তাজহাট জমিদার বাড়ি, রংপুর

তাজহাট জমিদার বাড়ি


ভূমিকা

বাংলার প্রাচীন স্থাপত্য, ঐশ্বর্য আর জমিদার যুগের ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষী হলো রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি। শতবর্ষ প্রাচীন এই প্রাসাদ শুধু একটি বাড়ি নয়, এটি রংপুর অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ। লাল ইট, সাদা পাথর ও দৃষ্টিনন্দন খিলানবেষ্টিত এই রাজপ্রাসাদ যেন অতীতের গৌরবময় সময়ের গল্প বলে যায় নিঃশব্দে।


কোথায়

তাজহাট জমিদার বাড়ি অবস্থিত রংপুর শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, তাজহাট এলাকায়। এটি সহজেই শহরের কেন্দ্র থেকে দেখা যায়।


কেন যাবেন

যারা ইতিহাস, স্থাপত্য এবং রাজকীয় স্থাপনা ভালোবাসেন, তাদের জন্য তাজহাট জমিদার বাড়ি এক অনন্য গন্তব্য। এর সাদা মার্বেল সিঁড়ি, বিশাল প্রাসাদ, রাজকীয় আসবাবপত্র ও জাদুঘর ঘুরে দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন বাংলার জমিদার সমাজ কতটা জাঁকজমকপূর্ণ ছিল।


কখন যাবেন

শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। তখন আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে এবং ছবি তোলার জন্য আলোর পরিবেশও চমৎকার। গরমকালে দুপুর এড়িয়ে বিকেল বা সকালবেলা গেলে ভালো।


কীভাবে যাবেন / রুট (Step by Step)

১️⃣ ঢাকা থেকে রংপুর:

  • বাসে: গাবতলী, কল্যাণপুর বা মহাখালী থেকে রংপুরগামী বাস (হানিফ, শ্যামলী, এসআর ট্রাভেলস ইত্যাদি)। সময় লাগবে প্রায় ৭–৮ ঘণ্টা।
  • ট্রেনে: কমলাপুর থেকে রংপুর এক্সপ্রেস বা দ্রুতোযান এক্সপ্রেসে সরাসরি রংপুর।

২️⃣ রংপুর শহর থেকে তাজহাট:

  • শহরের কেন্দ্র (জিলা স্কুল মোড় বা পাবলিক লাইব্রেরি এলাকা) থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি নিয়ে তাজহাট জমিদার বাড়ি যাওয়া যায়। ভাড়া ২০–৩০ টাকা।

কী দেখবেন

  • জমিদার প্রাসাদের বিশাল ভবন ও রাজকীয় স্থাপত্য
  • পাথরের তৈরি সিঁড়ি ও খিলান
  • প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর (রংপুর মিউজিয়াম)
  • জমিদারদের ব্যবহৃত আসবাবপত্র ও শিল্পকর্ম
  • প্রাসাদের বারান্দা থেকে চারপাশের বাগান ও দৃশ্যাবলী
  • ঐতিহাসিক পুরনো দরজা ও খিলান

খরচ

  • প্রবেশমূল্য:
    • বাংলাদেশি প্রাপ্তবয়স্ক: ২০ টাকা
    • শিক্ষার্থী: ১০ টাকা
    • বিদেশি পর্যটক: ১০০ টাকা
  • জাদুঘর প্রবেশ ফি অন্তর্ভুক্ত
  • ক্যামেরা ব্যবহার ফি: ৫০ টাকা (যদি প্রযোজ্য হয়)

পরিবহন

রংপুর শহরের ভেতরে সহজলভ্য অটোরিকশা, সিএনজি ও ইজিবাইক—সব মাধ্যমেই যাওয়া যায়।
ঢাকা বা অন্যান্য জেলা থেকে সরাসরি রংপুর বাস বা ট্রেনে পৌঁছানো যায়।


খাওয়ার ব্যবস্থা

  • রংপুর শহরে নানা রেস্তোরাঁ ও হোটেল রয়েছে।
  • জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ: হোটেল রংপুর গার্ডেন, মাহি রেস্তোরাঁ, মিষ্টি মেলা, লালবাগ রেস্তোরাঁ
  • স্থানীয় খাবারের মধ্যে ভর্তা, দেশি মাছ, দই ও মিষ্টি অবশ্যই ট্রাই করা যায়।

যোগাযোগ

ঠিকানা: তাজহাট জমিদার বাড়ি, তাজহাট, রংপুর।
ফোন (পুরাতত্ত্ব অধিদপ্তর): +880-2-9556611
ওয়েবসাইট: www.archaeology.gov.bd


আবাসন ব্যবস্থা

রংপুর শহরে থাকা-খাওয়ার জন্য ভালো মানের হোটেল রয়েছে—

  • হোটেল রংপুর গার্ডেন
  • হোটেল নর্থভিউ
  • হোটেল নর্থ ওয়েস্ট ইন
  • পর্যটন মোটেল, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন

দৃষ্টি আকর্ষণীয় বিষয়

  • সাদা মার্বেল সিঁড়ি ও রাজপ্রাসাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য
  • মিউজিয়ামে সংরক্ষিত প্রাচীন দলিল, মুদ্রা ও শিল্পকর্ম
  • ইউরোপীয় ধাঁচে নির্মিত খিলান ও ছাদের কারুকাজ
  • রাজকীয় সভাকক্ষ ও গম্বুজ আকৃতির ছাদ

সতর্কতা

  • প্রাসাদের ভেতরে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে প্রবেশ করবেন না।
  • দেয়াল বা স্থাপনায় হাত দেওয়া বা ছবি আঁকা নিষিদ্ধ।
  • জাদুঘরের ভেতরে ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করা শ্রেয়।
  • পর্যাপ্ত আলোতে ছবি তুলুন এবং জায়গাটি পরিষ্কার রাখুন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • কারমাইকেল কলেজ
  • তাজহাট কেন্দ্রীয় মসজিদ
  • রংপুর চিড়িয়াখানা
  • রংপুর টাউন হল
  • শ্যামপুর পার্ক
  • তিস্তা নদীর তীর

টিপস

  • সকালে গেলে কম ভিড় থাকে এবং আলোকচিত্র তোলার সুযোগ বেশি।
  • জাদুঘরের ভেতরে সময় নিয়ে প্রতিটি প্রদর্শনী মনোযোগ দিয়ে দেখুন।
  • গাইড নিলে ইতিহাস আরও গভীরভাবে জানা যায়।
  • গরমে ছাতা বা ক্যাপ সঙ্গে রাখুন।
  • স্থানীয় দই ও মিষ্টি অবশ্যই চেখে দেখুন!



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *