জন স্টেইনবেক : জীবন ও সাহিত্যকর্ম
(John Steinbeck: জীবন ও সাহিত্যকর্ম)

🔷 পরিচিতি
জন স্টেইনবেক (John Steinbeck) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান মার্কিন কথাসাহিত্যিক। তাঁর উপন্যাস, ছোটগল্প ও প্রবন্ধে সাধারণ মানুষের সংগ্রাম, কৃষি-শ্রমিকের দুঃখকষ্ট এবং আমেরিকান সমাজের বৈষম্য, অর্থনৈতিক সংকট ও মানবিক মূল্যবোধ গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি ১৯৬২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
🔷 জন্ম ও শৈশব
জন স্টেইনবেক জন্মগ্রহণ করেন ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯০২ সালে, ক্যালিফোর্নিয়ার স্যালিনাস শহরে।
তাঁর পিতা ছিলেন সরকারি কর্মচারী, এবং মা ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর, বিশেষ করে ইংরেজ সাহিত্য ও ইতিহাস।
🔷 শিক্ষাজীবন
স্টেইনবেক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯১৯ সালে, কিন্তু কখনো ডিগ্রি শেষ করেননি।
তিনি মাঝে মাঝে পড়াশোনার ফাঁকে খামারে ও নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন, যা তাঁর লেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।
🔷 সাহিত্যিক যাত্রার সূচনা
স্টেইনবেকের সাহিত্যিক যাত্রা শুরু হয় ১৯২৯ সালে প্রথম উপন্যাস “Cup of Gold” প্রকাশের মাধ্যমে। তবে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত “Of Mice and Men” ও ১৯৩৯ সালের “The Grapes of Wrath” উপন্যাসদ্বয়ের মাধ্যমে।
🔷 উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম
📘 ১. The Grapes of Wrath (1939)
এটি স্টেইনবেকের সর্বাধিক প্রশংসিত উপন্যাস।
মহামন্দা (Great Depression) এবং Dust Bowl-এর সময়ে এক দরিদ্র কৃষক পরিবার (Joad পরিবার)-এর ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে অভিবাসনের কাহিনি।
উপন্যাসটি সমাজতান্ত্রিক মনোভাব ও মানবিক মূল্যবোধে উজ্জ্বল।
→ ১৯৪০ সালে এটি পুলিৎজার পুরস্কার পায়।
📘 ২. Of Mice and Men (1937)
দুই দিনমজুর লেনি ও জর্জের বন্ধুত্ব এবং দুর্ভাগ্যজনক নিয়তির গল্প।
মানবিক মমতা ও নিঃসঙ্গতার প্রতীক হিসেবে এটি ক্লাসিক সাহিত্যের মর্যাদা পায়।
📘 ৩. East of Eden (1952)
স্টেইনবেকের অন্যতম আত্মজৈবনিক উপন্যাস।
পুরনো পাপ ও অনুশোচনা নিয়ে রচিত এই উপন্যাসে বাইবেলের কেইন ও অ্যাবেলের গল্পের ছায়া রয়েছে।
📘 ৪. Cannery Row (1945)
ক্যালিফোর্নিয়ার মৎসজীবী শ্রেণি ও তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের ওপর লেখা।
📘 ৫. অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনা:
- The Pearl (1947)
- Tortilla Flat (1935)
- The Winter of Our Discontent (1961)
- Travels with Charley (1962) – ভ্রমণভিত্তিক প্রবন্ধ
🔷 সাহিত্যধারা ও বৈশিষ্ট্য
স্টেইনবেকের লেখায় রয়েছে বাস্তবতা, সহানুভূতি, সামাজিক সচেতনতা ও মানুষের সংগ্রামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
তিনি সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, প্রান্তিক গোষ্ঠীকে তুলে ধরেছেন সাহসিকতার সঙ্গে।
তাঁর গদ্যশৈলী সহজ, বর্ণনামূলক ও সংলাপনির্ভর।
🔷 পুরস্কার ও সম্মাননা
- 🏅 নোবেল পুরস্কার (1962) – সাহিত্যে
- 🏅 পুলিৎজার পুরস্কার (1940) – The Grapes of Wrath
- 🏅 National Book Award – The Grapes of Wrath
🔷 রাজনীতি ও বিতর্ক
স্টেইনবেক প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন।
তাঁকে অনেক সময় মার্কসবাদী বা সমাজতন্ত্রী বলে সমালোচনা করা হয়েছে, যদিও তিনি নিজেকে স্বাধীনচেতা ভাবতেন।
🔷 মৃত্যু
স্টেইনবেক মৃত্যুবরণ করেন ২০ ডিসেম্বর ১৯৬৮ সালে, নিউ ইয়র্ক সিটিতে।
মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৬ বছর।
🔷 উত্তরাধিকার
জন স্টেইনবেক এমন একজন লেখক, যাঁর সাহিত্য জীবনের অন্তর্নিহিত লড়াই, মানবিক মর্যাদা ও আশার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। তাঁর লেখাগুলো মার্কিন সাহিত্যে শুধু শৈল্পিক নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও অনন্য দৃষ্টান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়, পাঠক্রম এবং সাহিত্যানুরাগীদের কাছে তিনি আজও চিরঞ্জীব।
✅ উপসংহার
জন স্টেইনবেক ছিলেন সেই লেখক, যিনি নিপীড়িতের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন।
তাঁর সাহিত্য আমাদের শেখায়—জীবন কঠিন, কিন্তু সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও ন্যায়বিচারের চর্চায় আমরা আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।