🕉️ চর্যাপদ: পদ-১
কবি: লুইপা
📜 মূল পাঠ:
কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল চীএ পইঠো কাল॥ ধ্রু॥
দিঢ় করিঅ মহাসুহ পরিমাণ।
লুই ভণই গুরু পুচ্ছিঅ জাণ॥ ধ্রু॥
সঅল সমাহিঅ কাহি করিঅই।
সুখ দুখেতেঁ নিচিত মরিঅই॥ ধ্রু॥
এড়ি এউ ছান্দক বান্ধ করণক পাটের আস।
সুনুপাখ ভিতি লেহু রে পাস॥ ধ্রু॥
ভণই লুই আম্হে ঝানে দিঠা।
ধমণ চমণ বেণি পিণ্ডি বইঠা॥ ধ্রু॥
📚 সরল অনুবাদ:
শরীর নামক বৃক্ষে পাঁচটি ডাল,
চঞ্চল মন ঢোকে তাতে, ছায়া হয়ে কাল।
দৃঢ় কর মন, তবে সুখের হবে পরিমাপ,
কি উপায়ে তা সম্ভব, গুরু জানাক তার জবাব।
কেউ যদি সবসময় করে তপস্যা,
তবুও দুঃখ-সুখে মরে সে একরাশ অসন্তোষে।
ফেলে দাও বাহ্য আড়ম্বর, মোহ ও ঘরকন্না,
শূন্যতাকে কর গ্রহণ, বৃত্তি কর দীক্ষা।
লুই বলে—আমি দেখেছি নিজ নয়নে,
ধমনী ও চরণ বেণী করে ধ্যানে বসেছি এক মনে।
🔍 ব্যাখ্যা সংক্ষেপে:
এই পদে কবি লুইপা মানব শরীর ও তার অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিকতার গভীর দর্শন ব্যাখ্যা করেছেন। “পাঁচটি ডাল” বলতে ইন্দ্রিয় বোঝানো হয়েছে, যেখানে চঞ্চল মন প্রবেশ করে জীবনে কালো ছায়া ফেলে। কবি গুরু নির্দেশনা গ্রহণের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির পথ খুঁজে পেতে বলেন। তিনি আড়ম্বর, পারিপাট্য, সংসারত্যাগ করে শূন্যতা ও ধ্যানের মাঝে মুক্তি সন্ধানের কথা বলেন। চর্যার সহজিয়া দর্শনের এটি এক গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক নিদর্শন।