Spread the love

জহির রায়হান: জীবন ও সাহিত্যকর্ম

ভূমিকা:

বাংলা সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে এক উজ্জ্বল নাম জহির রায়হান। তিনি শুধু একজন সাহিত্যিকই নন, ছিলেন ভাষাসংগ্রামী, চলচ্চিত্রকার এবং সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত। তাঁর সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে জাতীয়তাবাদ, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও মানবতার বার্তা।

জীবন পরিচিতি:

জহির রায়হানের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট, ফেনী জেলার মাহবুবগঞ্জ গ্রামে। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মোহাম্মদ জহিরুল হক। দেশভাগের পরে তিনি কলকাতা থেকে পূর্ববাংলায় চলে আসেন। ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার নিখোঁজ হন। তাঁকে খুঁজতে গিয়ে জহির রায়হান নিজেও ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হন, যা জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি।

সাহিত্যকর্ম:

জহির রায়হানের সাহিত্যচর্চা শুরু হয় পঞ্চাশের দশকে। ছোটগল্প, উপন্যাস ও চলচ্চিত্রকাহিনি রচনার মাধ্যমে তিনি সমাজবাস্তবতা ও রাজনৈতিক সংগ্রামের ছবি তুলে ধরেছেন।

উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম:

আরেক ফাল্গুন (১৯৬০): ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা। বিদ্রোহী চেতনার বহিঃপ্রকাশ এই উপন্যাসে স্পষ্ট।
বরফ গলা নদী (১৯৬১): স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও সামাজিক পরিবর্তনের বার্তা।
হাজার বছর ধরে (১৯৬৪): বাংলার জীবন, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হয়েছে।
আর কখনো (১৯৬২): দাম্পত্য সম্পর্ক ও সামাজিক সংকটকে কেন্দ্র করে নির্মিত উপন্যাস।

চলচ্চিত্রে অবদান:

জহির রায়হান বাংলা চলচ্চিত্রে নবজাগরণ আনেন।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র:

জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০): রাজনৈতিক প্রতীক-নির্ভর চলচ্চিত্র, যা গণতন্ত্র ও স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি।
স্টপ জেনোসাইড (১৯৭১): পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজে বার্তা পৌঁছে দিতে নির্মিত তথ্যচিত্র।

উপসংহার:

জহির রায়হান ছিলেন সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে এক অগ্রণী বিপ্লবী কণ্ঠ। তাঁর অকালপ্রয়াণে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে তাঁর সৃষ্টিকর্ম আজও আমাদের পথ দেখায়, অনুপ্রাণিত করে সংগ্রামে।

📚 উৎস: