্যেক বইয়ের পেছনে থাকে একটি সময়, সমাজ বা সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট। এটি হতে পারে রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক বা ব্যক্তিগত আবেগনির্ভর।
রিভিউতে প্রেক্ষাপটের উল্লেখ জরুরি, কারণ এটি বইটির ঘরানা (Genre) নির্ধারণে সহায়তা করে।

সব পাঠকের পছন্দ এক নয়—কেউ ফিকশন ভালোবাসেন, কেউ ইতিহাস বা আত্মজীবনী। তাই রিভিউতে ঘরানা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা এবং প্রয়োজনে অনুরূপ বই বা ঘটনার সাদৃশ্য উল্লেখ করা যেতে পারে।


🔹 ভালো-মন্দ দিক বিশ্লেষণ

রিভিউর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ। এখানে তিনটি বিষয় ভারসাম্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতে হবে—

  1. বইটির ভালো দিক,
  2. দুর্বল দিক,
  3. কী করলে আরও উন্নত করা যেত।

ভালো দিক উল্লেখে অতিরিক্ত বিশেষণের ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত, আবার সমালোচনায়ও ভাষা হতে হবে সংযত ও ভদ্র
গঠনমূলক সমালোচনাই রিভিউর প্রাণ।
এছাড়া কোন ধরনের পাঠক বইটি উপভোগ করবেন, সেটিও উল্লেখ করলে পাঠকের বই নির্বাচন সহজ হয়।


🔹 লেখক পরিচিতি

বই লেখকের বিষয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য যোগ করা যেতে পারে—তবে সংক্ষেপে।
রিভিউ করা বইটির লেখার সময় লেখকের মানসিক অবস্থা বা অভিজ্ঞতা যোগ করলে লেখাটি আরও গভীরতা পায়।


🔹 উদ্ধৃতি যোগের গুরুত্ব

রিভিউতে উদ্ধৃতি যোগ করা বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু এটি লেখাকে আকর্ষণীয় ও মানবিক করে তোলে।
বইয়ের একটি সংলাপ, উক্তি বা বিখ্যাত বাক্য রিভিউতে সংযোজন করলে পাঠকের মনোযোগ বাড়ে।

তবে উদ্ধৃতি এক বা দুইটির বেশি নয়, এবং সংক্ষিপ্ত হওয়াই ভালো।
উদাহরণস্বরূপ—বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’ রিভিউতে সেই বিখ্যাত সংলাপ—

“পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?”
যোগ করলে লেখার আবেদন বেড়ে যায়।


🔹 উপসংহার

যেকোনো লেখার মতো রিভিউতেও শেষ কথাটি গুরুত্বপূর্ণ।
শেষাংশে উল্লেখ করা যেতে পারে—

  • বইটি কোন পাঠকের জন্য উপযুক্ত,
  • কোন ঘরানার প্রেমীরা এটি উপভোগ করবেন,
  • অথবা বইটি কেন পড়া উচিত, সে বিষয়ে একটি অনুরোধ বা সুপারিশ।

এই অংশই লেখাটিকে পরিপূর্ণতা দেয়।


🔸 সারাংশে

একটি সফল বুক রিভিউ হলো—

“বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ, সুষম ভাষা ও পাঠকের আগ্রহ সৃষ্টির মিশ্রণ।”

এতে থাকে সংক্ষিপ্ত কাহিনি, প্রেক্ষাপট, লেখক ও বইয়ের বিশ্লেষণ, সঙ্গে পাঠকের জন্য স্পষ্ট বার্তা—
বইটি পড়ার মতো কি না, কেন পড়া উচিত।