চার্লস ডিকেন্স : জীবন ও সাহিত্যকর্ম

Spread the love

 

চার্লস ডিকেন্স : জীবন ও সাহিত্যকর্ম

১. ভূমিকা

চার্লস জন হাফাম ডিকেন্স (৭ ফেব্রুয়ারি ১৮১২ – ৯ জুন ১৮৭০) ছিলেন ভিক্টোরিয়ান যুগের অন্যতম প্রভাবশালী ইংরেজ ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক ও সমাজ সমালোচক। তিনি ছিলেন এমন এক সাহিত্যিক যিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজকে বদলাতে চেয়েছিলেন এবং সফলও হয়েছিলেন। “Oliver Twist”, “David Copperfield”, “A Tale of Two Cities”, “Great Expectations” ইত্যাদি উপন্যাসে তিনি দারিদ্র্য, শিশুশ্রম, শ্রেণিবৈষম্য এবং ন্যায়-অন্যায়ের দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন।

২. শৈশব ও পারিবারিক জীবন

চার্লস ডিকেন্স জন্মগ্রহণ করেন পোর্টসমাউথ শহরে। তাঁর পিতা জন ডিকেন্স ছিলেন নৌবাহিনীর বেতন অফিসের কর্মচারী। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। পিতার ঋণজর্জরিত অবস্থার কারণে একসময় তাঁকে দেনাদারের কারাগারে যেতে হয়, আর সেই সময় মাত্র ১২ বছর বয়সে ডিকেন্স একটি কারখানায় কাজ করতে বাধ্য হন। এই অভিজ্ঞতা তাঁর সাহিত্যজীবনে গভীর ছাপ ফেলেছিল, যা পরবর্তীকালে তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে।

৩. সাংবাদিকতা ও সাহিত্যজগতে পদার্পণ

ডিকেন্স তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন কোর্ট রিপোর্টার ও সাংবাদিক হিসেবে। পরে ছদ্মনামে “Boz” নামে “Sketches by Boz” নামে রচনাগুচ্ছ প্রকাশ করেন। এরপর ১৮৩৬ সালে প্রকাশিত হয় “The Pickwick Papers”, যা তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। এই উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছিল।

৪. উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম

▸ Oliver Twist (১৮৩৭–৩৯)

এটি তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, যেখানে এক এতিম শিশুর কষ্ট ও লন্ডনের নিম্নবিত্ত সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

▸ A Christmas Carol (১৮৪৩)

Ebenezer Scrooge নামক এক লোভী ব্যবসায়ীর বিবর্তনের গল্প। এটি আজও বিশ্বজুড়ে একটি জনপ্রিয় ক্রিসমাস কাহিনি হিসেবে বিবেচিত।

▸ David Copperfield (১৮৪৯–৫০)

এই উপন্যাসে ডিকেন্স নিজের জীবনের বহু বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। এটি আধা-আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস হিসেবে পরিচিত।

▸ Bleak House (১৮৫২–৫৩)

আইনি জটিলতা ও সমাজের কুপ্রথার কঠোর সমালোচনা এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে।

▸ A Tale of Two Cities (১৮৫৯)

ফরাসি বিপ্লবের পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাসে লন্ডন ও প্যারিসের দুটি শহরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও নাটকীয় রাজনৈতিক টানাপড়েন চিত্রিত হয়েছে।

▸ Great Expectations (১৮৬০–৬১)

এটি পিপ নামক এক চরিত্রের শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত জীবনের নানা দ্বন্দ্ব ও শিক্ষা নিয়ে রচিত উপন্যাস।

৫. সাহিত্যরীতি ও বৈশিষ্ট্য

চার্লস ডিকেন্স তাঁর লেখায় গভীর মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করেছেন। তাঁর চরিত্রগুলো অত্যন্ত জীবন্ত ও বাস্তবসম্মত। শিশুদের দুর্দশা, সামাজিক বৈষম্য, নৈতিক দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি এবং আইন ব্যবস্থার ব্যর্থতা—এসব ছিল তাঁর লেখার মূল উপজীব্য। তিনি ধারাবাহিক উপন্যাস রচনার মাধ্যমে পাঠকের সঙ্গে গভীর সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।

৬. ব্যক্তিগত জীবন

১৮৩৬ সালে ক্যাথরিন হগার্থের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় এবং তাঁদের ১০টি সন্তান ছিল। তবে দাম্পত্য জীবনে তেমন সুখ তিনি পাননি। পরবর্তী জীবনে তিনি সাংবাদিকতা, ভ্রমণ, মঞ্চনাট্য ও পাবলিক বক্তৃতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। চার্লস ডিকেন্সের স্বাক্ষর নিম্নরূপ:

৭. মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

১৮৭০ সালের ৯ জুন স্ট্রোকজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকে লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের Poets’ Corner-এ সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর সাহিত্যকর্ম বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং আধুনিক সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

৮. সাহিত্যপ্রভাব ও উত্তরসূরি

ডিকেন্স কেবল একজন ঔপন্যাসিক ছিলেন না, তিনি একজন সমাজসংস্কারকও ছিলেন। তাঁর উপন্যাসগুলো শুধু বিনোদনই দেয়নি, সমাজের অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলেছে। তাঁর প্রভাব শুধু ইংরেজি সাহিত্যে নয়, বরং গোটা বিশ্বের সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটক ও সংস্কৃতিতে অনুভূত হয়।

৯. উপসংহার

চার্লস ডিকেন্স ছিলেন এমন একজন লেখক, যিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজে আলো ফেলেছিলেন। তাঁর লেখায় কল্পনা আর বাস্তবতার অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে। আজও তাঁর রচনাবলি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি অমর হয়ে আছেন।

https://www.munshiacademy.com/চার্লস-ডিকেন্স-জীবন-ও-সাহ/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *