পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : দল ব্যবস্থা বর্তমান প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থার একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। কার্যত বর্তমান যুগে রাজনৈতিক দলের সাহায্যেই শাসনকার্য পরিচালিত হয়। এই দলীয় রাজনীতির উদ্ভব অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক কালের ঘটনা। জন ব্লন্ডেল-এর মতানুসারে দল-ব্যবস্থার আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই থেকে গেছে। প্রাচীনকালে গ্রিস ও রোমে বিভিন্ন বংশ ও গোষ্ঠী রাজনৈতিক দলের ভূমিকা গ্রহণ করত।
মধ্যযুগে সেই কর্তৃত্ব অভিজাত সম্প্রদায়, পুরোহিত সম্প্রদায়, বণিক শ্রেণির মত সমসাময়িক প্রভাবশালী সম্প্রদায়ের হাতে চলে যায়। প্রাচীনকালে গ্রিক নগর রাষ্ট্রে বা রোমের নগর জীবনে অথবা মধ্যযুগে রাজনৈতিক দলের উপযোগিতা অনুভূত হয়নি। প্রকৃত প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ও বিকাশের বিষয়টি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকাশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।
পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১: শিক্ষক ছাত্রদের পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে একটি কৃত্রিম নির্বাচন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। ছাত্ররা এই নির্বাচনে জালালকে শ্রেণির নেতা হিসেবে নির্বাচিত করে। শিক্ষক মহোদয় ছাত্রদের কাছে জানতে চাইলেন, কেন তারা জালালকে নির্বাচিত করেছে। ছাত্ররা জানালো, জালালের আকর্ষণীয় গুণাবলি ও দক্ষতা তাদেরকে আকৃষ্ট করেছে।
ক. রাজনৈতিক দল কী?
খ. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে জালাল-এর নির্বাচিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকে উল্লিখিত জালালের ভূমিকা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. রাজনৈতিক দল হলো বিশেষ নীতি বা আদর্শের সমর্থনে সংগঠিত সংঘবিশেষ, যা সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন ও পরিচালনার চেষ্টা করে।
খ. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হচ্ছে কোনো সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী যারা নিজেদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের আচরণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে না। এরা সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থকে যথাযথভাবে আদায় করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। শিক্ষক সমিতি, বণিকসংঘ, শ্রমিক ইউনিয়ন, ব্যাংক কর্মচারী ফেডারেশন, সুশীল সমাজ প্রভৃতি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদাহরণ।
গ. উদ্দীপকের জালালের নির্বাচিত হওয়ার কারণ হলে তার মধ্যে একজন নেতার প্রয়োজনীয় গুণাবলি বিদ্যমান রয়েছে।
যে ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো জনসমষ্টির আচার-ব্যবহার ও কার্যাবলিকে প্রভাবিত করতে পারে তাকে নেতা বলা হয়। নেতার গুণাবলি বা যোগ্যতাকে বলা হয় নেতৃত্ব। নেতৃত্ব হলো কোনো দল বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে জনগণের আচরণ ও কাজকে প্রভাবিত করার কৌশল। একজন ভালো নেতার ভালো আচার-আচরণ, সুন্দর ব্যবহার, কর্মদক্ষতা, জ্ঞান, দূরদৃষ্টি সহনশীলতা, গণমুখিতা প্রভৃতি গুণ জনগণকে আকৃষ্ট করে। যে নেতার মধ্যে এসব গুণ থাকে জনগণ তাকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে। এ বিষয়টিই আমরা উদ্দীপকের জালালের ক্ষেত্রে লক্ষ করেছি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, শ্রেণিশিক্ষক ছাত্রদের নির্বাচন সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য শ্রেণিকক্ষে একটি প্রতীকী নির্বাচনের আয়োজন করেন। ঐ নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা জালাল নামে তাদের এক সহপাঠীকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে। তখন শ্রেণিশিক্ষক তাদের কাছে জালালকে নির্বাচিত করার কারণ জানতে চান। উত্তরে শিক্ষার্থীরা বলে, জালালের আকর্ষণীয় গুণাবলি এবং দক্ষতার কারণে তারা তাকে নির্বাচিত করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও এ বিষয়টি লক্ষ করা যায়। জনগণ দক্ষ, যোগ্য এবং সৎ মানুষকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করতে চায়। সুতরাং বলা যায়, জালালের নির্বাচিত হওয়ার কারণ হলো তার মধ্যে একজন যোগ্য নেতার প্রয়োজনীয় গুণাবলি রয়েছে। এ বিষয়টিই সহপাঠীদের তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জালালের ভূমিকা অর্থাৎ যোগ্য নেতৃত্ব সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নেতৃত্ব হলো সেসব গুণাবলি যা অপরকে প্রভাবিত ও পরিচালিত করে, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অভীষ্ট স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করে। যোগ্য নেতা একটি জাতির অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক। যেকোনো সমাজ ও রাজনৈতিকব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম। নেতার উত্তম গুণাবলিই একটি জাতিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আর সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দক্ষ নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। কারণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী করা, সামাজিক ঐক্য রক্ষা, সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি, নাগরিক সুখ ও সমৃদ্ধি বাড়ানো। কেবল যোগ্য নেতৃত্বেই এসব দিকে খেয়াল রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। উত্তম নেতৃত্ব
সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য শাসনব্যবস্থার সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব সুশাসন নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়। নাগরিকের অধিকার, স্বাধীনতা, নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে উত্তম নেতৃত্ব সজাগ দৃষ্টি রাখে। ফলে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
নেতার উত্তম গুণাবলিই একটি জাতিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। উদ্দীপকের জালাল তার আকর্ষণীয় গুণাবলি এবং কাজের দক্ষতার মাধ্যমে ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস অর্জন করেছে। অর্থাৎ, জালাল একজন আদর্শ নেতা। আশা করা যায়, সে তার সহপাঠীদের দেশপ্রেম, দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হবে। তার মতো নেতৃত্বের গুণের অধিকারীরাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারবে।
পরিশেষে বলা যায়, উত্তম ও দক্ষ নেতারা দেশ ও জাতির কাণ্ডারি। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, সমাজ এগিয়ে যায়। তাই বলা যায়, জালালের মতো নেতৃত্ব সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২: সাইফুল ইসলাম তাঁর অসাধারণ গুণাবলির জন্য জনসাধারণের কাছে বিশেষ সম্মানের আসনে সমাসীন। তিনি সহজেই জনগণকে প্রভাবিত করতে পারেন। বিশেষত চারিত্রিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও বাগ্মিতার জন্য জনগণ তাঁর প্রতি মুগ্ধ।
ক. উপদল কী?
খ. জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে পার্থক্য লিখ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সাইফুল ইসলামের আচরণে কী ধরনের নেতৃত্বের প্রকাশ লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত নেতৃত্ব জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে- তুমি কি একমত? যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩: আহনাফ এবং তাওসিফ একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। তারা দু’জন দুটি আলাদা সংগঠনের সাথে যুক্ত। আহনাফের সংগঠনটি সবসময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করে। অপরদিকে, তাওসিক্ষের সংগঠনটি নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে এবং এই সংগঠনটি সরকারি সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুকূলে রাখার চেষ্টা করে।
ক. নেতৃত্ব কী?
খ. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আহনাফের সংগঠনটি কোন ধরনের সংগঠন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংগঠন দুটির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪: স্বেচ্ছাচারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আনিস গ্রামের যুবকদের একত্রিত করে একটি সংগঠন তৈরি করে। ক্রমেই সংগঠনটির কর্মকা- ইউনিয়ন জুড়ে বিস্তৃত হয় এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। সবাই আনিসের কথা ও কর্মে বিশ্বাস স্থাপন করে। তার নৈতিকতা ও দেশপ্রেম সবাইকে মুগ্ধ করে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে তার সংগঠনটি অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
ক. পৌরনীতি ও সুশাসনের সংজ্ঞা দাও।
খ. আইন প্রণয়নে আমলারা কীভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আনিসের সংগঠনটির সাথে তোমার পঠিত বইয়ের কোন সংগঠনটির সাদৃশ্য আছে? ব্যখ্যা করো।ঘ. আনিসের নেতৃত্ব সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত? যুক্তি দেখাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫: জনাব আজিজ একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার ইউনিয়নের সব নাগরিক যেকোনো সমস্যায় তার কাছে যায়। বিবাদ মীমাংসার জন্য সবাই ইউনিয়ন আদালতে অভিযোগ দায়ের করে। জনাব আজিজ নিরপেক্ষভাবে সব বিবাদের মীমাংসা করে দেন। তিনি এলাকার উন্নয়নে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সবাই তার ওপর আস্থাশীল।
ক. মানবাধিকার কাকে বলে?
খ. “আইনের চোখে সবাই সমান”- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব আজিজের মধ্যে কোন ধরনের নেতৃত্বের গুণাবলি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত ইউনিয়নের মতো রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারের কী কী করণীয়? মতামত দাও।