পল্লিবর্ষা (কবিতা) – জসীমউদদীন

Spread the love

পল্লিবর্ষা (কবিতা) – জসীমউদদীন

পল্লীবর্ষা
___জসীমউদদীন

আজিকার রোদ ঘুমায়ে পড়িছে-
ঘোলাটে মেঘের আড়ে,
কেয়া বন পথে স্বপ্ন বুনিছে-
ছল ছল জলধারে।
তাহার ঝিয়ারী কদম্ব শাখে-
নিঝ্ঝুম নিরালায়,
ছোট ছোট রেনু খুলিয়া দিয়াছে-
অস্ফুট কলিকায়।

বাদলের জলে নাহিয়া সে মেয়ে,
হেসে কুটি কুটি হয়।
সে হাসি তাহার অধর নিঙ্গাঢ়ি,
লুটায়িছে বনময়।
কাননের পথে লহর খেলিছে,
অবিরাম জলধারা।
তারই স্রোতে আজি শুকনো পাতারা,
ছুটিয়াছে ঘরছাড়া।

হিজলের বনে, ফুলের আখরে,
লিখিয়া রঙিন চিঠি,
নিরালা বাদলে ভাসাইয়া দিয়াছে,
না জানি কোন দিঠি।
চিঠির উপরে চিঠি ভেসে যায়,
জনহীন বন বাঁটে,
না জানি তাহারা ভিড়িবে যাইয়া-
কার কেয়া বন ঘাটে।
কোন সে ধীরল বুনো ঝাউশাখে,
বুনিয়া ঘোলাবি শাড়ি-
হয়তো আজিও চেয়ে আছে পথে,
কানন কুমার তারই।

এদিকে দিগন্তে যতদূর চাহি,
পাংশু মেঘের জাল-
পায়ে জড়াইয়া পথে দাড়ায়েছে,
আজিকার মহাকাল।

গাঁয়ের চাষিরা মিলিয়াছে আজি-
মোড়লের দলিজায়,
গল্পে গানে কি জাগাইতে চাহে-
আজিকার দিনটায়!
কেউ বসে বসে বাখাড়ি চাছিছে,
কেউ পাকাইছে রশি।
কেউবা নতুন দুয়ারির গায়ে,
চাকা বাঁধে কসি কসি।
কেউ তুলিতেছে বাঁশের লাঠিতে,
সুন্দর করে ফুল।
কেউবা গড়িছে সারিন্দা এক-
কেটে নির্ভুল।

মাঝখানে বসে গাঁয়ের বৃদ্ধ,
করুন ভাটির সুরে-
আমির সাধুর কাহিনি কহিছে,
সারাটি দলিজা জুড়ে।
লাঠির উপরে, ফুলের উপরে,
আকা হইতেছে ফুল-
কঠিন কাঠ সে সারিন্দা হয়ে,
বাজিতেছে নির্ভুল।
তারই সাথে সাথে গল্প চলছে-
আমির সাধুর নাও,
বহুদেশ ঘুরে আজিকে আবার-
ফিরিয়াছে নিজ গাঁও।
ডাব্বা হুক্কা ও চলিয়াছে ছুটি-
এর হাতে ওর হাতে,
নানা রকম রশি বুনানো-
হইতেছে তার সাথে।

বাহিরে নাচিছে ঝর ঝর জল,
গুড়ু গুড়ু মেঘ ডাকে।
এসবের মাঝে রুপকথা যেন,
আর রুপকথা আঁকে।
যেন ও বৃদ্ধ গাঁয়ের চাষিরা-
আর ওই রুপকথা,
বাদলের সাথে মিশিয়া গড়িছে-
আরেক কল্পলতা।

বউদের আজ কোন কাজ নাই,
বেড়ায় বাধিয়া রশি,
সমুদ্র কলি শিকা বানাইয়া-
নীরবে দেখিছে বসি।
কেউবা রঙিন কাঁথায় মেলিয়া,
বুকের স্বপ্ন খানি-
তারে ভাষা দেয় দীঘল সুতার-
মায়াবি আখর টানি।

আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন,
ছল ছল জলধারে-
বেনু বনে বায়ু নাড়ে এলোকেশে,
মন যেন চায় কারে……

…..Asira

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *