পরিকুণ্ড জলপ্রপাত, মৌলভীবাজার — অজানা অথচ বিস্ময়কর এক প্রকৃতির ধারাপাত

🌿 ভূমিকা
বাংলাদেশের সৌন্দর্যমন্ডিত প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলির মধ্যে জলপ্রপাতগুলো সর্বদাই এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। পাহাড়, ঝরনা ও বনভূমির অপূর্ব সংমিশ্রণ আমাদের মনকে শান্ত করে, হৃদয়কে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে। তেমনই এক বিস্ময়কর ও কম পরিচিত প্রাকৃতিক নিদর্শন হলো পরিকুণ্ড জলপ্রপাত। এটি মৌলভীবাজার জেলার গভীর প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত একটি অপরূপ ঝরনা, যা স্থানীয় পাহাড়ি প্রান্তর থেকে প্রায় ১৫০ ফুট নিচে গড়িয়ে পড়ে। এর নিকটেই অবস্থিত বিখ্যাত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, ফলে অনেকে এটি মাধবকুণ্ড ঘুরতে গিয়ে আবিষ্কার করেন, আবার কেউ একে মাধবকুণ্ডের গোপন সৌন্দর্য বলেন।
শান্ত পরিবেশ, পাখির ডাক, পাহাড়ি বাতাস আর উন্মুক্ত সবুজে মোড়ানো পরিকুণ্ড যেন প্রকৃতির গোপন কবিতা। যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন, অ্যাডভেঞ্চার খুঁজে ফেরেন কিংবা একদিনের স্বল্প ভ্রমণে যেতে চান—তাদের জন্য এটি হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।
🏞️ ইতিহাস ও পরিচিতি
পরিকুণ্ড জলপ্রপাত এক সময় স্থানীয়দের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। পর্যটকদের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক। এর অবস্থান মাধবকুণ্ডের কিছুটা উত্তর-পূর্ব দিকে। দুর্গম পথ ও প্রচলিত পর্যটন মানচিত্রে না থাকায় দীর্ঘদিন এটি অনালোচিত থেকেছে। বর্তমানে স্থানীয় পর্যটক ও ইউটিউবারদের কল্যাণে এটি বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
📛 নামকরণের তাৎপর্য
“পরিকুণ্ড” নামটি এসেছে স্থানীয় ভূপ্রকৃতি ও জনশ্রুতি থেকে। “কুণ্ড” শব্দটি বাংলায় সাধারণত গভীর জলাশয় বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, আর “পরি” হয়তো এসেছে এর স্বপ্নময়, অলৌকিক সৌন্দর্যকে বোঝাতে। এটি একধরনের কল্পনাপ্রসূত নামও হতে পারে।
📌 কোথায়?
পরিকুণ্ড জলপ্রপাত মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ধলই চা-বাগান এলাকা ঘেঁষে, মাধবকুণ্ড ইকো পার্কের কাছাকাছি অবস্থিত।
❓ কেন যাবেন?
- তুলনামূলক কম ভিড়
- দুর্গম ট্রেইল, অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ
- প্রাকৃতিক ঝরনার বিশুদ্ধ সৌন্দর্য
- ফটোপ্রেমীদের জন্য দারুণ লোকেশন
- নিকটবর্তী মাধবকুণ্ড ঘুরে একইদিনে দর্শন সম্ভব
📅 কখন যাবেন?
বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর) পরিকুণ্ড ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময়ে ঝরনার পানি প্রবল থাকে ও চারপাশ সবুজে ঢাকা থাকে।
🚗 কীভাবে যাবেন? (রুট গাইড)
- ঢাকা → মৌলভীবাজার (বাস / ট্রেন / প্রাইভেট গাড়ি)
- মৌলভীবাজার → বড়লেখা উপজেলা
- বড়লেখা → মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক
- মাধবকুণ্ড → ধলই চা-বাগান হয়ে পায়ে হেঁটে বা মোটরবাইকে পরিকুণ্ড জলপ্রপাত (২০–৩০ মিনিট ট্রেইল)
👀 কী দেখবেন?
- পরিকুণ্ড জলপ্রপাতের মূল ধারা
- পাহাড়ের গায়ে গড়িয়ে পড়া স্বচ্ছ পানি
- ঘন বনে ঘেরা চা-বাগানের সৌন্দর্য
- স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও পাহাড়ি পাখির কলরব
💡 জনপ্রিয় হওয়ার কারণ
- কম পরিচিত হওয়ায় নিরিবিলি পরিবেশ
- অ্যাডভেঞ্চার ট্রেইল
- মাধবকুণ্ডের কাছাকাছি হওয়ায় ডুয়াল গন্তব্য হিসেবে উপযুক্ত
💰 খরচ (আনুমানিক)
- ঢাকা → মৌলভীবাজার বাসভাড়া: ৫৫০–৭৫০ টাকা
- মৌলভীবাজার → মাধবকুণ্ড সিএনজি/বাস: ১০০–২০০ টাকা
- মাধবকুণ্ড → পরিকুণ্ড মোটরবাইক/পায়ে হেঁটে: ১০০–১৫০ টাকা
- খাবার ও অন্যান্য: ৩০০–৫০০ টাকা
মোট: ১২০০–১৫০০ টাকা (দিনভিত্তিক)
🚌 পরিবহন
- বাস: সায়দাবাদ/গাবতলি থেকে মৌলভীবাজার/বড়লেখা রুটে সরাসরি বাস
- ট্রেন: পারাবত/জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস → কুলাউড়া → বড়লেখা
- লোকাল সিএনজি/জিপ/মোটরসাইকেল সুবিধা সহজলভ্য
🍽️ খাওয়ার ব্যবস্থা
- বড়লেখা ও মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক গেটের কাছে রয়েছে খাবার হোটেল
- চাইলে স্থানীয় বাজার থেকে শুকনো খাবার সঙ্গে নেওয়া ভালো
☎️ যোগাযোগ
- বড়লেখা পর্যটন তথ্য কেন্দ্র
- স্থানীয় গাইড পাওয়া যায় মাধবকুণ্ড গেট এলাকায়
🏨 আবাসন ব্যবস্থা
- মৌলভীবাজার ও বড়লেখা শহরে মধ্যম মানের হোটেল
- পরিবারসহ থাকলে মৌলভীবাজার শহর উত্তম
🌟 দৃষ্টি আকর্ষণ
- অপরিচিত কিন্তু সৌন্দর্যে অনন্য
- দুর্গম ট্রেইলে হাঁটার অভিজ্ঞতা
- স্থানীয় চা-বাগান, ছোট ছোট ঝরনা, জলধারা
⚠️ সতর্কতা
- ট্রেইল পিচ্ছিল, তাই ভালো জুতা পরুন
- ঝরনার নিচে না নামাই উত্তম বর্ষায়
- গাইড ছাড়া দুর্গম ট্রেইলে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ
🧭 আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
- চা-বাগান এলাকা (ধলই, কুরমা)
- হাকালুকি হাওর (দূরবর্তী)
💡 টিপস
- সকালে রওনা দিন যাতে সন্ধ্যার আগে ফিরতে পারেন
- হালকা ব্যাকপ্যাক নিন: পানির বোতল, স্যালাইন, টর্চ
- ক্যামেরা নিন, না তুললে আফসোস করবেন!
- আগে থেকেই আবহাওয়া জেনে নিন
https://www.munshiacademy.com/পরিকুণ্ড-জলপ্রপাত-মৌলভী/