টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর


ভূমিকা

প্রকৃতির অপরূপ স্নিগ্ধতা আর জল-জমিনের মায়াবী রূপ দেখতে চাইলে যেতে হবে টাঙ্গুয়ার হাওরে। এটি শুধু একটি হাওর নয়, এটি যেন এক বিশাল নীল জলরাশির রাজ্য—যেখানে জল, আকাশ আর পাহাড় মিলে সৃষ্টি করেছে এক অনন্য সৌন্দর্য। পাখির কলকাকলি, নৌকায় ভেসে চলা, আর দিগন্ত জোড়া জলের সমারোহ—সব মিলিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গীয় ভ্রমণস্থান।


কোথায়

টাঙ্গুয়ার হাওর অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যে। এটি সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে।


কেন যাবেন

যারা প্রকৃতি, জলজ জীবন, পাখি ও পাহাড় ভালোবাসেন—তাদের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওর হলো আদর্শ স্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট, যেখানে ২৪০টিরও বেশি প্রজাতির পাখি দেখা যায়। বর্ষায় হাওরটি রূপ নেয় বিশাল সমুদ্রে, আর শীতে শুকিয়ে যায়, তখন চরে চরে পাখির মেলা বসে।


কখন যাবেন

  • বর্ষা মৌসুম (জুন থেকে সেপ্টেম্বর): নৌকাভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। চারদিকে জলরাশি, পাহাড় আর ভাসমান গ্রামের সৌন্দর্য অসাধারণ।
  • শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি): পরিযায়ী পাখি দেখার সেরা সময়।
  • বসন্তে: জল কমে গেলেও তখনও রঙিন আকাশ ও চরের প্রান্তর ভ্রমণের জন্য মনোরম।

কীভাবে যাবেন / রুট (Step by Step)

১️⃣ ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ:

  • সায়দাবাদ, মহাখালী বা গাবতলী থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জগামী বাস (হানিফ, শ্যামলী, এনা ইত্যাদি)। সময় লাগবে ৭–৮ ঘণ্টা।
  • ভাড়া: সাধারণত ৭০০–১০০০ টাকা (নন-এসি/এসি)।

২️⃣ সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর:

  • সুনামগঞ্জ শহর থেকে সিএনজি বা মোটরসাইকেলে তাহিরপুর (প্রায় ২ ঘণ্টা)।
  • তাহিরপুর থেকে ভাড়া করা নৌকা বা ট্রলার নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ।

কী দেখবেন

  • বিশাল নীল জলের হাওর
  • মেঘালয়ের পাহাড় ও সীমান্তবর্তী সৌন্দর্য
  • টেকেরঘাট ও বারিক টিলা
  • যাদুকাটা নদী
  • শিমুল বাগান (টাঙ্গুয়ার হাওরের কাছেই)
  • পাখির মেলা (শীতে)
  • ভাসমান গ্রাম—যেখানে মানুষ পানির ওপর বসবাস করে

খরচ

  • বাস ভাড়া (ঢাকা–সুনামগঞ্জ): ৭০০–১০০০ টাকা
  • সিএনজি ভাড়া (সুনামগঞ্জ–তাহিরপুর): ২০০–২৫০ টাকা (জনপ্রতি)
  • নৌকা ভাড়া: দিনভিত্তিক ৩০০০–৫০০০ টাকা (আকার ও সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী)
  • খাওয়া-দাওয়া ও থাকা: জনপ্রতি ৮০০–১০০০ টাকা (দিনপ্রতি)

পরিবহন

নৌকা, ট্রলার, সিএনজি ও বাস—সব ধরনের পরিবহন সহজলভ্য। তবে হাওরের ভেতরে ঘুরতে হলে নৌকাই প্রধান মাধ্যম।


খাওয়ার ব্যবস্থা

নৌকাতেই রান্না করার ব্যবস্থা থাকে।

  • খাবারে সাধারণত থাকে দেশি ভাত, মাছ, মুরগি, ডাল, আলুভর্তা ও সবজি।
  • চাইলে স্থানীয় বাজার থেকে টাটকা মাছ ও হাঁস কিনে রান্না করা যায়।

যোগাযোগ

ঠিকানা: টাঙ্গুয়ার হাওর, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ।
পর্যটন তথ্য অফিস: বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, সুনামগঞ্জ।
ওয়েবসাইট: www.tourismboard.gov.bd


আবাসন ব্যবস্থা

  • তাহিরপুরে সরকারি ডাকবাংলো (আগে বুকিং প্রয়োজন)
  • স্থানীয় হোমস্টে বা ঘর ভাড়া
  • নৌকায় রাত কাটানোর সুযোগ—নৌকাতেই থাকা, খাওয়া ও বিশ্রাম ব্যবস্থা থাকে
  • সুনামগঞ্জ শহরের হোটেল যেমন “হোটেল সোনার বাংলা”, “হোটেল সানশাইন”, “হোটেল জুবিলী” ইত্যাদি

দৃষ্টি আকর্ষণীয় বিষয়

  • দিগন্তজোড়া জলের রাজ্য
  • পাহাড়ের পাদদেশে সীমান্তবর্তী সৌন্দর্য
  • সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য
  • জলজ উদ্ভিদ ও পাখির বিচিত্র সমাহার
  • শান্ত ও নীরব প্রাকৃতিক আবহ

সতর্কতা

  • বর্ষায় নৌকা ভ্রমণের সময় লাইফজ্যাকেট ব্যবহার করুন।
  • রাতে নৌকায় অবস্থান করলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
  • হাওরে ময়লা ফেলবেন না—প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।
  • সীমান্ত এলাকায় চলাফেরায় সতর্ক থাকুন এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলুন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • যাদুকাটা নদী
  • টেকেরঘাট
  • বারিক টিলা
  • শিমুল বাগান
  • লাউড়ের গড় দুর্গ
  • হাওরের ভাসমান গ্রাম
  • হাকালুকি হাওর (অল্প দূরে)

টিপস

  • ৬–১০ জনের গ্রুপে গেলে খরচ কমে যায়।
  • বর্ষাকালে ছাতা, রেইনকোট ও অতিরিক্ত জামাকাপড় রাখুন।
  • ক্যামেরা ও পাওয়ারব্যাংক সঙ্গে রাখুন।
  • নৌকায় ওঠার আগে নিরাপত্তা ও ভাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
  • স্থানীয় গাইড নিলে ভ্রমণ আরও উপভোগ্য হয়।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *