Protidan-Josimuddin, প্রতিদান-জসীমউদদীন
Spread the love

প্রতিদান কবিতার ব্যাখ্যা ও সৃজনশীল প্রশ্ন

প্রতিদান 

জসীমউদদীন

ধরন: কবিতা

আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিবাগী-
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি,
দিঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর;
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।
আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি,
যে গেছে বুকে আঘাত করিয়া তার লাগি আমি কাঁদি।
যে মোরে দিয়েছে বিষে-ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুকভরা গান,
কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর,-
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি
রঙিন ফুলের সোহাগ-জড়ানো ফুল মালঞ্চ ধরি।
যে মুখে কহে সে নিঠুরিয়া বাণী,
আমি লয়ে করে তারি মুখখানি,
কত ঠাঁই হতে কত কীযে আনি সাজাই নিরন্তর-
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

 

 

 

কবিতার ছন্দ

১. ছন্দের ধরন:

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ

প্রতি পংক্তিতে নির্দিষ্ট মাত্রার সংখ্যা থাকে (সাধারণত ১৪ বা ১৬ মাত্রা)।

ধ্বনিগত ভারসাম্য ও স্বরবৃত্তের উপর ছন্দ নির্ভর করে না, বরং মাত্রা গণনা করে ছন্দ গঠিত হয়।

 

২. পঙ্‌ক্তি উদাহরণ ও বিশ্লেষণ:

পঙ্‌ক্তি:

> “আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর,”

 

এই পঙ্‌ক্তিটি ১৬ মাত্রার:

মাত্রা গোনা (স্বরবর্ণ = ১ মাত্রা, ব্যঞ্জনবর্ণ = ০, যুক্তাক্ষর ও দীর্ঘ স্বরবর্ণ = ১ মাত্রা):
আ-মা-র / এ / ঘ-র / ভা-ঙি-য়া-ছে / যে-বা / আ-মি / বা-ধি / তা-র / ঘ-র
= ২ + ১ + ১ + 3 + 2 + 2 + 2 + 1 + 2 = 16 মাত্রা (প্রায়)

৩. ছন্দ বিন্যাসের বৈশিষ্ট্য:

প্রতিটি চরণ প্রায় সমান মাত্রার (মূলত ১৪-১৬ মাত্রার মাঝে)।

ছন্দে রয়েছে আন্তরিক সুর ও সংগীতের ধারা।

পদ্যরীতি অনুসারে ছন্দে আঘাত (caesura) ও বিশ্রামচিহ্ন লক্ষণীয়।

 

৪. অলঙ্কার ও ধ্বনি ব্যবহার:

অনুপ্রাস অলঙ্কার:

> “বুক ভরি রঙিন ফুলের সোহাগ-জড়ানো ফুল মালঞ্চ ধরি”
— “ফুল”, “ফুলি”, “ধরি” শব্দের পুনরাবৃত্তি ছন্দকে মধুর করে তোলে।

 

পুনরুক্তি:

> “আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর”
— বারবার এই পঙ্‌ক্তিটি ফিরে আসে, কবিতায় গীতিধর্মিতা সৃষ্টি করে।

 

৫. উপসংহার:

“প্রতিদান” কবিতাটি একটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দের মর্মস্পর্শী পদ্য, যেখানে জসীমউদ্দীন তাঁর স্বতন্ত্র গ্রামীণ ভাষা, ছন্দ ও সুরের ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন। ছন্দ কবিতার আবেগকে আরও বেশি গাঢ় ও শ্রুতিমধুর করে তোলে।

 

 

নিচে জসীমউদদীন-এর “প্রতিদান” কবিতা থেকে ৩০টি জ্ঞানমূলক প্রশ্ন (Knowledge-based) এবং ৩০টি অনুধাবনমূলক প্রশ্ন (Comprehension-based) দেওয়া হলো। প্রশ্নের পাশে (✓) বা (★) চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে বুঝার সুবিধার্থে।

✅ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন (Knowledge-Based Questions):

১. কবিতাটির নাম কী? (✓)
২. কবিতাটির রচয়িতা কে? (✓)
৩. কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত? (✓)
৪. কবিতার প্রথম চরণ কী? (✓)
৫. “আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা…” — এখানে ‘যেবা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
৬. কবিতাটিতে মোট কয়টি স্তবক আছে?
৭. “আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই” – এই চরণ কতবার এসেছে?
৮. “আমি বাঁধি তার ঘর” – এখানে ‘আমি’ কার প্রতীক?
৯. “বিষে-ভরা বাণ” – কার দেওয়া?
১০. কবিতায় “ঘর” শব্দটি কী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে?
১১. “বিবাগী” শব্দের অর্থ কী?
১২. কবিতায় “দিঘল রজনী” কী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে?
১৩. “ঘুম যে হরেছে মোর”— এখানে ঘুম কে নিয়েছে?
১৪. “ফুল মালঞ্চ” কী?
১৫. “নিঠুরিয়া বাণী” কার মুখে কবি শুনেছেন?
১৬. কবিতাটি কোন সাহিত্যধারার অন্তর্গত?
১৭. কবি কিসের প্রতিদান দিচ্ছেন?
১৮. “কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান”— এখানে ‘ফুল’ কোন গুণের প্রতীক?
১৯. কবিতায় কতবার “আমার এ ঘর…” চরণ এসেছে?
২০. কবিতার শেষে কবি কী করেন?
২১. “সারাটি জনম-ভর”— এখানে ‘জনম’ কোন সময় বোঝায়?
২২. কবিতাটিতে কোন রূপক ব্যবহৃত হয়েছে?
23. “বুকে কবর”— এটি কোন চিত্রকল্পের উদাহরণ?
২৪. “রঙিন ফুলের সোহাগ”— কোন মানসিক অবস্থার প্রতীক?
২৫. কবিতার রচনাকাল জানা আছে কি?
২৬. কবিতাটি কোন শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত?
২৭. কবির জীবনদর্শন কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এ কবিতায়?
২৮. “কাঁদিয়া বেড়াই”— এখানে ‘বেড়ানো’ কী বোঝায়?
২৯. কবিতাটিতে কোন ধরনের ভালবাসা উপস্থাপিত হয়েছে?
৩০. “ঘর ভাঙা” ও “ঘর বাঁধা”— দুটি বিপরীত চিত্র কী বোঝায়?

★ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন (Comprehension-Based Questions):

১. কবি যাকে ভালোবাসেন, সে কেন কবিকে “পর” করেছে? (★)
২. কবি যিনি কষ্ট দিয়েছেন, তাকে কেন ভালোবাসেন?
৩. কবিতা থেকে বোঝা যায় কবির ভালোবাসা কেমন?
৪. কবির “বিবাগী” হয়ে যাওয়ার কারণ কী ছিল?
৫. “বিষে-ভরা বাণ” সত্ত্বেও কবি কেন গান দেন?
৬. কবি নিজের ঘর ভেঙে অন্যের ঘর বাঁধেন কেন?
৭. “আমি তার বুক ভরি রঙিন ফুলের সোহাগ…” – এই ব্যবহার কী বোঝায়?
৮. কবিতায় কবির আত্মত্যাগ কতটা গভীরভাবে ফুটে উঠেছে?
৯. কবি কি প্রতিদানের আশা করেন? ব্যাখ্যা করো।
১০. কবিতার পুনরুক্ত পঙ্‌ক্তিগুলো কী আবেগ সৃষ্টি করে?
১১. কবির ভালোবাসা কী নিঃস্বার্থ?
১২. “আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই”— এই আকুতি কতটা গভীর?
১৩. কবিতার রূপকগুলো কীভাবে কবির ব্যথা প্রকাশ করে?
১৪. “ঘুম হরেছে মোর” — এই লাইন কবির কোন ত্যাগ বোঝায়?
১৫. কবিতা পাঠের পর পাঠকের মনে কী অনুভূতি জাগে?
১৬. কবি কার প্রতি এতটা অনুরক্ত ছিলেন বলে মনে হয়?
১৭. কবির চোখে ভালোবাসা ও প্রতিদান কেমন হওয়া উচিত?
১৮. কবি যাঁকে “নিঠুর” বলেছেন, তিনি আদতে কীভাবে আচরণ করেছেন?
১৯. কবিতাটি কি কেবল প্রেমের? না কি এর গভীর অর্থ আছে?
২০. কবিতায় কবির ব্যথা কি সমাজের ব্যথার প্রতীক?
২১. কবির ভালোবাসা কি দুর্বলতা না শক্তি?
২২. “ফুল মালঞ্চ ধরি”— এই লাইন দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
২৩. কবিতায় ব্যবহার করা প্রতীকগুলো কীভাবে কাহিনির আবেগকে বাড়িয়েছে?
২৪. কবিতা থেকে তুমি কী নৈতিক শিক্ষা পেলে?
২৫. কবির পংক্তিগুলো কি কেবল ব্যক্তিগত না কি সার্বজনীন?
২৬. “কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান”— এটি কোন মানবিক গুণের দৃষ্টান্ত?
২৭. কবি যে যন্ত্রণা বর্ণনা করেছেন, তা কি প্রতিদান না পাওয়ার?
২৮. কবিতাটি কোন একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের না কি প্রতীকী?
২৯. কবিতার মাধ্যমে কবি কী বার্তা দিতে চেয়েছেন?
৩০. যদি তুমি কবির জায়গায় থাকতে, তবে তুমি কী করতে?

 

জসীমউদ্দীনের ‘প্রতিদান’ কবিতা থেকে দুটি সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হলো, যা শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণমূলক ও অনুধাবনমূলক দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক:

📝 সৃজনশীল প্রশ্ন ১:

উদ্দীপক:
একজন ব্যক্তি প্রতিনিয়ত কবিকে কটু কথা বলেন, তাঁর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন। তবুও কবি তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রকাশ করেন, তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে চান।

ক. কবি কাকে বুকভরা গান দেন?
খ. কবিকে যে পর করেছে, তাকে আপন করার জন্য তিনি কেন কেঁদে বেড়ান?
গ. উদ্দীপকের পরিস্থিতির সঙ্গে ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “ভালোবাসা ও সহানুভূতির মাধ্যমে শত্রুকেও আপন করা যায়”—উক্তিটি উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

📝 সৃজনশীল প্রশ্ন ২:

উদ্দীপক:
একজন ব্যক্তি কবির প্রতি অবিচার করেছেন, তাঁর ঘর ভেঙে দিয়েছেন। তবুও কবি সেই ব্যক্তির জন্য নতুন ঘর তৈরি করেন এবং তাঁর মঙ্গল কামনা করেন।

ক. কবি কাঁটার প্রতিদানে কী দান করেন?
খ. কবি নিজের ঘর ভাঙার প্রতিদান দিতে অন্যের ঘর বেঁধে দেন কেন?
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সঙ্গে ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবের মিল ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সহিষ্ণুতা ও ক্ষমাশীলতাই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি”—উক্তিটি উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

 

 

“প্রতিদান” কবিতার বুদ্ধিবৃত্তিক ও রম্য ব্যাখ্যা (Jasimuddin’s “Protidaan”)

ভূমিকা:

জসীমউদ্দীন বাংলা সাহিত্যের একজন হৃদয়স্পর্শী কবি, যাঁর লেখনীতে গ্রামীণ জীবনের আবেগ, মূল্যবোধ, ত্যাগ, ও বাস্তবতা এক আশ্চর্য দক্ষতায় প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর “প্রতিদান” কবিতাটি হলো একতরফা ভালোবাসা ও নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের এক অসাধারণ প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এই কবিতা কেবল আবেগ নয়; এতে রয়েছে গভীর বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন, মানবিক মূল্যবোধের পরীক্ষা, এবং আমাদের সমাজের এক নির্মম বাস্তবতা। তবে একটু হালকা রম্যতার সাথে বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি যেমন উপভোগ্য হয়, তেমনি উপলব্ধিও আরও গভীর হয়।

কবিতার সারমর্ম (সংক্ষেপে):

এই কবিতায় কবি বলেছেন—

  • তিনি যাঁর জন্য নিজেকে ভেঙেছেন, সেই ব্যক্তি তাঁর জীবন গড়ে তুলেছে।
  • যে তাঁকে কষ্ট দিয়েছে, অবহেলা করেছে, সেই ব্যক্তিকে কবি ভালোবেসে গেছেন।
  • এমনকি যিনি তাঁর হৃদয়ে কবর গেঁথেছেন, তাঁর বুক তিনি ফুলে ভরিয়ে দিয়েছেন।
  • “আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর”— এই চরণে কবির হৃদয়ভাঙা আকুতি বারবার ফিরে আসে।

বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ:

১. আত্মপরিচয় বনাম সম্পর্কের দ্বন্দ্ব:

কবি এখানে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন— আমি যদি নিজেকে বিসর্জন দিয়ে অন্যকে গড়ি, তবে আমি কে? আমার অস্তিত্ব কোথায়? এই প্রশ্নটি আজকের দিনে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। ধরুন, আপনি একজন মা বা বাবা, ছেলেকে বিদেশে পড়তে পাঠিয়েছেন, গরু-ছাগল বেচে, কষ্ট করে। ছেলে ওখানে গিয়ে একটা জ্যাকেট কিনে আপনাকে ভুলে যায়— তখন কি আপনি নিজেকে মানুষ ভাববেন, না শুধুই একটি সিঁড়ি?

এ যেন সেই সফরের সিঁড়ি— যেটায় পা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেলে, তাকিয়ে আর কেউ দেখে না।

২. একতরফা ভালোবাসার দার্শনিক দিক:

এই কবিতা প্রশ্ন তোলে—ভালোবাসা কি কেবল বিনিময়ের জন্য? না কি নিঃস্বার্থ হওয়াই ভালোবাসার প্রকৃতি? কবি যে ভালোবাসা দিয়েছেন, তা ‘পরিবর্তে কিছু পাবো’ এমন আশায় নয়। একে আধুনিক পরিভাষায় বলা যায় “Emotional Investment without ROI”

আজকাল আমরা প্রেমে পড়ার আগে বাজেট করি— “ওকে উপহার দিলে ও আমাকে কী দেবে?” আর কবি বলছেন, “ও বিষ দিক, আমি গান দেব।”

এ যেন কেউ আপনাকে থাপ্পড় মারছে আর আপনি বলছেন— “ভালোবাসা লাগে ভাই, আর একটু জোরে মারেন।”

বাস্তব উদাহরণ (একটু রম্যভাবে):

কেস স্টাডি ১: ‘মা’ ও ‘ব্যাংকার পুত্র’

গ্রামে মা গরু বেচে ছেলেকে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দিলেন। ছেলের গ্রুপ ছবি ফেসবুকে, চোখে রে-ব্যান, হাতে স্টারবাকস কফি, মায়ের সাথে ছবি নাই। মা শহরে গিয়ে ছেলের বাসায় গেল, গেট থেকে কনডাক্টর বলল, “ম্যাডাম, কার সাথে দেখা করতে চান?”

ছেলে বাইরে এসে বলল, “মা, তোমাকে তো বলেছি, আমার রুমমেটরা একটু… মানে… শহুরে, তুমি এখন বাড়ি যাও, পরে কথা বলব।”
মা ফেরা পথে কাঁদছে—এ যেন “আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই”–এর জীবন্ত রূপ।

কেস স্টাডি ২: প্রেমিক প্রেমিকাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়

প্রেমিকা চায় সি-ভিউ টেবিল, প্রেমিকের বাজেট ‘লুচি-মাংস’ পর্যন্ত। প্রেমিকা বলে, “তুমি কি আমাকে সত্যি ভালোবাসো?” প্রেমিক কাঁপা গলায় উত্তর দেয়, “তোমার জন্য EMI দিয়ে বেঁচে আছি!”
শেষমেশ মেয়েটি ব্লক করে দেয়, এবং প্রেমিক স্ট্যাটাস দেয়— “যে মোরে করেছে পর, আমি ফিরি তার লাগি…”

রম্যতা দিয়ে কবিতার রূপক ব্যাখ্যা:

“আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর”

= আপনি প্রেমে পড়ে নিজের সব আশা বিসর্জন দিলেন, আর সে আপনাকে ব্লক করে বিয়ের ছবি পোস্ট করলো।

“যে মোরে দিয়েছে বিষে-ভরা বাণ, আমি দেই তারে বুকভরা গান”

= চাকরির ইন্টারভিউতে বস বলল, “You are overqualified.” আপনি ফিরে এসে বসের জন্য LinkedIn-এ endorsement দিলেন।

“মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি রঙিন ফুলের সোহাগ-জড়ানো মালঞ্চ ধরি”

= সাবেক প্রেমিকার বিয়েতে আপনি নিজেই বিয়ের কেক আনলেন। বুদ্ধি লোপ পেলেও হৃদয় অক্ষত!

গভীর মানবিক দিক:

এই কবিতা আমাদের বোঝায়, ত্যাগই ভালোবাসার পরিণতি, প্রতিদান নয়। এই ‘বিরহ’ বা ‘অবহেলা’ যেন এক মনের ধ্যান— কবি বুঝেছেন, ভালবাসা চাওয়া নয়, দেয়া। এটি ‘ভালবাসার ধর্মীয় রূপ’— যেমন একটি প্রদীপ নিজে জ্বলেও আলো বিলায়।

শিল্পরূপ ও ভাষার সৌন্দর্য:

  • মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাটি একটানা সুরে গেয়ে যাওয়া যায়।
  • “আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই”— এই লাইন কবিতার ম্যান্ট্রা হয়ে ওঠে।
  • অনুপ্রাস, চিত্রকল্প, রূপক— সব কিছুই কবিতাকে এক শ্রুতিমধুর সংগীত করে তুলেছে।

প্রাসঙ্গিকতা আজকের সমাজে:

আজকের দিনে মানুষ দ্রুত প্রতিদান চায়। প্রেম, সংসার, এমনকি বন্ধুত্বেও একধরনের হিসেব চলছে। এই কবিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কিছু সম্পর্ক শুধু দান— প্রতিদান নয়।

উপসংহার:

জসীমউদ্দীন-এর “প্রতিদান” একদিকে আমাদের হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়, অন্যদিকে মনকে প্রশ্ন করে— ভালোবাসা কি সত্যিই নিঃস্বার্থ হয়? এই কবিতায় হাসির আড়ালে রয়েছে এক নিঃশব্দ কান্না, যেখানে “ঘর ভাঙা”, “ঘুম হারানো”, “বুক কবর হওয়া”— সবই সেই মানুষটির জন্য, যিনি কবিকে পর করে দিয়েছেন।

অতএব, এই কবিতা কেবল প্রেমের নয়— এটি মানবিক মূল্যবোধ, আত্মত্যাগ, এবং অবহেলার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হওয়া সাহসী নীরবতার কাব্য।

 

 

প্রতিদান কবিতার ব্যাখ্যা

 

 

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Specify Twitch Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitch Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *